===

Attohonon | Prova | Tanvir | Nima Rahman | Momo | Rifat | Bangla Natok

 
-আব্বা আমার বিয়ে দিবেন কি না?
.
--কিহ্?
.
-বিবাহ, শাদি, ম্যারিজ, নিকাহ্…
.
--সকাল সকাল কি গাঞ্জায় ফুঁকেছিস?
.
-আব্বা আমি গাঞ্জা খাইনা।
.
--কিন্তু কথা শুনে তো তাই মনে হচ্ছে।
.
-অতো কথা বুঝিনা বিয়ে দিবেন কিনা বলেন।
.
--না দিবোনা।
.
-ক্যান দিবেন না?
.
--তোর রেজাল্ট যেন কি, এবার পাশ করছিস নাকি আবারো ফেল মারছিস?
.
-ফেল মারছি…
.
--পাশ করবি কবে?
.
-করবোনা…
.
--ক্যান?
.
-আমার ইচ্ছা…
.
--মানে?
.
-আমার ইচ্ছা আমি পাশ করবোনা, ফেল মারবো আবার পরিক্ষা দিবো। আবার ফেল মারবো, একসময় রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ শেষ হবে তখন আবার নতুন করে রেজিট্রেশন করে পরিক্ষা দিয়ে ফেল করবো এটাই আমার ইচ্ছা।
.
--ভালো রেজিস্ট্রেশনের টাকাটা নিজেই দিস।
.
-ওই আব্বা মাইন্ড করেন ক্যান সামনের বার সত্যি পাশ করুম আপনার কসম।
.
-কোথায় কোথায় যেন চাকরির ইন্টারভিউ দিলি চাকরির খবর কি?
.
-চাকরি হয় নাই…
.
--বাহ্ চাকরি নাই উনি বিয়ে করার জন্য পাগল হয়েছেন।
.
-আব্বা ইচ্ছা করলেই তো চাকরি করা যায় কিন্তু আমার এইম ইন লাইফ হলো বেকার থাকা। আমার টার্গেট ই হলো বেকার থাকা, চাকরি দিলেও করতাম না।
.
--স্যান্ডেলের বাড়ি খাইবা? সকাল সকাল মস্করা করো।
.
-সরি আব্বা তবে আমি বিবাহ করিতে চাই…
.
--সরি বাবা তোমার বিবাহ দিবোনা।
.
-ক্যান আব্বা?
.
--আমার ইচ্ছা, আমার টার্গেট হলো তোর বিবাহ দিমুনা তোরে আইবুড়া করে রাখুম।
.
-আব্বা আমার কথায় বুঝি মাইন্ড করছেন, বললাম তো মস্করা করেছি।
.
--আচ্ছা আগে চাকরি যোগাড় কর তারপর দেখা যাবে।
.
কি ভাই, কি ভাবছেন বিয়ে করার জন্য আলিফ পাগল হয়ে গেছে। মানছেনা মন কোলবালিশে পারছেনা গুরু আর এমন অবস্থা আমার? না ভাই তাহলে ভুল ভাবছেন। আসলে গার্লফ্রেন্ডের বাপে তার মেয়েকে বিবাহ দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। আর তার মেয়ে আমাকে দৌঁড়ের উপর রেখেছেন। পাঁচ মিনিট পরপর ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করেঃ
--আলিফ কি করো?
ফোন রিসিভ করে বললামঃ
-বাবু টয়লেটে আছি।
.
--হ্যাঁ সারাদিন বসে ওটাই করো। চাকরি তো তোমার বাথরুমে এসে দিয়ে যাবে।
.
রাত তিনটার সময় কল দিয়ে জিজ্ঞাসা করেঃ
--আলিফ কি করো?
.
-বাবু ঘুমাচ্ছি…
.
--হুম ঘুমাও চাকরি তো তোমার স্বপ্নে এসে দিয়ে যাবে।
.
-চুপ করবি, রাত তিনটায় তোর দাদা চাকরি নিয়া বইসা রইছে না?
.
--কি বললা?
.
-না বাবু বসে থাকতে থাকতে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আমিতো অফিসের গেটের সামনে টুলে বসে আছি অফিস খুললেই চাকরি নিয়ে বাসা ফিরবো।
.
--আমার লগে মস্করা করছ সালা ফাজিল, খাচ্চর, ডুগডুগি আলি…
.
যাই হোক চাকরি একটা খুব বেশি জরুরি। বাথরুমে গেলে বদনায় পানি থাকা যতোখানি জরুরি চাকরি ঠিক ততোখানি জরুরি।
যাই হোক সেজেগুজে বাসা থেকে বের হওয়ার আগে আব্বাহুজুরের কাছে গেলাম টাকা নিতে চাকরির ইন্টারভিউ আছে। টাকা নিয়ে আব্বার দিকে সাদা খাম এগিয়ে দিলাম, আব্বা বললেনঃ
--এটা কি?
.
-আমি কি জানি, চিঠি টিঠি হবে হয়তো কে যেন দরজার সামনে রেখে গেছে।
.
আব্বাহুজুরকে খামটা দিয়ে রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে আম্মাকে বললামঃ
-আম্মা সারাদিন রান্নাঘরে বসে কেকা ফেরদৌসির রেসিপি রাঁধলে হবে„ বলি নিজের স্বামির কীর্তিকলাপের দিকে একটু নজর রাখেন।
.
--কি আবোল তাবোল বলিস, তোর বাবার আবার কি হলো?
.
-পাশের বাসার সেলিনা আন্টি আব্বাকে লাভ লেটার আর ফটো পাঠিয়েছে।
.
--কি ফালতু কথা বলিস?
.
-জ্বী আমি আবার খাম খুলে চিঠিটা একটু পড়েছি। চিঠিতে লিখছে, তুমি আমার জ্বীন আমি তোমার পরী চলো মিলে দুজনে সাত আসমানে উড়ি।
আমি তোমার ময়ূর তুমি আবার বক, তোমায় দেখলে দিলটা করে ধুকপুক ধ্কধ্ক…
.
আম্মা পুরো কথা না শুনে বেলন হাতে আব্বার কাছে চলে গেলেন। আমি বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম। আসলে ফেসবুক থেকে পাশের বাসার আন্টির ফটো আমি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করেছি, আর চিঠিটা নিজে লিখেছি।
বাসা থেকে বের হতেই সেন্টুর সাথে দেখাঃ
--কিরে আলিফ কই যাস?
.
-চাকরির ইন্টারভিউ।
.
