===

কাজের ছেলে যখন জামাই | Full Natok | Shagor Mirza | Riya Chowdhury | Bangla Natok 2022

বাসর ঘরে ডুকেই দেখলাম বউ আমার চিটপটাং হয়ে ঘুমাচ্ছে ৷ আজ যে তার বিয়ে হয়েছে তা হয় তো তিনি ভূলেই গেছেন
আমিঃ এই যে মীমানী উঠেন..........!
শুনেছি নাম মীম
এই যে ফুলটুসি উঠেন (গায়ে ধাক্কা দিয়ে)
বউঃ মোরামুরি দিয়ে উঠে বসে, লজ্জা করে না অপরিচিত একটা মেয়ের গায়ে হাত দিতে
আমিঃ আরে আজব তো আমি তোমাকে বিয়ে করেছি
তুমি আমার বউ
বউঃ তো কিনে নিয়েছেন নাকি 😠😠 যা ইচ্ছে তাই করবেন ,
আমিঃ বিয়ে সম্পকে কিছু জানো
বউঃপরে জানবো এখন ঘুম পাচ্ছে অনেক গুড নাইট
আমিঃ আরে আজকে বাসর রাত , আজ একটু জেগে থাকেন
বউঃ দেখেন পেচাল পারবেন না 😠😠 আপনার জন্য ১১ টা থেকে সারে বারোটা পযন্ত জেগে ছিলাম
আর পারবো না
বিরক্ত করবেন না
আমিঃ তোমাকে তোমার ভাবি বা বান্ধবি কিছু বলে নি বাসর রাত নিয়ে
বউঃ আপনি তো একটা অসুভ্যে 😠😠 অপরিচিত একটা মেয়েকে তুমি করে বলছেন ,আপনাকে আপনার বাপ মা শিখায় নি
আমিঃ আচ্ছা পরিচিত হয়ে নেই
বউঃ কেন বিরক্ত করছেন শুধু শুধু 😥😥
আমিঃ আচ্ছা আপু আপনি ঘুমান (আমার বাসর রাত জলে গেলো) 😥😥
গিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিলাম
বউঃ সুয়া থেকে উঠে বসলো
দরজা লাগালেন কেনো😠
আমিঃ না খুলে রাখি চোর এসে আমার সব কিছু নিজের মনে করে নিয়ে যাক
বউঃ.........! কিছু বললো না আবার শুইয়ে পরলো
আমিঃ ওয়াশরুম থেকে কাপর পাল্টে খাটে এসে বসলাম
বউঃ আবার উঠে বসলো 😥😥😥😥 কান্না ভেজা চোখে তাকালো
আমিঃ ......? কি
বউঃ খাটে উঠলেন কেন 😥😥
আমিঃ না খাটে উঠবো না তো আসমানে উঠবো 😠
বউঃ একটু শান্তি মত কি ঘুমাতেও দিবেন না ভাইয়া😥😥অসহায় ভাবে তাকালো
আমিঃ হ তুমি সান্তিতে ঘুমাও আমি অশান্তিতে ভূগি
তুমি কি অটিযম শিশু নাকি
বউঃ কিসের ঘুম কিসের কি ,
একবারে কলার চেপে ধরে 😠😠😠 নিজের লিমিটে থাকবেন,
কিছু বলছি না দেখে ,
কি মনে করছেন
(চোখ রাঙ্গিয়ে )
আমিঃ আচ্ছা সরি
(মেয়ে মানুষ রাগলে এত কিউট লাগে জানতাম না 😋😋 কিন্তু বউ কে পটাবো কেমনে
যা বলি তাতেই খেপে যায়
আমার তো বিড়াল মারতে হবে 🙈🙈)
বউঃ আমি এখন ঘুমাবো আর একবার যদি বিরক্ত করছেন তো খবর আছে
আমিঃ আচ্ছা কাপড় তো পাল্টে নেন
বউঃ লাগবে না
আমিঃ নাস্তা খাবেন
বউঃ উফ 😠😠😠😠😠😠মরন
আমিঃ আচ্ছা আমি এই পাশে একটু ঘুমাই
বউঃ না
আমিঃ তো আমি কোথাই ঘুমাবো অসহায় কন্ঠে😥
বউঃ ফ্লোরে ঘুমান তো 😠😠
আমিঃ আমার রুম আমি ফ্লোরে ঘুমাবো না
বউঃ আচ্ছা মাঝখানে একটা বালিশ দিয়ে ঘুমান তো ?
