===

বিয়ে পাগলী মেয়ে । Prank King । Tamim Khandakar । Saila sathy । Mamun Ar Rashid । New Natok 2022


পলি আজ অনেক দিন পর মায়ের সাথে গ্রামের বাড়ীতে এসেছে। মাঝ খানে অনেক গুলো দিন কেটে গিয়েছে, বাড়ীতে আসা হয়নি। পলি বারান্দায় বসে আছে, চোখ গুলি অনেক বেশি গর্তে ঢুকে গিয়েছে। কলি মাকে সাহায্য করছে কাজে। কিন্তু পলির এখান থেকে নড়তে ও ইচ্ছে হচ্ছেনা, এতো দূর্বল লাগছে। শরীরের চেয়ে মন বেশি দূর্বল হয়ে গিয়েছে।
 
কলির বাসায় ইচ্ছে করে যায়নি পলি। একটা বেড রুম আছে তাতে খাট আছে। অন্য রুমে সোফা আর ডাইনিং রাখা, জুয়েলের অনেক কষ্ট হয়ে যাবে। অসুস্থ অবস্থায় ফ্লোরিং করে থাকতে দিবেনা। হ্যা, ভাইজানের বাসায় হয়তো যাওয়া যেতো কিন্তু আগের স্মৃতি আর ভাবীর ব্যবহার মনে হলে যেতে ইচ্ছে করেনা। এই অবস্থায় মানসিক প্রশান্তি বেশি দরকার।
 
জুয়েল কি সুন্দর হাতে হাতে নাহিদ-শাহিদ কে কত কাজে সাহায্য করছে, প্রাণবন্ত একটা ছেলে। ভালো লাগে, আবিদের মধ্যে সব সময় একটা গাম্ভীর্যে ভর করে থাকে। তিন বেলা খাওয়া, ঘুম আর চাকরির বাইরে তার তেমন কোন ভাবনা নেই। প্রচন্ড হিসাব করে চলে আবিদ তাতে পলির সমস্যা নেই, কিন্তু সে যে বন্দি পাখির মতো ঘরে ছটফট করে কখনো বুঝেনা আবিদ। যে পলি সারাক্ষণ উড়ে উড়ে থাকতো, হাসি খুশিতে থাকার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতো, এখন তার সময় কাটে একটা আবদ্ধ রুমের মধ্যে!
পলির চোখে পানি আসছে, আহা! বাবুটা যদি থাকতো। তবে তার হয়তো একা সময় যেতো না। কিন্তু কি হয়ে গেল!
 
কলি দূর থেকে পলির চোখের পানি দেখে বলছে, আপা তুই কি আবার কান্নাকাটি শুরু করেছিস? আমি শুধু তোকে সময় দেওয়ার জন্য বাড়ী আসছি! জুয়েল দুই দিনের ছুটি নিয়েছে।
- না, কান্নাকাটি করছি না। ভালো লাগছে না।
- তুই সারাদিন একা থাকিস, স্কুলে জব কর। তুই কত ভালো পড়াতে পারবি!
- ইজ্জত চলে যায় উনার! বউ চাকরি করবে। স্কুল থেকে এসে যদি রান্নাঘরে থালা বাটি দেখে, সুন্দর করে ধুয়ে রাখবে, কাপড় স্কুলে যাওয়ার আগে নিজে ধুয়ে ছাদে মেলে দিবে। সব কাজে সাহায্য করবে। কিন্তু চাকরি করতে চাইলেই, না না ঘরে থাকা ভালো।
- দুলাভাই মানুষ ভালো।
 
- অবশ্যই সে মানুষ ভালো। বিয়ের কত দিন হলো, কিন্তু কোন দিন মনে কষ্ট দিয়ে কিছু বলেনি। আমি যা রান্না করে দিব, কোন কম্পলেইন নেই। আবার তার মুখেও কোন কথা নেই। মাঝামাঝি ভাবি, এই লোক কি বোবা!
- কি যে বলিস আপা!
- ভাবী আসার সময় জিজ্ঞেস করেছে চট্টগ্রাম কবে যাবো?
- কেন?
- কক্সবাজার যাবে, আমার বাসায় দুদিন থাকবে। যেতে একদিন আসতে একদিন।
- মানুষ যে কত প্রকৃতির হয় আপা! চল, পুকুর পাড়ে বসি?
- না, ভালো লাগছেনা, এখানেই বসি।
 
পলি এক মাস বাড়ীতে থেকে চট্টগ্রাম গিয়েছে গতকাল। আবিদ এসে নিয়ে গিয়েছে। এবার বাড়ী থেকে আসতে মন টা খুব খারাপ হয়েছে তার। দুই ভাই খুব যত্ন করেছে পলির। জলি আপার ছেলেকে নিয়েও সে এক সপ্তাহ থেকে গিয়েছে। বেশ আনন্দে সময় কেটেছে, এজন্য এবার চট্টগ্রাম ফিরতে খুব কষ্ট লাগছে। এদিকে শারমিন কল দিয়েছেন তিনি সপ্তাহ খানিক পরে আসবেন তার বাসায়।
আবিদ প্রয়োজন ছাড়া এক টাকাও নষ্ট করেনা। অথচ বাসার পর্দা গুলি যেন কেমন! টেবিলের ক্লথ দুই জায়গায় ছিঁড়ে গিয়েছে। খাবার পরিবেশন করার জন্য সার্ভিং ডিশ ও নেই। ভাবী কত খুঁতখুঁতে, তাছাড়া তারা আসলে তাদের যাওয়ার সময় কিছু উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু আবিদ কি বুঝবে! নিজের ভাই-ভাবীর জন্য জিনিস কিনবে, এটা বলতে কেমম সংকোচ লাগছে।
 