--ধূরো চাকরি তো হবেনা হুদাই সময় নষ্ট আমার সাথে চল মিটিং আছে বিরিয়ানির প্যাকেট সাথে দুশটাকা পাবি।
.
-কিসের মিটিং…
.
--ইলেকশন।
.
-কিসের ইলেকশন…
.
--অতো জেনে কি লাভ, টাকা পেলেই হলো।
.
-আপনি যান দেখি ইন্টারভিউ জলদি শেষ হলে যাবোনে…
.
ইন্টারভিউ রুমে যেই ব্যক্তিটি বসে আছেন তিনি প্রতিবারের মতো একজন টাকের মালিক। টাকের সাথে আমার সম্পর্কটা কেমন যেন দেখলেই থাবড়া মারতে ইচ্ছা করে। টাকওয়ালা ব্যক্তি আমার ফাইল টেবিলে রেখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেনঃ
.
--আচ্ছা আপনার সম্পর্কে কিছু বলুন…
.
-স্যার আমি বাসার বাজার ভালো করতে পারি, টাকা মারার অভ্যেস মোটেও নেই। বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া নিয়ে আসা করতে পারি। ছুটির দিন গাড়ি ধুতে পারি। এগুলো আমার শখ বলতে পারেন। চাকরি পেলে চাকরির পাশাপাশি ধরুন আপনার বাসার বাজার করা, বাচ্চাদের স্কুল পৌঁছানো নিয়ে আসা, আপনার গাড়ি ধোঁয়া করতে পারি।
.
--এতোদিন ঘুষ অফার করতে দেখেছি কিন্তু সার্ভিস অফার করতে প্রথম দেখলাম। কিন্তু আমি আনম্যারিড।
.
-স্যার আমি মালিশ ভালো করতে পারি।
.
--আপনি আসতে পারেন।
.
-স্যার প্লিজ, চাকরি না পেলে আব্বা আমার বিবাহ দিবেন না।
.
--আপনাকে আসতে বলেছি।
.
-স্যার দুমিনিট আপনার মাথা বানিয়ে দেই…
.
--মানে?
.
-মানে মালিশ করে দেই আমি সাথে করে খাঁটি সরিষার তেল এনেছি।
.
প্যান্টের পকেট থেকে সরিষার তেলের বোতলটা বের করে স্যারের দিকে এগিয়ে গেলাম। স্যার আমাকে তার দিকে এগিয়ে যেতে দেখে চেয়ার ছেড়ে উঠতে যাচ্ছিলেন কিন্তু তাকে উঠতে দিলাম না। জোর করে চেয়ারের মধ্যে ঠেসে ধরলাম। বোতল খুলে তার টাকে তেল ঢেলে মালিশ শুরু করলাম। বেচারা বাঁচার জন্য চিৎকার শুরু করছেন, তার চিৎকার শুনে দারোয়ান দৌঁড়ে এসেছে। বসের টাকে তবলা বাঁজানোর দৃশ্য দেখে দারোয়ান রীতিমতো ভিড়মি খেয়েছে। কি করা উচিত বুঝতে পারছেনা। আমার দিকে আসছিলো দিলাম ধমকঃ
.
-ব্যাটা কাছে আসলে কামড়ে দিবো।
.
পরিস্থিতি ঠিক না, লোকজন জড়ো হচ্ছে। দেরি করা যাবেনা নাহলে ধরে গনপিটুনি দিবে। পুলিশেও দিতে পারে। আচ্ছা টাকে জোর পূর্বক মালিশের জন্য কি শাস্তি হতে পারে?
আরেক পকেট থেকে দুটো ডিম বের করে স্যারের মাথায় থপাস শব্দে ভাঙ্গলাম। ডিমগুলো মনে হয় পঁচা ছিলো কেমন দুর্গন্ধ করছে। তারপর এক দৌঁড়ে বের হলাম, কেউ আটকানোর সাহস করলোনা। রিক্সাভাড়ার টাকায় তেল আর ডিম কিনেছিলাম তাই হেঁটে হেঁটে ফিরতে হচ্ছে। সেন্টু ভাইকে ফোন দিলামঃ
--হ্যালো…
.
-সেন্টু ভাই মিটিং কোন জায়গায়?
.
--আসবি?
.
-হ্যাঁ…
.
--না আসাই ভালো…
.
-কেন, আর এতো গ্যান্জাম কিসের। আছেন কোথায়?
.
--আমি টেবিলের নিচে লুকায় আছি। বিরিয়ানির প্যাকেটে কে যেন মরা ইন্দুর পাইছে। এখন মারামারি লাগছে। নেতাকে লাউ দিয়ে পিডাচ্ছে…
.
-লাউ দিয়ে পিডাচ্ছে কেন?
.
--নেতার মার্কা হলো লাউ। বিরাট বিরাট সাইজের লাউ কিনে আনছে মিটিং এ। এখন পাব্লিক ওই লাউ দিয়েই নেতার পেছনের দিকে পিডাচ্ছে। কয়েকটা লাউ পিডিয়ে ভেঙ্গে ফেলছে…
.
-তো আপনি লুকাচ্ছেন ক্যান, আপনার কিসের ভয়?
.
--নেতা সম্পর্কে আমার চাচা হবেন…
.
সেন্টু ভাই আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলেন এমন সময় চিৎকার শুনতে পেলাম, ফোনের ওপাশে সেন্টু ভাই চিল্লাচ্ছেনঃ
--পা ছাড়, ছাড় বলছি, ছেড়ে দে প্লিজ…
.
কাউকে টানা হিঁচড়ার মতো শব্দ শুনতে পেলাম। মনে হয় সেন্টু ভাইকে টেনে হিঁচড়ে বের করেছে। দশ সেকেন্ডের নিরবতার পর ফোনের ওপাশে সেন্টুর আর্তনাথ আর কোনকিছু দিয়ে পিডানোর শব্দ কানে আসতে লাগলো।
.
বাসায় ফেরা সম্ভব না কেননা বের হওয়ার সময় আব্বা আম্মার ঝগড়া লাগিয়ে এসেছি। তার রিয়েকশন হবে নিশ্চই। রাত আটটা পর্যন্ত ব্রিজের উপর পা দুলিয়ে বসে থাকলাম। হঠাৎ ফোনটা বাঁজতে শুরু করলোঃ
.
-হ্যালো রাত্রি বাবু…
.
--কোথায় তুই?
.
-কেন?
.
--আমার সাথে দেখা কর এক্ষুনি…
.
-তুই তুকারি করছো কেন?
.
--আসতে বলছি আয়।
.