আমিঃ এই তো সুযোগ তুমি একবার ঘুমাও দেখো আমি কি করি 😉😉
আচ্ছা বলে একটা বালিশ দিয়ে শুইলাম
মীমঃ একটু পর ,দেখেন আপনাকে বিশ্বাস করে খাটে শুইতে দিলাম ,
বিশ্বাসের ঘরে চুরি করবেন না
আমিঃ হুউ 😝😝একবার ঘুমাও
লাইট অফ করতে চিল্লাই উঠলো
মীম লাইট দেন বলছি
আমিঃ আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন ,সত্যি বলছি
মীমঃ না লাগবে না ? আমি কাউকে বিশ্বাস করি না
কি আর করার অতপর লাইট দিয়েই রাখলাম
সে ঘুমাচ্ছে কিন্তু আমার মন আনচান আনচান করছে কি মায়াবি চেহেরা ,
সুর সুর করে বালিশ সরিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিলাম
একবার ভাবছি কাছে যাবো আরেকবার ভাবছি না থাক
সবুরে মােওয়া ফলে ,😝😝 তারপরে ও
আস্তে করে বুকে টেনে নিলাম 🙈🙈
আর আগালাম না
সকালে তো ঘুম ভাঙ্গতেই আমি অষ্টম আর্চয দেখে ফেললাম ,আমার বউ আমার বুকে মুরগির বাচ্চার মত
গুটিসুটি হয়ে লেপ্টে,
গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে
আর বালিশ ফ্লোরে পরে আছে ,
আর শাড়ি অর্ধেক খুলে মাটিতে....!
বুঝাই যায়
সে এটা টের পেলে ভূমিকম্প শুরু হয়ে যাবে
কিন্তু বউ তো আমারই যা হবে দেখা যাবে 😎😎
আমি আবার ঘুমিয়ে গেলাম
সারে সাতটার উপরে বাজে
ছোটবোন দরজার নক করলো
রাইসা : ভাইয়া..... ভাইয়া
উঠ .....আম্মু ডাকছে বউ পেয়ে কি আজ ঘুম ভাঙ্গে না
অমনি মীম জেগে গেলো
হঠাৎ বুকের মাঝে পিপরার কামর অনুভূব করলাম
আমার ও ঘুম ভেঙ্গে গেলো
দেখি মীম চিমটি দিচ্চে
মীমঃ ছারেন বলছি ,ছারেন 😠😠
আমিঃ হাত দুটো ফাকা করতেই,
ও দিক সরে গিয়ে কাপড় ঠিক করতে লাগলো আর রাগি লুক নিয়ে
মীমঃ অসুভ্যো 😠😠
আমিঃ ও হ্যালো আপনি আমার জায়গায় আসছেন 😏😏 আমার কি দোষ
মীমঃ তো এদিকে সরিয়ে দিলে তো পারতেন
আর জরিয়ে নিলেন কেনো
আমিঃ হইছে 😏 আমি অত দয়ালু না 😛😛
মীমঃ জানি জানি লুইচ্চা একটা
তারপর কাপর নিয়ে ওয়াশ রুমে ডুকে গেলো
আর আমার মনে তো লাড্ডু ফুটছে খুশিতে 😌😌
দরজা খুলতেই ছোট বোন এসে বলে গেলো
আম্মু নাস্তার টেবিলে নাস্তা দিচ্ছে ভাবিকে নিয়ে খেতে আয় হাসতে হাসতে বলে গেলো 😇😇
আমিঃ তুই যা ৷
মীমঃ গোসল করে বের হইলো
আমিঃ গোসল করলেন কেনো
মীমঃ বাসর করলে গোসল করতে হয়
আমিঃ আয় হায় 🙉🙉 কিন্তু আমি তো করি নি
মীমঃ না করলে কার কি
আমিঃ হঠাৎ মনে পরলো রাতের কথা ,
তার মানে ও সব কিছু জানে
তাহলে এত অভিনয় কেনো করলো 🙊🙊
মীমঃ যান গিয়ে গোসল করে নেন খুব খিদা লাগছে কাল দুপুর থেকে কিছু খাই নি
আমিঃ গোসল করবো না
মীমঃ গোসল করে নেন আপনার জন্য সারপাইজ আছে
আমিঃ আহ হয় তো কিস দিবে 😌 মনে মনে
দারান ২ মিনিট ৫ মিনিটে গোসল করে ফেস হয়ে আসছি .....!
(পরিচয়টা দিয়ে নেই ,আমি কামরুল হাসান
পরি অনাস প্রথম বর্ষ , আব্বু ব্যবসা করে , আম্মু বাসায় থাকে ছোট বোন রাইসা নবম শ্রেণিতে পরে
একটা দৌতালা বাড়ি দাদার বানানো এই নিয়ে আমাদের সুখি পরিবার )
.
.
