===

Debor Vabir Biye | দেবর ভাবির বিয়ে | Riad Rayhan | Mim Chowdhury | Mohin Khan | Natok 2022

 
 
কাবার্ডে কাপড় গুছানো সময় দৃষ্টি গিয়ে থমকালো কিনারে পড়ে থাকা শুভ্র রঙের কামিজটির দিকে। আনমনে তাকিয়ে থেকেই হাতে তুলে নিলাম সেটি, ভাঁজ খোলা মাত্র ভেসে উঠলো ছোপ ছোপ র'ক্তের গাঢ় দাগ। খুব নিবিড়ভাবে ছড়িয়ে আছে লালাভ রঙটি। সাথে জড়িয়ে আছে তীক্ত-রিক্ত-মিষ্ট সেই দিনগুলো, অপেক্ষার গল্পগুলো৷ অদ্ভুত এক প্রণয়কাব্যের সূচনা। 
 
সেবার শরৎ এর মৌসুমে কুরবানি ইদ হলো। রৌদ্রজ্বল আকাশে শুভ্রতা, বাতাসে মুগ্ধতা ছিল পরিপূর্ণ। গত সন্ধ্যায় বড় মামীর বাসায় মেহেদী দিতে এসে রাতটা এখানে থেকে গিয়েছিলাম। সকালে খাওয়া-দাওয়া করে ছুটলাম নিজ বাসায়। মা বাসায় একা যে। সিড়ি বেয়ে দ্রুত গতিতে নামছিলাম বিধায় সামনে এতটা খেয়াল করিনি। নিচের সিড়িতে আসামাত্র কারো সাথে ধাক্কা খেলাম আমি। পড়ে যেতে নিচ্ছিলাম বিধায় বাধ্য হয়েই সামনে দাঁড়িয়ে আগন্তুকটি আমার হাত চেপে ধরে। আমায় সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিতেই চেঁচিয়ে উঠেছিলাম আমি, "কি করলেন আপনি এটা?"
 
কথাটা বলার সময় কন্ঠস্বর কাঁপছিল আমার। জামার দিকে তাকাতেই দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এলো আমার। অবাধ্য জল গড়িয়ে পড়ল আমার গাল,চিবুক বেয়ে। সাদা জামাটির বিভিন্ন অংশে ছিটিয়ে আছে র'ক্তের দাগ, হাতের কাছে র'ক্তে'মাখা পাঁচ আঙুলের গভীর ছাঁপ। উঠানের এককোণে সদ্য জ'বা'ই করা গবাদিপ'শুটি মৃ'ত অবস্থায় পড়ে আছে। মানুষের শব্দ শোনা যাচ্ছে। খেয়াল নেই এদিকে কারো। বুঝতে দেরি নি র'ক্ত'টা কিসের। আমাকে কান্না করতে দেখে সামনের মানুষটি বেশ ভড়কে যায়। আকাশসম বিস্ময় নিয়ে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল আমার দিকে। আর তাকাবেই না কেন? সদ্য উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা এক যুবতিকে সামান্য এই কারণে কাঁদতে দেখে যে কেউ হয়তো এভাবেই তাকিয়ে থাকতো। ভাবতো সামান্য একটা বিষয়ে এভাবে কাঁদার কোন মানে আছে নাকি? তবে অন্যের নিকট বিষয়টা সামান্য হলেও আমার কাছে যে ছিল না। জামাটা যে বাবার শেষস্মৃতি ছিল। কিভাবে বোঝাবো 
 
অনুভূতিটা? কান্না মিশ্রিত স্বরেই পুনরায় চেঁচিয়ে উঠেছিলাম আমি, "কেন করলেন এটা আপনি? কেন?"
প্রশ্ন করা শেষে কান্নার বেগ বাড়লো। কন্ঠ উঁচু ছিল বিধায় আশপাশের দুই-একজন লোক এবার তাকালো। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা তটস্থ হয়ে হয়ে কিছু একটা বলতে নিচ্ছিল তবে এর আগেই পিছন থেকে প্রণয় বলে উঠে, "প্রেরণা আপু কি হয়েছে? কাঁদছ কেন তুমি?"
 