রাত্রির বাসার গেইট দিয়ে ঢোকার সাহস আমার নেই, রাত্রির বাবা পিটিয়ে হাড় ছাতু বানিয়ে ফেলবে। বাসার পাশ দিয়ে বিরাট আমগাছ, আমাগাছের ডাল রাত্রির জানালা পর্যন্ত যায়। কোন মতে গাছে উঠে জানালার সামনে গিয়ে নক করলামঃ
--কে?
.
-রাত্রি বাবু আমি জানালা খোল…
.
জানালা খুলে রাত্রি টাশকি খেয়ে গেলো।
--তুমি এখানে কেন?
.
-তো গেইট দিয়ে যাবো নাকি তোমার বাবা পিটিয়ে……
.
কথাটা শেষ হওয়ার আগেই রাত্রির বাবার কন্ঠ শুনতে পেলামঃ
--গাছের উপড়ে কে রে?
.
নিচে তাকিয়ে দেখি রাত্রির বাবা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি আবারো বললেনঃ
--গাছের উপড়ে কে?
.
-কেউ না আব্বা… পাখি পাখি…
.
--পাখি না কাউয়া সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি, নিচে নাম।
.
-না নামবোনা, নামলে আপনি মারবেন।
.
--মারবোনা নাম তুই…
.
-আপনি মারবেন আমি জানি…
.
--নামবি তুই?
.
-আগে আল্লাহর কিরা কন মারবেন না…
.
রাত্রি বাবা কিছু না বলে গাছের নিচ থেকে চলে গেলেন। তাড়াতড়ি করে পালানোর জন্য গাছের অর্ধেক নেমে এসেছি এমন সময় দেখে রাত্রির আব্বা বিরাট বাঁশ নিয়ে আসছেন। উপায় না দেখে আবারো উপরের দিকে উঠতে শুরু করলাম। বেশিদূর উঠতে পারলাম না। কে যেন বাঁশ দিয়ে গুঁতো দিলো।
.
-উরিম্মা আব্বা আমি কিন্তু আপনার হবু মেয়ে জামাই, এভাবে টর্চার করা কি ঠিক হচ্ছে।
.
--তুই নাম একবার তারপর তোর জামাই হওয়ার ইচ্ছা পূরন করতেছি।
কথাটা বলে আবারো বাঁশ দিয়ে গুঁতো দিলেন।
-উরিম্মা… আব্বা আপনি আরেকবার যদি গুঁতো মারেন আমি কিন্তু থুতু দিবো… থু থু ওয়াক থু থু থু…… নিচে থুতু ফেলা শুরু করলাম…
.
--ওই থুতু দিবিনা খবরদার আমি কিন্তু ইট দিয়া ঢিল মারবো।
.
রাত্রিকে ডাক দিলামঃ
-রাত্রি তোমারে আজ পর্যন্ত যতো শোপিস, মগ গিফ্ট করছি দাও তো…
.
--কেন কি করবা?
.
-নিচে তোমার আব্বারে ঢিল মারমু…
.
--ছিহ্… উনি আমার বাবা হন। যাও কথা নাই তোমার সাথে বলেই দরজাটা জানালাটা বন্ধ করে দিলো…
.
আল্লাহ্ এবারের মতো আমারে বাঁচাও…
.
written by:- Ni Alif
========================= 0000000 ==============================
#যেদিন_তুমি_এসেছিলে
#পর্ব_১৮
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
________________
চমৎকার ভোরের দর্শন মেলে ভোর সকালে। মাঝরাতে বৃষ্টি হয়েছিল; যার নিদর্শন রয়ে গেছে ভোরেও। সোফায় শোয়ার দরুণ ঘুম তেমন একটা ভালো হয়নি অর্ষার। তবে সে ঘুমিয়েছে। শরীরে আর দু'চোখের পাতায় যখন ক্লান্তি থাকে, ঘুম তখন আর স্থান, কাল, পাত্র খোঁজে না। একটু ঘুমাতে পারলেই তখন জগৎ শান্তি।
রুমের মাঝে এখনো আবছা অন্ধকার। ঘুম ভাঙার পর কিছুক্ষণ থম মেরে স্থির হয়ে বসে থাকে অর্ষা। বারবার আল্লাহর কাছে দু'আ করছে যেন গতকালের সকল ঘটনা তার স্বপ্ন হয়। অথবা ভ্রম! সবটাই যে বাস্তব সেটা সে উপলব্ধি করতে পেরেছে মশার কামড় খেয়ে। ফজরের নামাজ পড়ার সময় এখনো আছে নাকি দেখা দরকার। দেয়াল ঘড়িটা যেই দিকে আছে সেদিকে এগিয়ে যায় সে। মুখটা কাছে নিয়ে সময় দেখার চেষ্টা করে। যাক, ভাগ্য ভালো। সময় আছে এখনো। সে চটজলদি ওয়াশরুমে চলে যায় অজু করার জন্য। অজু শেষ করে ঘরে এসে বিছানার দিকে তাকায়। আহনাফ এখনো ঘুমে বিভোর। একমনে ভাবল নামাজ পড়ার জন্য ডাকবে। আবার ভাবল, যদি রাগ করে? তাই সে সময় থাকতে নিজের নামাজটুকু আদায় করে নেয়।
খুব সন্তর্পণে বারান্দার দরজা খোলে। বৃষ্টির পানিতে বারান্দার ফ্লোর একদম টইটুম্বুর। গ্রিলে লেগে আছে এখনো বিন্দু বিন্দু বৃষ্টির ফোটা। অর্ষার যেটা সবচেয়ে বেশি ভালো লাগল তা হচ্ছে বারান্দায় থাকা অপরাজিতা ফুলের গাছ। নীল রঙের ফুলগুলো বৃষ্টিস্নাতে আরো মোহনীয় ও আকর্ষণীয় হয়ে রয়েছে। আহনাফ কালেভদ্রে বাংলাদেশে আসে। তবুও বারান্দায় কত গাছ-গাছালি। এগুলোর দেখাশোনা কে করে? আমেনা বেগম নয়তো রেণু আপা নিশ্চয়ই। সে এগিয়ে গিয়ে অপরাজিতা ফুলকে ছুঁয়ে দিলো। মনটা এখন একটু একটু ভালো লাগছে। সে আকাশপানে তাকায়। আগে তার মন খারাপ হলেই সে আকাশের দিকে তাকিয়ে কথা বলত। কী বলত জানা নেই। অনেক কথাই বলত। নিজের সুখ, দুঃখ সবকিছু সে আকাশপানে তাকিয়ে আল্লাহকে বলত। এতে বিশেষ উপকারিতা কী তা সে জানে না; কিন্তু মন ভালো হয় এর সাক্ষী সে নিজেই।
ঘরের দরজায় করাঘাতের শব্দ হচ্ছে। সঙ্গে অস্পষ্টভাবে কারও গলার স্বরও শোনা যাচ্ছে। সে দ্রুতপায়ে এগিয়ে যায় দরজা খুলতে। বাইরে আফরিন দাঁড়িয়ে আছে।
অর্ষাকে দেখেই মিষ্টি করে হেসে বলল,'শুভ সকাল।'
অর্ষা ম্লান হেসে বলল,'শুভ সকাল।'
'ফ্রেশ হয়েছ?'