ওয়াস রুম থেকে ফেস হয়ে
এসে দেখি ও নিচে চলে গেছে 😣😣
গাধির ছাও লজ্জা শরম নাই
একটু ও
তারপর কাপর পরে সিরি দিয়ে নিচে নামছি
আম্মু আব্বু দেখি আমার দিকে তাকিয়ে আছে
ইসসরে কি লজ্জা 🙈🙈 রাতে একটা মেয়ের সাথে ঘুমাইছি
মন চায় আবার রুমে চলে যাই
অতপর লজ্জাশরমের
মাথা খেয়ে
নাস্তা করতে বসলাম
মীমঃ আমার দিকে রাগি লুকে😠 তাকাচ্ছে আর খাচ্ছে
আমি একটা পাউরুটি চিরে মুখে দিয়েছি..!
মীমঃ আঙ্কেল আপনাদের ছেলের চরিত্রে সমস্যা আছে
ও রাতে আমার বুকে হাত দিতে চায়
আব্বু কাশতে কাশতে চেয়ার ছেরে উঠে গেলো
আমিঃ লে হালুয়া আমার আর খাওয়া ,
পাউরুটির টুকরো গলায় আটকে গেছে হেচকি উঠতেছে
পাপাপানি.....পানি....
এই ছিলো সারপ্রাইজ
মান সন্মান সব নিলামে উঠাইলো 😰😰😖😖
চলবে.............
Next part cameing soon!
গল্পঃ দুষ্টু ছেলে & ঝগড়াটে মেয়ে
পর্বঃ ১
#Raisa_Monii

Drama : Kajer Chele Jokhon Jamai 

Story : Shagor Mirza 

Starring : Shagor Mirza , Riya Chowdhury , Rocky Khan, Ratna Khan, Nowshin & Many More 

Cinematography & Direction : Sheul Babu 

Edit : Shagor Mirza Colour : Ashiquzzaman Apu 

Producer : Tanvir Mahmood 

Label : Sultan Drama Produced and Distributed by Sultan Entertainment. 

 Enjoy and stay connected with us on Social Media !!

এক রাজা একদিন দেখতে চাইলেন তার রাজ্যবাসীদের ঘরে কার হুকুম চলে? স্বামীর নাকি স্ত্রীর।
তিনি রাজ্যে ঘোষণা করলেন-
'যার ঘরে বউ এর কথা মানা হয়, সে রাজপ্রাসাদে এসে একটা করে আপেল নিয়ে যাবে। আর যার ঘরে স্বামীর কথা চলে, সে পাবে একটা ঘোড়া।
পরের দিন সমস্ত রাজ্য বাসী হাজির। সবাই একটা করে আপেল নিয়ে ঘরে চলে যেতে লাগলো...
রাজা ভাবলেন সন্ধ্যে হয়ে গেল কিন্তু এখনো কি এমন একজন কেও পাওয়া যাবে না যার ঘরে স্বামীর কথা চলে!
এমন সময় একজন এলো লম্বা চওড়া স্বাস্থ্য, ইয়া বড় গোঁফ। সে এসে বললো, "আমার ঘরে আমারই কথা চলে।"
রাজা বেজায় খুশি হলেন তিনি বললেন, "যাও, আমার ঘোড়াশাল থেকে সব থেকে ভালো ওই কালো ঘোড়াটা তোমায় দিলাম।"
লোকটা ঘোড়া নিয়ে চলে গেলো।
রাজা খুশি মনে বললেন, "যাক অন্ততপক্ষে একজন তো পাওয়া গেলো।"
কিন্তু কিছুক্ষণ পর দেখা গেল সেই লোকটা ঘোড়া নিয়ে ফিরে এলো এবং বললো, "রাজা মশাই আমাকে ঘোড়াটা পাল্টে দিন। আমার বউ বললো যে কালো রং অশুভ, সাদা শান্তির প্রতীক, তাই সাদা ঘোড়া দিন।"
রাজা রেগে গেলেন "তুই ঘোড়া রেখে একটা আপেল নিয়ে এখুনি আমার সামনে থেকে বিদায় হও।"
রাতের বেলা মন্ত্রী এলো, বললো "রাজা মশাই, সবাই তো আপেলই নিলো! আপেলের বদলে আপনি যদি অন্তত পাঁচ কেজি করে চাল দিতেন তো আপনার প্রজাদের কিছু সাশ্রয় হত।"
রাজা বললেন, "আমি ও সেটাই ভেবেছিলাম কিন্তু বড় রানী বললো আপেলই ভালো হবে।"
মন্ত্রী শুধালো, "রাজা মশাই আপনাকেও কি একটা আপেল কেটে দেবো?"
রাজা লজ্জিত হয়ে বললেন, "সে কথা থাক, আগে বলো তুমি রাজসভায় এই মতামত না দিয়ে এখন কেন দিতে এসেছো এই রাতের বেলায়??"