প্রণয়ের কন্ঠ শুনেও আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম না। স্থির হয়ে মাটির দিকে চেয়ে থাকলাম। আমাকে কান্না করতে দেখে দ্রুত নেমে এলো প্রণয়। লোকটার দিকে তাকিয়ে বারো বছর বয়সী ছেলেটির আক্রোশ ভরা কন্ঠে বলল, "কি করেছ তুমি আমার আপুকে? কাঁদছে কেন সে? বল, নাহলে ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দিব তোমার।"
 
লোকটা যেন এবার অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। এইটুকুন পিচ্চি নাকি তার মত তাগরা যুবককে হুকুম দিচ্ছে ব্যাপারটা হয়তো হজম করতে পারেনি। অস্ফুট কন্ঠস্বরে বলল শুধু, "আমি.. কিছু করিনি।"
আমি কোনমতে ঠোঁট কাঁমড়ে কান্না থামালাম। কোনকিছুর উত্তর না দিয়ে এক পলক ঘৃণামিশ্রিত নয়নে লোকটার দিকে তাকিয়ে প্রণয়ের হাতটা চেপে ধরে পাশ কাটিয়ে চলে আসলাম সেখান। পিছন থেকে তখন ভেসে আসছিল এক পুরুষালি কন্ঠ, "আমি ইচ্ছে করে করিনি। ইট ওয়াস জাস্ট এন এক্সিডেন্ট। এই যে মিস শুনছেন? এই যে!"
 
না শুনিনি আমি। ঝাপসা নয়নে দৌড়ে বাড়ির তিরসীমানায় এসে ঢুকেছিলাম। পাঁচ মিনিটের রাস্তা সেদিন তিন মিনিটে পরিণত হয়। এদিক সারারাস্তা প্রণয় জিজ্ঞেস করেছিল কি হয়েছে, তবে উত্তর পায়নি। বাসায় এসে কিছু না বলে জামা থেকে র'ক্ত উঠানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলাম, কিন্তু আফসোস পারিনি। র'ক্ত যে তখন শুকিয়ে কাঠ, দাগ কি আর উঠবে? পুনরায় বাঁধ ভাঙলো। আমার জন্মদিনে দেওয়া বাবার শেষ উপহার ছিল এই সাদা জামাটি। এরপরই কোন এক বিবর্ণ বসন্তে মিইয়ে গেলেন তিনি জড়ো হাওয়া হয়ে, চিরতরের জন্য। সেদিন থেকে এই পর্যন্ত জামাটি ছিল আমার কাছে অতি মূল্যবান সম্পদ৷ যা কি-না আজ বিনষ্ট হয়েই গেল। আমার কান্নার মাঝেই মা ছুটে এলেন। আমাকে দেখে বিচলিত হলেন। জানতে চাইলেন পুরো ঘটনা। আমার ক্রন্দন বেষ্টিত কন্ঠ তখন, কোন মতে বললাম সবটা। মা সান্ত্বনা দিলেন, বুঝালেন। তবে কাজে আসলো না কিছুই৷ কেঁদেই গেলাম আমি। বুঝতে চাইলাম না কিছুই, খালি দোষারোপ করে গেলাম সেই ব্যক্তিটাকে।
 
দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো। নিকষ আঁধারের ছাঁয়া পড়লো। তবুও রুম ছাড়লাম না আমি। রাতের দিকে মা এসে খুব কষ্টে আমাকে খায়িয়ে দিয়ে গেলেন। অতঃপর বুঝালেন খুব, সবটা ঘটনা ছিল না। দোষ কারো ছিল না এতে। মায়ের ক্লান্তি ভরা মুখটার দিকে তাকিয়ে আমিও বুঝার চেষ্টা করলাম। বিকেল থেকেই বাসায় আত্মীয়স্বজনের বাসা থেকে লোক আসা শুরু হয়। তাদের আপ্যায়ন, এরপর গোছগাছ করতেই তো রাত পোহালো। কতটা না ধকল গিয়েছে তার উপর এখন আবার আমায় বুঝ দিতে এখানে বসে আছে সে। নিজেকে ধাতস্থ করার চেষ্টা করলাম। হালকা হেসে মাকে বললাম, "ঠিক আছি আমি মা। তুমি যাও, শুয়ে পড় এখন। রাত হয়েছে।"
 
মা যেতে চাইলেন না। শেষে আমার জোড়াজুড়িতে গেলেন। এরপর ক্লান্ত,বিষন্ন,বিষাক্ত মন নিয়েই বাসার এককোণে পড়ে রইলাম কতদিন। মাঝে মামা-মামী এলেন, ছোট-বড় ভাইবোনও এলো। কথাবার্তা হলো তবে বের হলাম না আমি। এডমিশন ছিল সামনে, তাই সব ভুলে পড়ায় মনোযোগী হওয়ার চেষ্টা করলাম। মাসখানেক গেল এর পিছনেই। অবশেষে অবসরের দেখা মিলতেই বড়মামী আর তার মেয়ে মিলি এসে হাজির হলো, আমায় নিয়ে যাবে বলে। যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না বিন্দুমাত্র তবু্ও মায়ের কথায় যেতে হলো। মামীর বাসায় যাওয়ার পরেরদিন অপরাহ্নের মেঘ ঘনিয়ে আসতেই মিলি,ইফাত জোর করল ছাদে যাওয়ার। তাদের মন রক্ষার্থে গেলাম সাথে। ছাদে কদম জোড়া স্থাপন করতেই জীবনে 
 