'হ্যাঁ।'
আফরিন অর্ষাকে একবার আগাগোড়া পরখ করে বলল,'একেবারে গোসল করে শাড়ি পালটে ড্রয়িংরুমে আসো। চা খাবে? পাঠিয়ে দেবো?'
'চা খাব না।'
'আচ্ছা।' বলে আফরিন ঘরে একটু উঁকি দিলো। চাপাস্বরে অর্ষাকে বলল,'ভাইয়া এখনো ঘুমাচ্ছে?'
অর্ষা উপর-নিচ মাথা দোলাল।
'আচ্ছা তুমি রেডি হয়ে নাও।'
আফরিন চলে যাওয়ার পর দরজা চাপিয়ে কিছুক্ষণ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অলসতা তার কোনোকালেই ছিল না। সে কাজ করতে সদা তৎপর। তবে আজ অলসতা যেন প্রতিটি অঙ্গে অঙ্গে মিশে আছে। সে অলস ভঙ্গিতে রুমের এক কোণে পড়ে থাকা লাগেজের কাছে যায়। শাড়ি বের করে সোফার ওপর রাখে। পেটিকোট, ব্লাউজ আর ওড়না নিয়ে চলে যায় ওয়াশরুমে গোসল করতে। আহনাফ ঘুম থেকে ওঠার আগেই গোসল সেরে শাড়িটা পরে ফেলতে হবে।
কিন্তু বিধিবাম! অর্ষা গোসল সেরে এসে দেখে আহনাফ বিছানায় নেই। তার মানে ঘুম থেকে উঠে গেছে। ঘরেও তো নেই। সে দ্রুত শাড়ি পরার চেষ্টা করল। শাড়ি পরার সময় আয়নায় দেখতে পেল, আহনাফ বারান্দা থেকে রুমে আসছে। অর্ষা লজ্জায়, সংকোচে কাবু হলেও আহনাফ একবারও চোখ তুলে এদিকে তাকায়নি। সোজা ওয়াশরুমে চলে গেছে। অর্ষার বুকচিরে স্বস্তির নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসে।
শাড়ি পরা শেষ করে চুল আঁচড়াচ্ছিল ঐ সময়ে আবার দরজায় নক করে কেউ।
অর্ষা ভেতর থেকেই বলল,'দরজা খোলা আছে।'
সঙ্গে সঙ্গে হুড়মুড় করে ঘরে প্রবেশ করে গ্যাঞ্জাম পার্টি। লামিয়া, রেশমি, জুঁই দৌঁড়ে এসে অর্ষাকে জড়িয়ে ধরে। অর্ষা কেঁদেই ফেলে। গতকাল থেকে যেই একাকিত্ব ফিল তার হচ্ছিল; এতক্ষণে সেটা ঘুচল।
লামিয়া ওর চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলল,'কাঁদিস কেন বোকারানী?'
অর্ষা নিরবে শুধু কাঁদছেই। ওরা আবার ও'কে জড়িয়ে ধরে আদুরেকণ্ঠে বলল,'ওলে ময়নাপাখিটা! জান, বাবু কাঁদে না।'
আশিক বলল,'তোদের ন্যাকামিতে কি ওর কান্না থামবে? দাঁড়া আমি কবিতা শোনাচ্ছি। তার আগে তোরা সামনে থেকে সর।' বলে সে নিজেই দু'হাতে ওদেরকে ঠেলে সরিয়ে দেয়।
অর্ষার ডান হাতের আঙুল ধরে ও'কে ঘোরাতে ঘোরাতে বলে,'শুভলগ্নে করিস না কান্নাকাটি
তুই হচ্ছিস পাকা আম,
জিজু সেই আমের আঁটি।'
ওর উদ্ভট কবিতা শুনে কান্নার মাঝেই অর্ষা হেসে ফেলে। কী অদ্ভুত অনুভূতি তাই না? কাঁদতে কাঁদতে হাসার অনুভূতিটা আসলেই সুন্দর।
ওদের হাসি-ঠাট্টার মাঝেই আহনাফ ওয়াশরুম থেকে বের হয়। ওরা ওদের মতো এতটাই ব্যস্ত যে আহনাফের উপস্থিতিও টের পায়নি। সবাই ভালো আছে। খুশি আছে। শুধু ভালো নেই আহনাফ। মনে মনে সে এগুলোই ভাবছিল তখন দিদার আগে ও'কে দেখে।
একটু অপ্রস্তুতভাবে সকলকে দেখিয়ে বলল,'ঐতো দুলাভাই! ভালো আছেন ভাইয়া?'
আহনাফ ভদ্রতাসূচক মৃদু হেসে মাথা দোলাল। সেখানে আর না দাঁড়িয়ে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বাইরে বেরিয়ে যায়।
ওরা কিছুক্ষণ যাওয়ার পথে তাকিয়ে থেকে অর্ষাকে বলল,'ভাইয়া কি রেগে আছে? নাকি মন খারাপ।'
অর্ষার ঠোঁটের হাসিও এবার মিলিয়ে যায়। গতকাল রাতে আহনাফের রাগগুলোর কথা মনে পড়ে যায়। সে মাথা নত করে বলে,'দুটোই।'
রেশমি অর্ষাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলল,'থাক মন খারাপ করিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে দেখিস।'
অর্ষা এ কথার কোনো প্রত্যুত্তর না করে বলল,'আহিল কোথায় রে? ও'কে তো আর দেখলাম না। তোদের সাথে দেখা হয়েছে?'