মন্ত্রীর লাজুক উত্তর, "আগামীকাল সকালেই বলতাম কিন্তু আমার বউ বললো এখনই যাও আর রাজামশাইকে বুদ্ধিটা এখনই দিয়ে এসো যাতে করে পরের বারে চাল দেওয়ার ঘোষণা দেন উনি।"
রাজা স্বস্তির হাসি হেসে বললেন, "আপেলটা তুমি নিয়ে যাবে? নাকি ঘরে পাঠিয়ে দেবো?"
============================= 000000 ===================================
অশরীরী_প্রেম
#পর্ব_শেষ_পার্ট 06
দুই পরিবার আলোচনা করে অবশেষে ভুল বুঝাবুঝিটা অবসান করল। তারা সিদ্ধান্ত নিল, বিয়েটা তাড়াতাড়ি দেবে। বেশি দেরি করা যাবেনা। এই বিয়েতে মারিয়া খুব খুশি। কিন্তু শিহাব খুশি কিনা তা তার মুখ দেখে বুঝা গেলনা। বেচারা সারাদিন মন খারাপ করে থাকে। কি যেন ভাবে। হয়তো ইভার কথা-ই ভাবে.......
__________ব্ল্যাক ম্যাজিক________
ডিনার সেরে শিহাব তার রুমে প্রবেশ করল। দেখল, ইভা আগে থেকেই আছে। জানলা দিয়ে সে একদৃষ্টিতে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে উদাসীন হয়ে। গালে হাত দিয়ে কি যেন চিন্তা করতেছিল সে। বড় মায়া হল শিহাবের। শিহাব নরমকণ্ঠে ডাক দিল: "ইভা........."
দু'চোখ মুছে ঘুরে তাকাল ইভা। এতক্ষণ সে কান্না করেছে, শিহাব বুঝতে পারল। ইভা সেটা লুকাতে গিয়েও লুকাতে পারল না.....
--এতক্ষণ কান্না করছিলে??"
--কই না তো.....
--তোমার চোখের কোণে এখনও জল জমে আছে।"
ইভা আবারও চোখ মুছে বলল: কই? ও কিছু না....
--আমার কাছে লুকাতে চাইছ???
ইভা এইবার দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরল শিহাবকে। কাঁদতে কাঁদতে বলল: শিহাব, খুব ভালোবাসি তোমাকে।
--ভালোবাস? তো নিজের ভালোবাসাকে আরেকজনের হাতে তুলে দিতে চাইছ কেন?
--কি করব? আমি তো অশরীরী। তোমার আমার মিল তো হবেনা পৃথিবীতে।
--মরার পর তো মিল হবে। আমাকে তো মরতেও দিচ্ছনা তুমি।
--চুপ! ও কথা আবার বললে কিন্তু আমি এখনই চলে যাব।
--আচ্ছা, বলবনা।
ইভা শিহাবকে বেডে শুয়ে দিয়ে নিজে তার বুকে শুইল। শিহাবের মুখে হাত বুলাতে বুলাতে বলল:- এই বুকটাতে কয়েকদিন পর মারিয়া থাকবে। তোমাকে আদর করবে, ভালোবাসবে, আমার কথা মনে পড়বে শিহাব?
--অনন্তকাল তুমি এই হৃদয়ে বেঁচে থাকবে। ইভা, একটা কথা বলব?
--হুমমমম.......
--মারিয়ার দেহে যদি তোমার আত্মা থাকে, তাহলে তো সব সমস্যার সমাধান। তুমি আর আমি পৃথিবীতে সুখে দিন কাটাতে পারব।
--এটা অন্যায় শিহাব। নিজের বোনের প্রতি এতবড় অন্যায় আমি করতে পারবনা। সে-ই ভালোবাসতে পারে, যে ত্যাগ করতে পারে। আমি এতটা স্বার্থপর হতে পারিনা শিহাব। আমি বরং দূর থেকেই তোমাদের সুখের দিনগুলো দেখব.......
কথা শেষ না হতেই ইভা কি যেন যন্ত্রনায় চিৎকার করে উঠল।
--কি হল ইভা?" জিজ্ঞেস করল শিহাব।
--শিহাব, শিহাব রে, আমার বুঝি খুব বিপদ। কেউ ব্ল্যাক ম্যাজিক করে আমার আত্মাকে ডাকতেছে। এ নিশ্চয়ই সাদিয়ার কাজ......" বলতে বলতে ইভা অদৃশ্য হয়ে গেল। বুকভরা ঘৃণা নিয়ে শিহাব উচ্চারণ করল একটা নাম: সাদিয়া....