দ্বিতীয়বারের মত মুখোমুখি হলাম সেই আগন্তুকটির সাথে। চোখাচোখি হলো সাথে সাথেই। সাদা টি-শার্ট আর নেভি ব্লু ট্রাউজার পরিধানে, ছাদের এক কোনে দরজার দিকে দাঁড়িয়ে সে। আমার দিকে তাকিয়ে, চেনার প্রয়াস চালাচ্ছিলেন বোধ হয়। তবে তাকে দেখে মেজাজ বিগড়ে গিয়েছিল আমার। কিছু বলতে যাচ্ছিলাম কিন্তু তার আগেই ইফাত দৌড়ে গেল লোকটার কাছে। উৎফুল্ল স্বরে কথা বলতে শুরু করলো। আমি তা দেখে চলে আসতে যাব তার আগেই পিছন থেকে ডাক দিলেন তিনি, "এই যে মিস শুনেন। দাঁড়ান একটু।"
 
ঘুরে তাকালাম আমি। চোখে-মুখে তখন আমার রাজ্যের বিরক্তি। সে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন, "আপনাকে অনেকদিন ধরে খুঁজছিলাম আমি। কিন্তু আপনার তো কোন হদিসই পাচ্ছিলাম সেদিনের পর। অবশেষে দেখা পেলাম আপনার।"
 
শান্ত,শাণিত কন্ঠ আমার, "আমাকে খোঁজার কোন কারণ দেখছি না আমি।"
লোকটা প্রায় তটস্থ হয়েই বলেন, "আসলে ওইদিনের জন্য সরি বলার ছিল আপনাকে। আমি ইচ্ছে করে করিনি সেটা। হঠাৎ করে সবটা হয়ে গিয়েছিল।"
তার কথাগুলো বেশ আগোছালো ঠেকলো আমার কাছে। তবে সেদিক সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে বললাম, "আচ্ছা।"
 
অতঃপর আর এক মূহুর্ত বিলম্ব না করে নেমে এলাম নিচে। মানুষটাকে কেন যেন অসহ্য লাগছিল আমার। হয়তো তাকে দেখামাত্র সেই দৃশ্য বার বার মনে পড়ছিল বলে। রাতে মিলি আমার সাথে গল্প জুড়ে দেয়। পিঠাপিঠি ছিলাম দুইজনে, তাই আমাদের মাঝে জমতো বেশ। কথায় কথায় মিলির কাছ থেকে জানা গেল লোকটির নাম নীরদ৷ এই বিল্ডিংয়ের এই ছয়তালায় থাকেন তারা৷ অনার্সের শেষ বর্ষে পড়ছেন। ছেলে হিসাবে নাকি অনেক ভালো। বড় মামা,মামী তাকে অনেক পছন্দ করেন। 
 
দুই পরিবারের মাঝে সখ্যতাও বেশ। প্রতিদিন বিকেলেই নীরদের মা আসে বড় মামীর সাথে আড্ডা দিতে। আরও কত কি। লোকটার সম্পর্কে জানার বিন্দুমাত্র আগ্রহ আমার ছিল না বলে একপ্রকার বিরক্ত হয়েই শুয়ে পড়েছিলাম সেদিন। পরদিন ইফাত,মিলির সাথে বিকেলে ছাদে যেতেই আবার নীরদের সাথে দেখা। আমি তাকে অদেখা করে চুপচাপ কিনারে থাকা লোহার দোলনায় বসে পড়লাম। দূর থেকে দৃষ্টি বিনিময় হলো। একসময় নীরদ সামনে এসে বললেন, "কি করছেন?"
 
আমি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বললাম, "জিজ্ঞেস করার কি হলো? দেখতেই তো পাচ্ছেন।"
নীরদ ভ্রুকুটি কুঁচকে বললেন, "যতটি না শব্দ অপচয় করলেন তার অর্ধেকের অর্ধেক শব্দ প্রয়োগ করলেই আমার প্রশ্নের উত্তরটা দেওয়া হয়ে যেত আপনার।"
 
আমি বিতৃষ্ণায় তাকালাম না এদিক। মুখ ফিরিয়ে আকাশ দেখতে ব্যস্ত হলাম। নীরদ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, "আপনি কি সবসময় এমন গুরুগম্ভীর নাকি শুরু আমার সাথেই এমন?"
আমি আকাশের পানে তাকিয়ে বললাম, "কি জানি।"
 