জুঁই মুখটা মলিন করে বলল,'দেখা হয়নি। রেগে আছে মনে হয়।'
'ও কেন রাগ করবে? রাগ করার কথা আমার। ওর ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে হবে এটা জেনেও কেন ও কিছু বলল না? তোদের সাথে আহিলও তো জানে, আমি এখনই বিয়ে করতে চাইনি। নিজের একটা পরিচয় করতে চেয়েছিলাম। প্রতিষ্ঠিত হতে চেয়েছিলাম। তোদের না হয় কিছু করার ছিল না। কিন্তু ও তো পারত! তাহলে ও কেন আমাকে সাপোর্ট করল না?' কথাগুলো বলতে বলতে অর্ষা ফুঁপিয়ে ওঠে।
আশিক ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,'আহিলকে ভুল বুঝিস না বাবুই। ও কিছুই জানত না। বিয়ের পর সব জেনেছে। ও তো গেছিল ছোটো ফুপিকে এয়ারপোর্ট থেকে আনতে। আমরা আর ওর পরিবার কেন আগে কিছু জানাইনি এজন্য রেগে আছে।'
অর্ষার এবার নিজের ওপর রাগ, দুঃখ দুটোই লাগছে। না জেনে-বুঝে সে উলটো আহিলকে ভুল বুঝেছে।
____
ড্রয়িংরুমে আত্মীয়-স্বজনের মাঝে একপাশে দাঁড়িয়ে আছে আহনাফ। সবাই রিসিপশনের আয়োজন নিয়ে আলাপ করছিল।
আহনাফ রাগের সঙ্গে বলে,'কীসের রিসিপশন? আমি কোনো রিসিপশনে যাব না।'
আমেনা বেগম অস্থির হয়ে বললেন,'এমন করে না বাবু। কত মানুষজনকে ইনভাইট করা হয়েছে। খাওয়া-দাওয়া সবকিছুর আয়োজন করা হয়েছে। বোঝার চেষ্টা কর।'
'আমার কিছু বোঝা লাগবে না। প্রথম ভুলটা আমার ছিল। ভালোলাগাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মেরেছি। শত শত মানুষের সামনে অপমানিত হয়েছি। আর দ্বিতীয় ভুলটা করেছ তোমরা। তোমরা কেন কেয়ার বদলে অর্ষার সাথে আমার বিয়ের এনাউন্স করলে? এখন আমাদের ভুলের মাশুল এই নির্দোষ মেয়েটা কেন দেবে বলো? একটাবারও তোমরা আমার মতামত জানার কোনো প্রয়োজন মনে করলে না। তোমাদের সম্মান বাঁচাতে গিয়ে, ঐ মেয়েটার সম্মানের কথা ভাবতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে আমায় বিয়েটা করতে হলো। কিন্তু তোমরা জানো কতটা খারাপ লাগে আমার? অর্ষাকে দেখলেই আমার কেয়ার কথা মনে পড়ে। আমি সহ্য করতে পারি না। অপমানে, ঘৃণায় শরীর শিউড়ে ওঠে। অনেক হয়েছে। আমি আর কিছু করতে পারব না ব্যস!' কথাগুলো বলে হাতে থাকা তোয়ালেটি পেছনের দিকে ছুঁড়ে মারে আহনাফ। চলে যাওয়ার সময় দেখতে পায় তোয়ালে পড়েছে অর্ষার গায়ে।
অর্ষা তোয়ালেটা হাতে নিয়ে ছলছল দৃষ্টিতে আহনাফের দিকে তাকিয়ে আছে। শেষের অনেকগুলো কথাই সে শুনেছে। আহনাফ একবার ওর দিকে তাকিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। অর্ষা মাথা নত করে দাঁড়িয়ে থাকে। চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে তার।
নিস্তব্ধ, গুমোট পরিবেশের রেশ কাটাতে খালামনিরা আর ফুপি অর্ষার হাত ধরে এনে তাদের মাঝখানে বসায়। চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে,'আমেনা কী মেয়ে এনেছিস? বাচ্চা মেয়ে। শুধু কান্না করে।'
ছোটো ফুপি বলল,'বাচ্চারা একটু কাঁদেই বুঝছ। চকোলেট দিলেই দেখবে কান্না থেমে যাবে। আমি তো আসার সময় অনেকগুলো চকোলেট নিয়ে এসেছি। অর্ষা চকোলেট খাবে তো?'
অর্ষা নিরব রইল। এখনো তার দু'চোখ বেয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়ছে। আনন্দের নাকি কষ্টের বোঝা কষ্টকর। বাড়ির মানুষগুলো তার প্রত্যাশার চেয়েও ভালো। আর যাই হোক, অন্যদের মতো ধনী-গরীব বাছ-বিচার করেনি। তাহলে হয়তো তার কষ্টের সীমাটুকুও আর অবশিষ্ট থাকত না। সবার সাথে চুপচাপ বসে থাকে সে। তারা আহনাফ, আফরিন আর আহিলের ছোটোবেলার গল্প শোনাচ্ছে। কিছু গল্প শুনে অর্ষা আনমনেই হেসে ওঠে।
আমেনা বেগম আফরিনের উদ্দেশ্যে বললেন,'আহিল কি ঘুম থেকে উঠেছে?'
'হ্যাঁ। ওর বন্ধুরা তো ওর ঘরেই।'
'কারও-ই তো নাস্তা করা হয়নি। আমি খাবার ট্রে-তে দিচ্ছি। বন্ধুরা সব ঘরে বসেই আড্ডা দিতে দিতে খেয়ে নেবে।'
আফরিন এগিয়ে গিয়ে মাকে চাপাস্বরে বলল,'মা, আহিল কিন্তু আমাদের ওপর খুবই রেগে আছে। সবাইকে দেখাচ্ছে, ও খুব স্বাভাবিক আছে। আসলে কিন্তু তা নয়।'
আমেনা বেগমের চোখে-মুখে ত্রাসের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে। কনে বদল হওয়ার বিষয়টি এবং সেই কনে যে অর্ষা সেটা ছেলেকে না জানানোর অপরাধবোধ তার মনেও হচ্ছে।
সে চিন্তিত মনে ট্রে-তে নাস্তা সাজাচ্ছেন। শেষ হলে আফরিনকে বললেন,'অর্ষাকে সাথে নিয়ে যা। ও'কে দেখলে রাগ কমতে পারে।'
আফরিন তা-ই করল। অর্ষাকে নিয়ে গেল নাস্তা দিতে। নাস্তা আর অর্ষাকে রেখে সে বের হয়ে আসে। বন্ধুদের মাঝখানে না থাকাটাই উত্তম। আহিল একবার শুধু চোখ তুলে তাকিয়ে অর্ষাকে দেখেছে। এর পূর্বেও সে অর্ষাকে অনেকবার শাড়ি পরতে দেখেছে। কখনো তো অন্যরকম লাগেনি। আজ তাহলে এমন অন্যরকম লাগছে কেন? পূর্ণাঙ্গ মেয়ে বলে মনে হচ্ছে। তবে বাকি সবার মতো যে অর্ষার ওপর-ও তার চাপা অভিমান রয়েছে সেটি স্পষ্ট হয়েছে অর্ষার এখানে আগমনের পর।
অর্ষা সবাইকে নাস্তা এগিয়ে দিয়ে আহিলেরটাও এগিয়ে দিলো। আহিল পূর্ণদৃষ্টি কিন্তু দৃষ্টিতে চাপা ক্ষোভ রয়েছে এমনভাবে বলল,'বাড়ির বউয়ের দায়িত্ব পালন করছিস?'