শিহাব এখন কি করবে কিছুই বুঝতে পারলনা। এই মুহূর্তে কিছুই করা যাবেনা। যা করার শহরে গিয়ে করতে হবে। চিন্তা করতে করতে সারারাত ঘুমাতে পারল না সে।
পরদিন শিহাব মারিয়াকে নিয়ে শহরে গেল। আর কখনও এখানে আসবেনা বলে চলে গিয়েছিল। আবারও আসতে হল। নিয়তি কাকে যে কোনদিকে টানে বলা মুশকিল।
শিহাব মারিয়াকে নিয়ে ইভাদের বাসায় গেল। তারপর ডাক দিল: আংকেল! আন্টি!
ইভার বাবা-মা বের হল। প্রথমেই তাদের চোখ পড়ল মারিয়ার উপর। চমকে উঠল তারা মারিয়াকে দেখে। দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরল তারা মারিয়াকে। তারপর কাঁদতে কাঁদতে বলল: ইভা, মা আমার......
--আন্টি ও ইভা না। আপনাদের হারিয়ে যাওয়া মেয়ে শিখা।
--শিখা!! আমাদের হারিয়ে যাওয়া মেয়ে শিখা!" দু'জনে অবাক হয়ে মারিয়ার গালে হাত বুলাতে লাগল। শিখা তার বাবা-মাকে চিনতে পারেনি ঠিক, তবুও রক্তের টান বড় টান! জড়িয়ে ধরল শিখা তার বাবা-মাকে। অজান্তেই চোখ বেয়ে তার অশ্রু নেমে এল। শিহাব তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল এই পুনর্মিলন।
আর সময় নেই হাতে। ইভার আত্মাকে বাঁচাতে হবে। শিহাব ভাবতে লাগল কাছাকাছি কোন তান্ত্রিককে সাদিয়া হাত করতে পারে। কয়েকজন তান্ত্রিকের লিস্ট করল শিহাব। প্রথম তিনজনের সাথে সাদিয়া যোগাযোগ করেনি খুঁজ নিয়ে জানা গেল। চতুর্থ তান্ত্রিকের আস্তানায় গেল শিহাব এবং মারিয়া। চুপিচুপি দেয়াল টপকে ঢুকল তারা। দেখল তান্ত্রিক মশায় এর সামনে বৃত্তাকারে অনেক গুলো মোমবাতি জ্বলছে। তান্ত্রিক মশায় কি যেন ধ্যান করতেছে। তার একটু দূরে বসে শয়তানি হাসি হাসছে সাদিয়া।
শক্তি দিয়ে এই মুহূর্তে কাজ হবেনা। যা করার কৌশলে করতে হবে। আসার সময় মারিয়া ইভার মতো করে সেজেছিল। সাদা শাড়ি আর খোলা চুল। মারিয়া চোখ দুটো বড় বড় করে ধীরে ধীরে এগোতে লাগল তান্ত্রিকের দিকে।
মারিয়াকে দেখে তান্ত্রিক এবং সাদিয়া দু'জনেই একসাথে চমকে উঠল। তারা ভাবল ইভা দুইটা হয়ে গেল। একটা বন্দী, আরেকটা মুক্ত। তান্ত্রিকের দিকে যতো এগোচ্ছে মারিয়া, তান্ত্রিক ততো ভয় পাচ্ছে। তার জানা যতো তন্ত্র মন্ত্র আছে সব পড়তে লাগল আত্মা বশ করার জন্য। কিন্তু মারিয়া তো কোন আত্মা না, সে মানুষ। তাই তান্ত্রিকের বিদ্যা কাজে আসলনা। এদিকে তান্ত্রিক মারিয়াকে বশ করতে ব্যস্ত, আর অন্যদিকে পেছন থেকে চুপিচুপি এল শিহাব। সজোরে আঘাত করল সে তান্ত্রিকের মাথায়। তান্ত্রিক জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ল। শিহাব এবং মারিয়া দুজনে মিলে তান্ত্রিককে দড়ি দিয়ে শক্ত করে বাঁধল। তারপর শিহাব সাদিয়ার মুখোমুখি দাঁড়াল। "ঠাস" করে একটা চড় বসাল সে সাদিয়ার গালে। বলল:- আর কত নিচে নামবে তুমি?? আমি তো তোমার জীবন থেকে সরে গেছি, তবে তুমি কেন এসব করছ?
সাদিয়া বলল:- তুমি আর ইভার কারণে আমি আমার বাবাকে হারিয়েছি, আমার স্বামীকে হারিয়েছি......