সেদিন নীরদ কিছুক্ষণ আমার পানে তাকিয়ে চলে গেলেন। এরপর সেই বাসার ছাদে যখনই উঠলাম তখনই দেখা মিলতো নীরদের। মাঝে মধ্যে দৃষ্টি বিনিময় হতো, কোণে জুলতো তার সুক্ষ্ম হাসি তবে বিপরীতে উপহার পেত আকাশসম বিরক্তি ভরা এক চাহনি। আমি বাসায় চলে আসার পরও রাস্তাঘাটে প্রায়শই দুইজন দুইজনের মুখোমুখি হয়ে যেতাম। প্রায়ই আমার বাসার সামনেই এক টঙের পাশে নিজের বাইক থামিয়ে চা খেতেন তিনি। আমার যাওয়া-আসার সময় চোখে চোখ পড়তো ঠিকই,তবে কথা হতো না। চুপচাপ পাশ কাটিয়ে চলে আসতাম।
 
এরপর ভার্সিটির চত্তরে পা রাখামাত্র ব্যস্ততা বাড়লো আমার। পড়ালেখার পাশাপাশি হাতখরচের জন্য তিন-চারটে টিউশনি ধরলাম। সারাদিন এদিক সেদিক ছুটোছুটির মাঝে থাকতাম। সকল অবসর যেন পালিয়েছিল ফুড়ুৎ করে। অতঃপর এক আষাঢ়ের 
 
সায়াহ্নে, কৃষ্ণমেঘের হাতছানি চারদিক। বাসাতের বেগ তখন প্রবল। স্টুডেন্টের পরীক্ষা সামনে বিধায় এক্সট্রা টাইম দিতে গিয়ে দেরি হলো সেদিন। তার বাসা থেকে বের হয়ে আবহাওয়া প্রতিকূলে দেখে রিকশা খোঁজ করলাম। মিনিট খানেক খোঁজ করেও যখন পেলাম না তখন রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটা দিলাম৷ আকাশে বিষন্নতার ছোঁয়া গাঢ়তর হলো। ঘন কৃষ্ণ মেঘের আড়ালে ডেকে উঠছে এক বিশাল প্রলয়ঙ্কারী। চোখের পলকেই বিষন্নতা বিন্দু হয়ে নেমে এলো পৃথিবীর বুকে। বৃষ্টির বেগ বাড়তেই রাস্তা-ঘাট জনমানবশূন্য হয়ে উঠলো। আমি ছাউনির জন্যে এক দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। মিনিট দশেক পাড় হলো সেখানেই, বৃষ্টি থামার নাম-গন্ধ নেই তখনও। হঠাৎ কেউ নাম ধরে ডেকে উঠলো আমার৷ সচকিত দৃষ্টিতে আশপাশ তাকাতেই নিজের সামনে একটা রিকশা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম৷ ভিতর থেকে নীরদ উঁকি মেরে বলছেন, "প্রেরণা আপনি এখানে? আটকা পড়েছেন?"
 
 
তাকালাম সেদিক। সাথে বাইক নেই তার আজ, বৃষ্টি বলে হয়তো। তার প্রশ্নের মুখে উত্তর দিলাম না আমি, মাথা দোলালাম শুধু। সে বললেন, "এদিকটায় রিকশা পাবেন না এখন৷ আর ঘন্টাখানেকের আগে বৃষ্টি থামবে বলেও মনে হয় না আমার। রিকশায় উঠুন নামিয়ে দিচ্ছি।"
আমি মিনমিনে কন্ঠে বললাম, "আপনি যান, আমি ব্যবস্থা করে নিব।"
"আরেহ বৃষ্টি কি পরিমান হচ্ছে তা কি দেখতে পারছেন না? আসেন!"
আমি নাকচ করে গেলাম। নীরদ না পেরে রিকশা থেকে নেমে এলেন। তার সাথে যাওয়ার জন্য বললেন অনেক, আমি মানলাম না। শেষে বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলাম, "আমি আপনার সাথে যেতে ইচ্ছুক নই, বুঝেন না কেন?"
 