অর্ষা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। বাকিরা নিরব দর্শক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে। এ কথার প্রত্যুত্তরে অর্ষার ঠিক কী বলা উচিত? সে জ্ঞানশূন্য দৃষ্টিতে শুধু ফ্যালফ্যাল করেই তাকিয়ে রইল।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ভয়ে ভয়ে লামিয়া বলল,'তুই ওর সাথে কেন এভাবে কথা বলছিস?'
আহিল রক্তবর্ণ চক্ষু দ্বারা লামিয়ার দিকে তাকালেও শান্তকণ্ঠে বলল,'সবচেয়ে বেশি দোষ কি ওর নয়? ও কি পারত না আমি আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে?'
'দোস্ত পরিস্থিতিটা আসলে কীরকম ছিল তোকে ঠিক বোঝানো সম্ভব নয়। নইলে তুই-ই ভাব মস্তিষ্ক কতটা ফাঁকা হলে তোর পরিবার, এমনকি আমরাও তোকে খবরটা জানাতে ভুলে গেছি?' বলল রেশমি।
আহিল শ্লেষেরসুরে বলল,'এক্সকিউজ চাইলে অনেকভাবেই দেখানো যায়। ব্যাপার না।'
আহিলের তীক্ষ্ণ রাগের সামনে অর্ষার কথা বন্ধ। মুখ ফুটে একটা কথাও সে বলতে পারছে না। নিদেনপক্ষে সে যে কতটা পরিস্থিতির শিকার ছিল এটা কীভাবেই বা তার প্রাণপ্রিয় বন্ধুকে বোঝাবে?
পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ভারী থেকেও ভারী হয়ে উঠছিল। কথার স্রোত কোথা থেকে কোথায় গিয়ে ঠেকবে বোঝা মুশকিল। তাই আশিক চেষ্টা করল পরিস্থিতিটা অন্তত স্বাভাবিক করার।
সে আহিলের ওয়ারড্রবের ওপর থেকে আহিলের গিটার এনে অর্ষার হাতে দিয়ে বলল,'মান-অভিমান পরে হবে ভাই। আগে একটা গান হোক। ওয়েদার কিন্তু জোশ!'
অর্ষার গান গাওয়ার মুড নেই। আর না আছে গলার জোর। আশিক কোন সেন্সে এখন তাকে গান গাইতে বলছে বুঝতে পারছে না সে। পরক্ষণে আশিকের ইশারায় বুঝে নিল, হয়তো তার গান শুনে আহিলের রাগ কমতে পারে। তাই অনিচ্ছা কিন্তু সর্বোচ্চ চেষ্টার সহিত গ্যাঞ্জাম পার্টির প্রিয় গানটি গাওয়া শুরু করে সে। সাথে গিটারের টুংটাং আওয়াজ। গিটার বাজানো সে আহিলের থেকেই শিখেছিল।
সে কাঁপাকাঁপা কণ্ঠে গান শুরু করে,
‘‘পুরো পৃথিবী একদিকে
আর আমি অন্যদিক,
সবাই বলে করছ ভুল আর
তোরা বলিস ঠিক।
তোরা ছিলি তোরা আছিস
জানি তোরাই থাকবি,
বন্ধু বোঝে আমাকে
বন্ধু আছে আর কি লাগে?’’
গান শেষেও আহিলকে দেখা যায় ফোনে বুদ হয়ে থাকতে। যেন সে কোনো গান-ই শুনতে পায়নি। সবাই ভেবেছিল আহিলের হয়তো এতে রাগ ভাঙবে। কিন্তু তাও রাগ ভাঙেনি। উলটো আহিল ঘর থেকেই চলে যায়।
দুপুরের মধ্যেও আহিলের আর কোনো খোঁজ-খবর পাওয়া গেল না। বন্ধুরা সব খেয়ে-দেয়ে দুপুরেই চলে যায়। আবারও বাড়িতে একা হয়ে যায় অর্ষা। জহির চৌধুরী আহনাফের মনের কথা ভেবে শেষমেশ রিসিপশনের অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে দেন।
অর্ষা আফরিনের রুমে শুয়ে ছিল। সেই সময়ে রেণু এসে বলে,'আপা কি ঘুমাইছেন?'
অর্ষা মাথা একটু উঁচু করে বলল,'না। কিছু বলবেন?'