--ওরা ওদের পাপের শাস্তি পেয়েছে। ইভা ভালো মানুষের ক্ষতি করেনা। তোমাকেও মেরে ফেলত, শুধু আমি ভালবাসতাম বলে এখনও বেঁচে আছ তুমি। শুধু আমি ভালোবাসতাম বলে তোমাকে ইভা বিপদ থেকে রক্ষা করেছিল সেদিন। অথচ এর জন্য তুমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ না। ছি! এতো নিচু মনের মেয়ে তুমি..... এখন তোমাকে শুধু ঘৃণা করি আমি।"
শিহাবের শেষ কথাটা সাদিয়ার কানে কয়েকবার ঝঙ্কার তুলল। ভাবল, কি করে এতো বদলে গেল শিহাব। যে তাকে এতো ভালোবাসত, সে আজ তাকে ঘৃণা করে! করবেই তো! ভালোবাসার মতো কি করেছে সাদিয়া। অর্থের মোহে পড়ে সে শিহাবকে ধোকা দিয়েছিল, এইটাই তার পাওনা ছিল।
নিচু হয়ে থাকল সাদিয়া। ঐদিকে তান্ত্রিকের জ্ঞান ফিরল। সাদিয়া তান্ত্রিককে বলল: তান্ত্রিক মশায়, ইভার আত্মাকে বশমুক্ত করে দেন। আমি আর চাইনা এই রেষারেষি।
শিহাব তান্ত্রিকের বাধন খুলে দিল, তারপর তিনি ইভার আত্মাকে বশমুক্ত করলেন। মুক্ত হয়ে ইভা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল শিহাবের দিকে। খুব ইচ্ছে করছিল তার শিহাবকে একবার জড়িয়ে ধরতে। পাশে মারিয়াকে দেখে আর জড়িয়ে ধরলনা। কয়েকদিন পর ওর সাথেই তো শিহাবের বিয়ে হতে যাচ্ছে।
শিহাব মারিয়াকে দেখিয়ে সাদিয়াকে বলল: সাদিয়া, ও মারিয়া। ইভার যমজ বোন। কয়েকদিন পর ওর সাথে আমার বিয়ে হবে।"
বোবার মতো তাকিয়ে থাকল সাদিয়া শিহাবের দিকে। কিছুই বলতে পারলনা। শিহাব মারিয়াকে নিয়ে চলে যেতে লাগল, তাদের পাশাপাশি হাটছে অশরীরী ইভা। কিছুদূর গিয়ে ঘুরে তাকাল শিহাব। সাদিয়া তখনও মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দিয়ে তার অশ্রু ঝরছে..........
____________________
.
__________বিপদ__________
গভীর রাত। ইভা বসে আছে জানলার পাশে। দৃষ্টি তার জানলার বাইরে। আর শিহাব বেডে শুয়ে আছে। সে ডাক দিল:- ইভা......দূরে কেন???"
দৃষ্টি ফিরিয়ে ইভা তাকাল সরাসরি শিহাবের বুকের দিকে। চোখদুটো তার অশ্রুসিক্ত। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল সে, তারপর একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল: দূরেই তো থাকার কথা আমার। কাছে এসে কি করব? ঐ বুক তো মারিয়ার সম্পদ। আমি তো অশরীরী। আর অশরীরীদের তো কোন সম্পদ থাকেনা।" বড় করুণ শুনাল ইভার কথাগুলো। শিহাব বিছানা থেকে নেমে ইভাকে কাছে টেনে নিল। তারপর বুকের সাথে চেপে ধরে শুয়ে পড়ল। ইভাও সব অভিমান ভুলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল শিহাবকে। তারপর ডুকরে কেঁদে উঠল। অনেক্ষণ কান্না করল সে শিহাবকে জড়িয়ে ধরে। তারপর ফুঁপাতে ফুঁপাতে বলল:- মানুষের জীবনটা বড় অদ্ভুত, তাইনা শিহাব? সত্যিকারের ভালোবাসাগুলো আড়ালে থেকে যায় কেন?? কেন মানুষ সত্যিকারের ভালোবাসা দেখতে পাইনা?? আমার বড় আফসোস হয় জান, বেঁচে থাকতে তোমায় কেন পেলামনা?? কেনইবা অশরীরী হয়ে তোমার ভালোবাসা পেতে হল??" ইভার কান্নার বেগ বেড়ে গেল।
শিহাব বলল:- ইভা, তুমি এমন করলে কিন্তু আমি মারিয়াকে বিয়ে করবনা।"
শিহাবের এ কথায় ইভা কান্না থামাল। দু'চোখ মুছে ফেলল। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল সে শিহাবের মুখের দিকে। আলতো করে একটা চুমু খেল শিহাবের কপালে। তারপর বলল: আমার সাথে একটু বাইরে যাবে? খুব ইচ্ছে করতেছে তোমার কাঁধে মাথা রেখে, তোমাকে দু'হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে চাঁদের আলোতে হাটতে।
শিহাব ইভাকে নিয়ে বাইরে এল। ইভা দু'হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল শিহাবকে, আর মাথা রাখল তার কাঁধে। তারপর দু'জন চুপচাপ হাটতে লাগল। অনেক্ষণ নিরবতায় কাটল সময়। নিরবতা ভেঙে হঠাৎ শিহাব বলল:- ইভা আমি মরতে চাই। আমি আর পারছিনা। আমি তোমার কাছেই যেতে চাই।
থমকে দাঁড়াল ইভা। শিহাবকে ছেড়ে দিয়ে বলল:- কি বললা তুমি? তুমি কি চাও আমি এক্ষুণি চলে যাই?