নীরদ থমকালেন। শান্ত চোখে তাকিয়ে থাকলেন কিয়ৎক্ষণ। ব্যথিত অনুভূতিগুলো চোখের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে। হয়তো বুঝতে পারলেন আমার রাগের উৎস। স্বল্প পরিসরে হেসে বললেন, "তাহলে আপনি রিকশাটা নিয়ে যান। আমি আসছি পরে।"
"কোন দরকার নেই। আপনি যান।"
 
নীরদ মানলেন না। আমাকে একপ্রকার কথার জ্বালে ফাঁসিয়ে রিকশায় উঠিয়ে ছাড়লেন। রিকশাওয়ালাকে ভাড়া দিয়ে বললেন, "মামা ঠিক মত পৌঁছে দিবেন কিন্তু৷ কেমন!"
ভাড়া দিতে নিষেধ করতে চাইছিলাম তবে কেন জানি পারলাম না। ঘোরের মাঝে ছিলাম যেন। তিনি আমার দিকে একপলক তাকালেন, মাটি থেকে আমার ওড়নাটা কুড়িয়ে কোলে দিয়ে তার উপরে পলিথিনের মত পাতলা কাগজটা জড়িয়ে দিলেন, "সাবধানে যাবেন। মামা যাও।"
 
কথাটা শেষ হতে না হতে রিকশাওয়ালা টান দিল, আমি বিমূঢ় হয়ে বসে সবটাই নির্বিকার দেখে গেলাম। ঘটনাক্রমে যখন বাসায় এসে পৌঁছালাম সেই মুহূর্তেই বোধ হলো লোকটা কিভাবে আসবে? এই বর্ষার রাতে আদৌ কোন রিকশা পাবে সে? এতটা পাষাণ হৃদয়ের অধিকারী কবে হলাম আমি? অনুশোচনায়, দুশ্চিন্তায় কাটলো সে রাত আমার। পরেরদিন সকাল হতেই ফোন দিলাম মিলিকে৷ কথায় কথায় খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করলাম নীরদের কি অবস্থা। অতঃপর জানা গেল, তাঁর একশো দুই ডিগ্রি জ্বর। 
 
কাল রাতে বৃষ্টির মধ্যে নাকি হেঁটেই বাসায় এসেছিলেন তিনি, যার জন্য জ্বরে কাবু এখন। কথাটা শুনে অনুতপ্তা ঝেঁকে ধরলো আমায়। একবার কল দিব ভাবলাম, কিন্তু পরবর্তীতে মনে পড়লো তাঁর নাম্বার নেই আমার কাছে। মিলির কাছেও নাম্বার ছিল না। অগ্যত, হাতে হাত রেখে বসে ছাড়া আমার করার কিছুই ছিল না।
কেটে যায় আরও কিছু দিন। এর মাঝে সুস্থ হয়ে উঠেন তিনি, রাস্তাঘাটে দেখা মিলতে শুরু করে। তাকে সরি বলব বলব করেও বলা হয়নি আর। কোথাও যেন একটা জড়তা রয়ে গিয়েছিল আমার। শেষে একদিন জড়তা কাটিয়ে উঠে বলেই ফেললাম, সরি। সে তাকিয়ে রইলো বেশ কিছুক্ষণ। অনন্তর, সে-ই বিষয়টা মিটমাট করলেন। আমার মন থেকেও রিক্ত-তিক্ত অনুভূতিটা খানিকটা কমে এলো। পরবর্তী অকস্মাৎ দেখাসাক্ষাৎগুলো স্বাভাবিক হলো। 
 
এড়িয়ে যাওয়া বিষয়টা মিইয়ে গেল বাতাসে। ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব সুলভ আচরণে অভ্যস্ত হই দুইজনে, তারপরও আপনি সম্মোধন গেল না কারো মুখ থেকেই। সময় যত এগুলো, নীরদের দৃষ্টিতে কিছুটা পরিবর্তন পরিলক্ষিত করতে পারলাম আমি। উজ্জ্বল নয়নের মণিতে অব্যক্ত কিছু অনুভূতির গভীরতা ছিল স্পষ্ট ছিল। অনুমান করতে বেশ বেগ পেতে হলো না। তাই পরিস্থিতি খুব বেশি খারাপ হওয়ার পূর্বেই সরে আসলাম আমি। এড়িয়ে চলার দুঃসাধ্য চেষ্টা। দূর থেকে তার দেখা পেলেই উল্টাপথে হাঁটা দিতাম। সহজ ভাষায়, আলগোছে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলাম আমি,জানা-অজানা এক সত্যের মুখোমুখি হওয়া থেকে। কিন্তু শেষে রক্ষা হলো না। নীরদ একদিন জোরপূর্বক বাইক নিয়েই সামনে এসেই দাঁড়ালেন। ছুঁড়ে দিলেন বিব্রতকর এক প্রশ্ন, "এড়িয়ে চলছেন আমায়? কেন? কি করেছি আমি?"
 