'না মানে ঘরডা পরিষ্কার করতাম।'
অর্ষা বুঝল না পরিপাটি করা ঘর আর কি পরিষ্কার করার আছে? তাকে চুপ থাকতে দেখে রেণু বলল,'বেশিক্ষণ লাগব না। আপনে ততক্ষণ বড়ো ভাইজানের ঘরে থাহেন। আমি ডাক দিমুনে।'
অর্ষার যা বোঝার বুঝে নিল। দুই মেরুর দুজন মানুষকে শুধু শুধু কাছাকাছি আনার বৃথা চেষ্টা করছে বাড়ির মানুষজন। সে একমনে ভাবল ড্রয়িংরুমে যাবে। কিন্তু সেখানে মানুষ গিজগিজ করছে। তাই সে আহনাফের রুমেই গেল। রুম ফাঁকা। সম্ভবত আহনাফ বারান্দায় আছে।
অর্ষা পা টিপে টিপে বারান্দার দরজায় যায় দেখার জন্য, আহনাফ সেখানে আছে কিনা। তার ধারণাই ঠিক। প্যান্টের পকেটে দু'হাত রেখে সে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। দৃষ্টি বারান্দার বাইরে। অর্ষা ফিরে আসছিল আহনাফ তখন পিছু ডেকে বলল,'শোনো।'
অর্ষা চমকে যায়। পা টলছে না যেন।ভয়ে ভয়ে আহনাফের দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। আহনাফের দৃষ্টি তখনো বাইরে।
সে কিছুক্ষণ মৌন থেকে বলল,'তোমার নূপুরের আওয়াজ শুনে বুঝেছি তুমি এসেছ।'
অর্ষা নিশ্চুপ। শুধু মাথা নত করে দাঁড়িয়ে থেকে নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে।
প্রলম্বিত শ্বাস নিয়ে আহনাফ বলল,'ভাগ্য মানুষকে কোথায় এনে দাঁড় করায় তাই না? কখনো কি ভেবেছি, তোমার সাথে কথা বলতে হলে তোমার দিকে তাকাতে ইচ্ছে করবে না? হ্যাঁ, সত্যিই তোমার দিকে আমার তাকাতে ইচ্ছে হয় না এখন। কষ্ট হয়। এরচেয়েও বেশি হয় রাগ। আর এই রাগটুকু আমি কিছুতেই সংবরণ করতে পারি না। কখনো ভাবিনি ভালোলাগাও মানুষকে এভাবে পালটে দেয়। এতদিন তো ভালোবাসার নানাবিধ, নানারকম গল্প শুনতাম। আর আমার বেলায় হলো কী? শুধুমাত্র ভালোলাগাটুকুই আমায় কোথায় এনে দাঁড় করিয়েছে দেখো। তবে তোমার আর কেয়ার মাঝে একটুখানি যোগসূত্র রয়েছে। কেয়ার প্রতি ভালোলাগাটা শুরু হয়েছিল তোমার মাধ্যমেই। সেই বৃষ্টির রাতে যখন দেখলাম, তোমার আপন ভাই তোমায় ভাবির হাত থেকে বাঁচাতে না এলেও কেয়া এসেছিল। তারপর কীভাবে যে ভালোলাগাটা বেড়েছিল আমি জানিনা। প্রথম কোনো মেয়ের প্রতি আমার সফ্ট কর্ণার কাজ করেছে; আর সেই মেয়েটা তুমি। ছোটোবেলা থেকেই আমি মেয়েদের থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতাম। মা আর আফরিন ব্যতীত মেয়েদের সঙ্গ আমার খুবই কম। কেয়ার সাহায্যকারী মনোভাব, ভালো ব্যবহার এসব দেখেই ও'কে ভালো লেগেছিল। অন্যদিকে তোমার বোকা বোকা চাহনী, তোমার অসহায়ত্ব, তোমার ওপর অত্যাচার, শো-রুমে কাজ করার সময় ঘর্মাক্ত মুখশ্রী এসব ছিল তোমার প্রতি আমার সফ্ট কর্ণারের অন্যতম কারণ। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস; ভালোলাগা অপমান করে সফ্ট কর্ণারকে জীবনের সাথে যুক্ত করে দিয়ে গেল। যার প্রতি না চাইতে ও প্রতিটা মুহূর্তেও আমার অসহ্য ফিল হচ্ছে।'
একটু থেমে সে অর্ষার দিকে তাকিয়ে বলল,'যদি আমি তোমাকে একেবারে ছেড়ে দেই, তুমি আমায় ক্ষমা করবে তো?'
অর্ষা এতক্ষণ মাথা নত করেই আহনাফের কথাগুলো শুনছিল। শেষ কথাটি শুনে সেও আহনাফের দিকে তাকায়। কথাটা কি বুকে লাগল? আহনাফ এভাবে কেন বলল? আর বলল-ই না হয়; অর্ষার কেন এমন লাগছে? এত খারাপ অনুভূতি কেন হচ্ছে? আহনাফের মতো তারও তো আহনাফের প্রতি কোনো অনুভূতি নেই, ভালোলাগা, ভালোবাসা কিছুই নেই। তবে? বৈবাহিক পবিত্র সম্পর্কে আবদ্ধ বলে?
চলবে...
============================ 000000000 ===================================
"লতার আত্মা"
"পর্বঃ-২
*
.
ভিতর থেকে আমার হাতটা কেউ যেনো জোরে টেনে ধরেছে।শরীরের সব শক্তি দিতে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।না পারছি না।
প্রচন্ড ব্যাথা লাগছে,মনে হচ্ছে এক্ষনি কেউ একজন হাতটা ছিড়ে নিয়ে যাবে।আর সহ্য করা যাচ্ছে না।রীতিমতো পুরো শরীরের সব রক্তই যেনো চুষে খেয়ে ফেলছে, এমনি মনে হচ্ছে।মাথাটা ঘুরছে আমার।
কেউ শুনলে শুনুক,আমি আর্তনাদ করলে হয়তো কেউ এসে আমাকে বাঁচাবে এখান থেকে।নয়তো আর কোন উপায় নেই।আমি অনুভব করতে পারছি,এখানে লতা মারা যাওয়ার পরও অন্য একজন আছে।একটু পরপর নিঃশ্বাস নেওয়ার শব্দ শুনতে পাচ্ছি।এটা অশরীরি কিছু একটা হবে।আমাকে বাঁচতে দিবে না এই আত্মা।
আমি চিৎকার করছি।প্রচন্ড রকমের আর্ত চিৎকার।কেউ বাঁচাও আমাকে।আমার হাত ছাড়ো,হাত ছাড়ো।আমাকে মুক্তি দাও।আমার হাতের কবজিটা যেনো কেউ কড়মড় করে খেয়ে ফেলছে।
শরীরটার সব শক্তি ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে।আমি চিৎকার করছি কিন্তু কেউ একজন আমার গলার স্বরটাই টেনে নিয়ে ফেলেছে।আমি নিজেই আমার নিজের শব্দ শুনতে পারছি না।প্রচন্ড রকমের ভয় হচ্ছে।আলোটা একটু পর পর টিপ টিপ করছে।যেকোন মুহুর্ত্বে হয়তো নিভে যাবে।কেনো হচ্ছে এইসব।সবকিছু তো ঠিক ছিলো,হঠাৎ রুমটা অভিশপ্ত হয়ে উঠেছে কেনো।আলোটা ঠুস করে বন্ধ হয়ে গেছে।আমি গোঙাছি,কাঁদছি।যেনো আমারও এক্ষনি মৃত্যু হয়ে যাবে এই বাথরুমে।এই যেন নরক যন্ত্রনা ভোগ করছি।নিঃশ্বাসের শব্দটটা আরো গাড়ো হচ্ছে।অন্ধকার বাথরুমে মনে হচ্ছে আজ আমার মৃত্যু হবে।
নিজের সর্বশেষ শক্তি দিয়ে টান দিয়েছি হাতটা।
হ্যাঁ আমি পেরেছি।হাতটা ছুটে গেছে।বাথরুমের দরজাটা খুলে দৌড়ে রুমে চলে এলাম।আমার হুঁশ নেই,,কি হয়েছে এতোক্ষন!! আর কি হতে যাচ্ছে।এই অন্ধকার রুমটাতেই বা কে ছিলো।
ঘরে এসেই হাতের দিকে তাকিয়ে আমি আবার ভয়াল চিৎকার করছি,,,,আমার হাত নেই।
হাতের নিচের অংশটা ভিতরে কেউ ডুকিয়ে ফেলেছে।কাটা অংশটা দিয়ে ঝরঝর করে রক্ত পরছে।কবজির চারপাশে লালা লেগে আছে।ভীষণ দুগন্ধ ছড়াচ্ছে সেখান থেকে।
একটু আগে লতার রক্তগুলো পরিষ্কার করেছি।কিন্তুু এবার আমার রক্তে পুরো ঘর ভেসে যাচ্ছে।
নিচের ফ্লোরে ধপাশ করে বসে পরেছি।
আমার হাত,,,,,,,,,,,আমার হাতের অংশটা কোথায়!!!