--নাহহহ,, চাইনা.....
--তাহলে আর মরার কথা বলবেনা।
--কিন্তু, আমি তো আর পারছিনা।
--ঠিক আছে, আমি আর কান্না করবনা। এইবার তো হল। মারিয়াকে বিয়ে করে তুমি সুখে জীবন কাটাবে। আর তুমি ওর মাঝেই আমাকে খুঁজে নিও। জান, ছোট থাকতে মারিয়া আমার জিনিসগুলোর জন্য আবদার করত, দেখনা- বড় হয়ে আমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটাও সে পেতে যাচ্ছে। বড় ভাগ্যবতী মেয়ে সে। আমিই কেবল পোড়াকপালি। শিহাব......
--হুমমম......
--আমাকে একটু কোলে নিবা প্লিজ?? খুব ইচ্ছে করতেছে।
শিহাব ইভাকে পাঁজাকোলা করে নিল। ইভা শিহাবের গলা জড়িয়ে ধরল, আর একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল শিহাবের মুখের দিকে। শিহাব ইভাকে কোলে নিয়ে হাটতেছে। হাটতে হাটতে গ্রামের শেষ মাথায় চলে এসেছে। ভালোই লাগছে তার। পরস্পরের দিকে তাকিয়ে আছে ওরা। হঠাৎ ইভা চমকে উঠে বলল:- শিহাব, আমাকে নামিয়ে দাও তাড়াতাড়ি।
শিহাব ইভাকে নামিয়ে দিয়ে বলল:- কি হয়েছে শিহাব??
--শিহাব, আমি এখানে চারটা অশরীরী আত্মার অস্তিত্ব অনুভব করতেছি।
--মানে?
--সৈয়দ তারেকের বাড়িতে চারটা অশরীরী আত্মা। ওরা আত্মা হয়ে ফিরে এসেছে শিহাব।
--এখন কি হবে?
--ওদেরকে তাড়ানো সহজ না। তুমি সাদিয়ার সাথে যোগাযোগ করে সেই তান্ত্রিকের কাছে যেতে বল তাকে। এখন চলে যাও তুমি এখান থেকে। আমি যাচ্ছি সৈয়দ তারেকের বাড়ি।
ইভা সৈয়দ বাড়ির দু'তলায় গেল। দেখল, সৈয়দ তারেক, দুইজন কাজের লোক আর দারোয়ান এর আত্মা, চারটা আত্মা মিলে মদ পান করতেছে। গ্রামের যুবতী মেয়েগুলো ধরে এনে তারা আটকে রেখেছে, তাদের তৃপ্তি মেটানোর জন্য। মেয়েগুলোকে বাঁচাতে হবে, ইভা সিদ্ধান্ত নিল। সে দেরি করলনা। সবগুলো মেয়েকে একসাথে তুলে নিয়ে জানলা ভেঙে লাফ দিল। তারপর মেয়েগুলোকে ছেড়ে দিল। কিন্তু নিজে আটকা পড়ে গেল ঐ চারজনের হাতে। ঐ চার আত্মা ইভাকে ধরে নিয়ে গেল সেই বাড়িতে। ইভা তাদের শত্রু। তার জন্যেই ওদেরকে মরতে হয়েছে। এইবার তারা ইভাকে দিয়েই সব তৃপ্তি মেটাবে। ইভা অনেক্ষণ লড়াই করল ওদের সাথে। কিন্তু চারজনের বিরুদ্ধে সে একা কতক্ষণ আর লড়াই করবে। ইভার উপর ঝাপিয়ে পড়ল চারজন একসাথে। ইভার শাড়িটা তারা টেনে ছিড়ে ফেলতে যাবে, ঠিক তখনই চারটা আত্মা একসাথে গগনবিদারী গর্জন করে উঠল। ইভা মুক্ত হল। আর ঐ চার আত্মা অদৃশ্য হয়ে গেল। ইভা বুঝল, কেউ ঐ চার আত্মাকে ব্ল্যাক ম্যাজিক করে নিয়ে গেছে। এ নিশ্চয়ই ঐ তান্ত্রিককের কাজ। শেষ পর্যন্ত সাদিয়া তাকে বাঁচাতে সাহায্য করেছে। মনে মনে কৃতজ্ঞ হল ইভা সাদিয়ার উপর।
ইভা সৈয়দ তারেকের পুরো বাড়িটা মুহূর্তেই ভেঙে দিল। তারপর শিহাবের কাছে ফিরে এল। শিহাব এতক্ষণ চিন্তায় অস্থির ছিল। ভাগ্যিস সাদিয়াকে কল করে বুঝাতে পেরেছে। সে তান্ত্রিকের সাথে যোগাযোগ করেছে, নইতো ইভার উপর দিয়ে অনেক বড় বিপদ বয়ে যেত। ইভাকে পেয়ে শিহাব যেন প্রাণ ফিরে পেল বুকে। দৌড়ে গিয়ে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরল তারা। ইভা শিহাবের নাম ধরে ধরে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল......