তার কথার বিপরীতে আশ্চর্যান্বিত চাহনি ছিল আমার। কোনমতে ধাতস্থ হয়ে উত্তর দিলাম, "তেমন কিছুই না। ভুল বুঝছেন আপনি। এখন পথ ছাড়ুন, কাজ আছে আমার।"
নীরদ পথ ছাড়লেন না। দৃঢ় কন্ঠে বলে গেলেন, "যেই দুই পথ এক করতে চাচ্ছি, সেই পথ ছাড়ি কিভাবে বলুন তো?"
 
তার অব্যক্ত অনুভূতির স্বীকারোক্তি বুঝতে পেরে ঘাম ঝরছিল কপাল বেয়ে৷ প্রত্যুত্তর করতে যেয়েও পারলাম না আমি। কন্ঠস্বর জমে বরফ হয়ে আছে যেন। এবার নীরদ আমার নীরবতার বিপরীতে অনিমেষ কণ্ঠে এক বিরল আবদার রাখেন আমার সামনে, "আমার জীবনের অনুপ্রেরণা হিসাবে আপনাকে চাই আমি।"
 
কথাটা কর্ণপাত হলেও কণ্ঠনালী দিয়ে শব্দ বেরুলো না আমার। কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়তে থাকলো অবিশ্রান্ত। স্পন্দন গতি বাড়তে থাকলো অস্বাভাবিক। প্রত্যুত্তর করার বদলে সেদিন কোনমতে পালিয়ে এলাম আমি। ঘরবন্দী হয়ে থাকি কয়েকদিন। নিজের অনুভূতি বোঝার চেষ্টা। 
 
আমার মন আদৌ নীরদকে চায় কি-না। কিন্তু উত্তর মিললো না৷ অবশেষে নিজেকে বুঝালাম আমার মনে কোন অনুভূতি নেই কারো জন্য। জোর করেই বুঝ দিলাম বোধহয়। কেন না, ভালোবাসা বিষয় বস্তুটাকে বড্ড ভয় পেতাম আমি। আমার কাছে ভালোবাসার ডেফিনিশন ছিল কষ্ট। আপনজনকে হারানোর থেকেও তীব্র কষ্ট। কোনভাবে চাইতাম না এসবে জড়িয়ে পরবর্তীতে কষ্ট পেতে। তাই মনের গহীনে তার প্রতি চাপা রাগ কাজ পুষে নিলাম জোরপূর্বক। মন স্থির করে বের হলাম, রাস্তার ধারে নীরদকে দেখেও না দেখার ভাণ ধরে পাশ কাটিয়ে চলে আসলাম। 
 
তবে নীরদ সেটা গায়ে মাখলেন না, পিছু পিছু আসলেন আমার৷ বিপরীতে আমার কড়া জবানের সম্মুখীন হলেন তিনি। অপমানিত হলোও বোধহয় কিছুটা। ভাবলাম এই বুঝি পিছপা হলো সে, আর কখনো আসবে না সামনে। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে পরদিনই আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন তিনি। কথা বললেন না কোন, নিষ্পলক তাকিয়ে থাকলেন শুধু। আমি কপালে বিরক্তির রেখা টেনে তার পাশ কাটিয়ে চলে আসতে নিলে নিচুস্বরে শুধু বললেন, "অনুপ্রেরণা আপনি আমারই হবেন।"
 
গায়ের শিরা-উপশিরা কেঁপে উঠেছিল সেদিন। ঝাঁকুনি দিয়ে উঠল সর্বাঙ্গে। অজানা এক অনুভূতি নাড়া দিল মনে। তার এই হুটহাট আমায় 'অনুপ্রেরণা' ডাকটা যে বড্ড আগোছালো করে দেয় আমায়। সেদিন কোনমতে পা চালিয়ে চলে এসেছিলাম আমি।ক্লাসে আসার পর মন-মস্তিষ্কে ঘুরছিল নীরদের কথাগুলো। অমনোযোগী হয়ে চারটে ক্লাস শেষ করে দীর্ঘ-নিশ্বাস ফেলি। বিষয়টা মাথা থেকে জোর করে বের করলাম। অনুভূতিগুলো ধামাচাপা দিলাম। তার জন্য কোমল হৃদয়েশকে পাষাণে রূপান্তরিত করলাম। যখনই সামনে আসতেন তখনই চরম অপমানের শিকার হতেন মানুষটি। শেষ অব্দি তিনি হাল না ছাড়লেও আমি ছেড়ে দেই। একটা মানুষকে আর কত শুনানো যায়? তাই সিদ্ধান্ত নিলাম এড়িয়ে চলার। কিন্তু মানুষটাকে আমি যত এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম, ততই মানুষটার পাগলামো বাড়লো। 
 