হাতে সব কামড়ানোর দরকার।কেউ যেনো কামড়িয়ে কামড়িয়ে হাতের অংশটা শেষ করে ফেলেছে।প্রচন্ড যন্ত্রনা করছে।ব্যাথায় ছটফট করছি।মানুষের শরীরের কোন অংশ কেটে গেলে হয়তো এমন অনুভব হয়, যেটা আমার এখন হচ্ছে।
তাহলে লতার ও ঠিক একই অনুভূতি হয়েছিলো।ওর শরীরের মাংসগুলো তো আমি এই হাতেই কেটে টুকরো টুকরো করেছি।শরীর থেকে মাথাটা কুপিয়ে আলাদা করেছি।ওর এই অনুভূতিটা হয়েছে।
আমি মুক্তি চাই।আর এই অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য হচ্ছে না।আমি কাঁদছি,প্রচন্ড ভাবে চিৎকার করছি,কিন্তু শব্দটা এই ঘর থেকে বের হচ্ছে না,কেনো জানি আমার মনে হচ্ছে লতার আত্মা এই কাজগুলো করছে।হয়তো মৃত্যুর প্রতিশোধ নিচ্ছে।মৃত্যুর আগে সেই কথাটাই লতা আমাকে বলেছিলো,,
-- আমাকে মারলে আমি আর আমার বাচ্চা, দুটো জীবনের মৃত্যু হয়ে যাবে। আর আমি সেই প্রতিশোধ নিবো,তুমি এই কাজ করো না।
আমার পায়ে ধরে অনেক অনুনয় বিনয় করেছিলো লতা।কিন্তু আমি তাকে ক্ষমা করিনি।
আমি বিশ্বাস করিনি।কারন পৃথিবীতে কোন মানুষকে মারার পর তার আত্মা থাকতে পারে কিংবা সেও চাইলে মানুষকে এভাবে শাস্তি দিতে পারে এটা আমার বিশ্বাস যোগ্য ছিলো না।
আমাকে বাঁচতে হবে এখান থেকে,যেভাবেই হোক এই ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে হবে।না হলে এই আত্মা আমাকে খুন করে ফেলবে।আমি কাঁটা হাত নিয়ে দৌড়াচ্ছি।দরজার কাছে গিয়ে বাম হাতে দরজা খোলার চেষ্টা করছি।কিন্তু কোন ভাবেই খুলতে পারছি না,বাইরে থেকে কেউ যেনো দরজাটা লাগিয়ে দিয়েছে।এটাতো সম্ভব না,দরজায় খুব জোরে জোরে লাথি মারছি,কিন্তু কিছু ই হচ্ছে না।ঘরের কোন জায়গা দিয়েই কোন শব্দ হচ্ছে না। পুরো ঘরটাই কেনো জানি নিরব নিস্তব্ধ হয়ে পরেছে।
প্রচন্ড পানির পিপাসা লেগেছে আমার।যেনো এই মুহুর্ত্বে আমি মৃত্যুর কোলে ঢলে পরবো।হাতের যন্ত্রণা খুব বাড়ছে।কেনো আমি লতাকে হত্যা করতে গেলাম,কেনই বা ওর শরীরটাকে টুকরো টুকরো করতে গেলাম,আমার অনুশোচনা হচ্ছে,কিন্তু এই মুহুর্ত্বে আর কিছুই করার নেই।
ফ্রিজে রাখা বোতলগুলোর দিকে হাত বাড়ালাম।
ফ্রিজ খুলে যা দেখলাম তাতেই আমি ধপাশ করে নিচে পরে গেলাম।সব বোতল গুলো লাল রক্তে ভরপুর।হোটেলে এসেই আমি পানি নিয়ে রেখেছিলাম,কিন্তু সবগুলো লাল রক্তে পুরোনো।
এটাও কি হওয়া সম্ভব নাকি? আমার সাথে হ্যালুসিনেশন হচ্ছে।ধপাশ করে ফ্রিজটা বন্ধ করে দিলাম।টপ টপ করে ঘাম পরছে।শরীর দিয়ে যেনো একটা নদী বয়ে যাচ্ছে।
দৌড়ে বেসিনে গিয়ে পানির কল ছাড়লাম,পানি পরছে।বাঁচা গেলো।হাতটা বাড়িয়ে দিলাম।পানি নিয়ে মুখের সামনে আনতেই পানিগুলো রক্ত হয়ে যাচ্ছে।সব পানির কল গুলো যেনো আপনা আপনি চালু হয়ে যাচ্ছে।একটার পর একটা,আর সব কলগুলোতে
টপ টপ টপ টপ
,,,,করে লাল রঙের রক্তের স্রোত বইছে।
কিভাবে সম্ভব এটা,কি করে?
আমার মৃত্যু সন্ধিক্ষনে, মুক্তি চাই!!
আমি অনেক বড়ো ভুল করেছি।
মৃত্যু!! মৃত্যু!!!
নাআআআ
লতা ক্ষমা করো আমায়।
আমার ভুল হয়ে গেছে,,।
হঠাৎ করেই রুমের দৃশ্যপট পাল্টে গেলো!!!!
.
(চলবে)
.
বি.দ্রঃ-কাল্পনিক পোষ্ট।
লেখার ভুল গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে।
'
.
লেখাঃ- #Neel_Mahmud

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

===

You may also like

===