শারমিন সত্যি সত্যি পরের শুক্রবার এসে উপস্থিত হলেন, আর এসে বিভিন্ন খুঁত ধরা আরম্ভ করলেন। পলির জবাব দেওয়ার কিছুই নেই। কারণ আবিদ ভাবীর জন্য সিল্ক শাড়ি এনেছে। জিহানের জন্য শার্ট প্যান্ট, শারমিনের মেয়ের জন্য জামা, সাঈদের জন্য শার্ট। মোটামুটি ভালো মানের এনেছে, বিশেষ করে শাড়িটি বারোশো টাকা দিয়ে কিনে এনেছে। এজন্য পলি আর ঘর সাজানোর কিছুই আনতে বলতে পারেনি।
 
শারমিন বার বার বলছেন পলি আমাদের সাথে চলো সমুদ্র দেখে আসবে। পলির সুপ্ত বাসনা আছে সমুদ্র দেখার, কিন্তু আবিদ এক টাকাও খরচ করবেনা, যাবেনা। সুতরাং না যাওয়াই উত্তম। পলি শুধু বলেছে, ভাবী আমার এখন বেড রেস্ট আমার পক্ষে সমুদ্র যাওয়া সম্ভব নয়।
 
পলির বাসায় তিন দিন থাকার পরে, আজ ঢাকায় ফিরেছে শারমিন। এসেই কক্সবাজারের সব জিনিস খুলে খুলে রাখছে আর সাঈদ কে বলেছে শারমিন, পলি কি পরিবেশে থাকে? ঘরের মধ্যে রুচি কোন পরিচয় আছে? শর্টকাট আইটেম দিয়ে রান্না করে খাওয়ালো। মশার কামড় পর্যন্ত খেলাম ছেঁড়া মশারি। - আহা! ওর জামাইয়ের ইনকাম যেমন!
- চুপ কর তো ইনকাম! তোমাদের রুচি খারাপ।
- টাকা না থাকলে, রুচি থাকেনা।
 
- আর শোনো বুয়া যাওয়ার সময় বার বার বলে দিয়েছে কিছু যেন নিয়ে আসি। আমি পলির দেওয়া শাড়ি বুয়াকে দিয়ে দিচ্ছি। এসব ফুল দেওয়া সিল্ক শাড়ি আমি পরি নাকি?
- তবুও রেখে দাও।
 
- আলমারিতে রাখার মতো জায়গা নাই। আমি এটা এক্ষুনি বুয়াকে দিয়ে দিচ্ছি।
শারমিন বুয়াকে ডেকে বললো এই নাও এটা তোমার জন্য!
- এতো সুন্দর শাড়ি।
- হ্যা। যাও কাজে যাও।
সাঈদ বলছে এটা কি ঠিক?
 
- অবশ্যই ঠিক, দেখেনি আমি কি ধরনের জামা /, শাড়ি পরি! আবার আসার সময় আবিদ বলছে ঢাকায় যে ডাক্তারের ট্রিটমেন্টে ছিল, এখন নাকি আবার দেখাবে।
- আশ্চর্য তাতে তোমার সমস্যা কি?
- গাধা মানব, সমস্যা হলো এখানে এসে উঠবে এজন্য বলছে।
- একদিন থাকলে কি সমস্যা?
 
- তুমি রান্না করবা, আর ডাক্তারে আসলে মিনিমাম চার দিন যায়। কলির বাসা আছে সেখানে উঠুক।
- জুয়েল ময়মনসিংহ ট্রান্সফার হয়েছে। এই সপ্তাহেই শিফট হবে।
- তাহলে কি কয়েকদিন পর তোমার এই বোন ও কি আমার বাসায় ডাক্তার দেখাতে আসবে!
- কি বলো?
 
- আর কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা। আমার খুব মাথা ধরছে, তুমি জিহান কি একটু হাঁটাহাঁটি করো আমি জেনিফার কে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছি।
 
পলি দুই সপ্তাহ পর, চট্টগ্রাম আবার ডাক্তার দেখিয়েছে। কিছু গাইনি সমস্যা হচ্ছে। ডাক্তার বার বার বলছে যিনি আপনাকে ঢাকায় ওই সময় দেখেছেন, তার কাছে যান। তিনি ভালো বলতে পারবেন। এদিকে বাচ্চা পাওয়ার জন্য আবিদের পাগল পাগল অবস্থা! শুধু বলছে কবে যাবে? চলো।
কিন্তু পলির যেতে ইচ্ছে করছেনা। কলি নাই ঢাকায়, আবিদ শুধু বার বার বলছে ভাইজান বলেছেন বাসায় উঠতে। আমার খালার বাসা আছে, কিন্তু এসব বাসায় গেলে ভাইজান মাইন্ড করবেন। তাই ভাইজানের বাসায় যাবো।
 
পলি কিছুতেই বুঝাতে পারেনা যে, তার ভাবী তাদের যাওয়া পছন্দ করেনা। কিন্তু কিছু অপ্রিয় সত্য সবার সামনে বলা যায়না, তাতে নিজের মান সম্মান যায়। জামাই কখন এই নয়ে কথা বলবে কে জানে। পলি শেষ পর্যন্ত রাজী হয়েছে, তার ধারণা হয়তো দুই দিন থেকেই চলে আসবে। তাই সে আজ রওনা হয়েছে ঢাকার উদ্দেশ্যে, ট্রেন ঝকঝক চলছে, আর পলি ভাবীর চেহারা কল্পনা করছে, কত বিরক্ত হবেন, কে জানে--
 
চলবে ----------

আন্নামা চৌধুরী
২৭.০৩.২০২২
ভাবীর সংসার
৫০ তম পর্ব

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

===

You may also like

===