পরবর্তীতে আমি যেখানেই যেতাম না কেন সেখানেই রাস্তার ধারে বাইক সহিত তাকে দেখা যেত দাঁড়িয়ে থাকতে। এগিয়ে আসতেন না কখনো, দূর থেকেই দেখতেন। যে রাস্তায় ভুলে করেও রিকশা পেতাম না আমি সেখানে রিকশাওয়ালারা সেধে ডাকতেন আর বাসায় সামনে এসে ভাড়াও নিতেন না। অবুঝ ছিলাম না যে বুঝতে অসুবিধা হতো এসবের পিছনে কার কারসাজি। পরীক্ষার সময় মাঝরাত পর্যন্ত পড়া অভ্যাস ছিল আমার। সেবার ফাস্ট সেমিস্টার চলছিল আমার। টানা পড়া পর ক্লান্তি ভরা নিয়ে বারান্দায় দিয়ে যখনই দাঁড়াতাম শৈথিল্য হাওয়ার স্বাদ নিতে তখনই নিচে সোডিয়াম লাইটের হরিদ্রাভ আলোয় বাইকের উপর সেই মানুষটাকে বসে থাকতে দেখতাম। যতক্ষণ আমি পড়তাম ততক্ষণ সে নিচেই থাকতেন। তবে যাই করতেন না কেন, কখনো কল বা মেসেজ দিয়ে জ্বালাতন করতেন না। 
 
প্রথম প্রথম এসবে অস্বস্তি, রাগ হতো অনেক, মন চাইতো গিয়ে মাথা ফাটিয়ে আসি তার। কিন্তু ধীরে ধীরে সময় যত গড়ালো কেমন যেন নিভে গেলাম আমি৷ অজানা, অব্যক্ত কিছুর শিকলে বাঁধা পড়লাম। দৃষ্টিতে সয়ে গেল সে, অস্বস্তি কেটে গেল। তার উপস্থিতিতে নিরাপদ অনুভব করতে শুরু করলাম। কিন্তু প্রকাশ করলাম না সেটা, সময়ের স্রোতকে যেতে দিলাম এভাবেই। অকস্মাৎ একদিন অপরিচিত নাম্বার থেকে কল এলো আমার ফোনে, সেই প্রথমবারের মত। হ্যাঁ, নীরদের কল। আমায় দেখা করার জন্য বললেন, জরুরি কথা আছে কিছু। কেন যেন মানা করতে পারলাম না, রাজি হলাম তার কথায়। 
 
অপরাহ্নের দ্বিতীয় লগ্নে এসে হাজির হলাম তার বলা জায়গায়টি। রেস্টুরেন্টে ডেকেছেন তিনি, আমি লম্বা এক শ্বাস নিয়ে অগ্রসর হলাম। ভিতরে ঢুকতেই ডানদিকের শেষ টেবিলে বসে থাকতে দেখলাম তাকে। ধীর পায়ে এগিয়ে গেলাম সেদিক, তিনি আমাকে দেখে উঠে দাঁড়ালেন। চেয়ার টেনে আমাকে বসিয়ে দিয়ে নিজেও অপর পাশে গিয়ে বসে পড়েন। মিনিট একের মাঝেই ওয়েটার এসে দুই গ্লাস কোক সামনে রেখে চলে যায়। সম্ভবত আমার আসার পূর্বেই তিনি অর্ডার করে রেখেছিলেন। আমি কৌতূহলী নয়নে তার দিকে তাকাতেই তিনি কেশে উঠলেন। মুখ শুকনো,জীর্ণ,পাংশুটে। আঁখিপল্লব ম্রিয়মাণ। বললেন, "অনুপ্রেরণা আপনি কি আসলেই আমায় চান না? এতটাই কি বাজে আমি? বলুন না?"
 
 
হঠাৎ তার এমন প্রশ্নের ভার নিতে পারলাম না আমি। হকচকিয়ে উঠলাম, উত্তর গোছাতে না পেরে মাথা নত করে পায়ের বৃদ্ধা আঙ্গুলের দিকে তাকিয়ে রইলাম। তিনি আলগোছে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন, আমার নীরবতায় হয়তো তিনি অন্য এক উত্তর খুঁজে নিয়েছেন। বললেন, "আমি দুই বছরের জন্য দেশের বাহিরে যাচ্ছি, মাস্টার্স কমপ্লিট করতে। পরশু আমার ফ্লাইট।"
 
কথাটা শুনে খুশি হওয়ার বিপরীতে বজ্রাহত হলো মন। দৃষ্টি তুলে তাকালাম আমি তার দিকে। বুঝতে চাইলাম আদৌ তিনি সত্য বলছেন কি-না। অতঃপর বুঝতে পেরে চুপ বনে গেলাম। রা করলাম না একটি বারও। তিনি আরও অনেক কথাই বললেন কিন্তু আমি প্রত্যুত্তর করলাম না একটি বারও। আশাহত হয়ে তিনি মাথা নত করে বসে রইলেন। আমিও তাই। মিনমিনে কন্ঠে শেষ চেষ্টাটা চালালেন তিনি, "অপেক্ষা করেন যদি, কথা দিচ্ছি শেষ বয়সে ভরসার হাতটি আমারই হবে। এখন সিদ্ধান্তটা আপনার। "
 
 
এবারও পারলাম না কোন প্রত্যুত্তর করতে। নিভৃতে নিজেকে পাষাণ প্রমানিত করে কাঁধে ব্যাগ চেপে উঠে চলে এলাম সেখান থেকে। বাসায় এসে পাথর ন্যায় বসে রইলাম ঘন্টার পর ঘন্টা। সব কেমন যেন এলোমেলো লাগছিল আমার। সকল হিসাব মেলাতে মেলাতে কিভাবে যে দু'টো দিন কেটে গেল বুঝে উঠতে পারলাম না। অতঃপর যখন খবর এলো সে চলে গিয়েছে, তখন হুঁশ ফিরলো যেন। কথায় আছে না, দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা থাকে না? আমার ক্ষেত্রেও হলো ঠিক তাই। নীরদের অনুপস্থিতি পোড়াতে থাকলো আমায়, অব্যক্ত সবকিছু উপলব্ধি করতে থাকলাম সময়ের সাথে সাথে। বুঝতে পারলাম সেই মানুষটাতে আটকে গিয়েছি আমি। তার দেওয়া 'অনুপ্রেরণা' নামটি মেনে নিয়েছি। যেই মারাত্মক অনুভূতিটার শিকর থেকে পালাই পালাই করে বেড়াচ্ছিলাম, এখন আমি তাতেই জর্জরিত হয়ে পড়েছি। ইশশ! বড্ড দেরি করে ফেললাম সবটা বুঝতে। আফসোস এখানেই তাকে জানানো হলো না আর, তার অপেক্ষার প্রহরে আবদ্ধ ছিলাম আমি। 
 
দীর্ঘশ্বাস ফেলে কামিজটা ভাঁজ করে উঠিয়ে রাখলাম। আনমনে তাকালাম ক্যালেন্ডারের রঙিন পাতায়। আজ দুই বছরের অধিক পূর্ণ হয়েছে ঠিক, মানুষটাও ফিরে এসেছে আপন দেশের বুকে মাস খানেক হলো। আমার সন্নিকটেই আছে, তবে সে আর এখন আমার নয়। চলতি মাসের শেষেই তার বিয়ে, কোন এক রূপবতী কন্যার সাথে। যে কি-না তাকে খুব ভালোবাসবে। আমি তো পারি নি বাসতে ভালো, কথাও দিতে পারিনি তাকে। কোন দাবি নিয়ে যাব তার সামনে? দাবি যে আমি বহু আগেই হারিয়ে ফেলেছি। 
 
দেরি করে ফেলেছিলাম আমি তাকে চাইতে। তাই তো আজ ভাগ্যক্রমে তার আর আমার বিয়ের আয়োজনও পড়েছে আগে-পড়ে৷ তার বিয়ে ঠিক হওয়ার পরপরই আমার বিয়ের কথাও পাঁকা হয়ে যায়৷ মা তখন এসে আবদারটা এমনভাবেই করলেন যে মানা করতে পারলাম না আমি। রাজি হয়ে গেলাম আমি। মানুষটা যদি আমায় ভুলে এগিয়ে যেতে পারে আমি পারব না কেন? মানে-অভিমানে কার সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে তার জানার আগ্রহ পর্যন্ত দেখালাম না আমি। আয়োজন চললো জাঁকজমকপূর্ণভাবে। আত্মীয়স্বজনের ভীড় জমলো দুয়ারে৷ ঢাক-ঢোলের কলতানে মাতালো শহর। হয়ে গেল আমার বিয়েটা, চলে এলাম নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে৷ তখন নিজের জীবনের সমীকরণ মিলাতেই এতটাই ব্যস্ত ছিলাম যে খেয়ালই করতাম না কিছু। কোথায় যাচ্ছি, আমার পাশের মানুষটাকে, পরিবেশটা কেমন। অতঃপর যখন ঘোর কাটলো তখন সামনে সেই মানুষটাকেই সামনে পেলাম। হাস্যজ্বল মুখে বলতে শুনলাম, "বলেছিলাম না, আপনি অনুপ্রেরণা আমারই হবেন।"
 
[সমাপ্ত]
 
#অনুপ্রেরণা
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

===

You may also like

===