___________________
.
______আবারও বিভীষিকা_____
এলাকার প্রভাবশালী লোক রাজ চৌধুরী। বিয়ের বয়স পার হয়ে গেছে বলে ভেবেছিলেন আর কখনও বিয়ে করবেননা। কিন্তু হঠাৎ একটা মেয়েকে দেখে উনার মানসিকতা পাল্টে যায়। বিয়ে তিনি করবেন, এবং এই মেয়েকেই করবেন। অটুট সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি।
ঐ মেয়ের সব খোঁজখবর নিলেন তিনি। নাম মারিয়া। বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে, বংশ মর্যাদাও তাদের কম না। কিন্তু শুনেছেন শিহাব নামে একটা ছেলের সাথে তার বিয়ে হতে যাচ্ছে। এটা তিনি মেনে নিলেননা। যেভাবেই হোক মারিয়াকে তার চাই।
তিনি গ্রামে তার লোকদের দিয়ে প্রচার করে দিলেন শিহাব পাগল হয়ে গেছে, তাকে একা একা কথা বলতে দেখা যায়, অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গি করতে দেখা যায়। গ্রামের অনেকেই দেখেছে তাকে পাগলামি করতে।
শিহাব বাড়ি থেকে বের হতে পারেনা, ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা তার পিছু নেয়, তার উপর পাথর ছুড়ে। এদেরকেও রাজ চৌধুরী লেলিয়ে দিয়েছেন তার পেছনে।
শিহাব ঘরে বসে আছে। একটু পর কয়েকজন লোক এল মানসিক হাসপাতাল থেকে। শিহাবকে জোর করে ধরে নিয়ে গেল পাগল বলে। রাজ চৌধুরী মানসিক ডাক্তারকে অনেক টাকা দিল, যাতে শিহাবকে পুরোপুরি পাগল বানায়।
এদিকে মারিয়াকে তুলে নিয়ে গেলেন তিনি। একটা রুমে আটকে রাখলেন তাকে। রাজ চৌধুরী ডুকলেন সেই রুমে। মারিয়ার সামনে গিয়ে বসলেন। মারিয়া মুখ ফিরিয়ে নিল ঘৃণায়।
রাজ চৌধুরী পরোয়া না করে বললেন: মারিয়া, আই ওয়ান্ট টু ম্যারি ইউ.....
মারিয়া বলল: আঙুর ফল টক মনে করে আমার জীবন থেকে সরে যান.....
--দেখ মারিয়া, আমি তোমাকে কখনো কষ্টে রাখবনা, আমাকে বিয়ে করলে তুমি সুখে থাকবে।
--আমার সুখের ঠিকানা আমি পেয়ে গেছি।
--মারিয়া...মারিয়া...মারিয়া...." উত্তেজিত হয়ে উঠলেন রাজ চৌধুরী। "মারিয়া, তোমার সেই সুখের ঠিকানা আমি নষ্ট করে দেব। শিহাব পুরোপুরি পাগল হয়ে যাবে। সেই ব্যবস্থা করে রেখেছি।
--শিহাবের একটু ক্ষতি যে করবে সে বাঁচতে পারবেনা। তার উপর রক্ষাকবচ হিসেবে আছে অশরীরী ছায়া।
--অশরীরী!!
--হুমমম.....কেউ বাঁচতে পারবেনা তোমরা।"
মারিয়ার কথা শুনে রাজ চৌধুরী "হা হা হা" করে হেসে উঠলেন। বললেন: এসব আজগুবি কথা রাখ। মনে হচ্ছে শিহাবের মতো তুমিও মানসিক সমস্যায় ভুগছ। যাইহোক, একটু ভাব, আমাকে বিয়ে করবে কিনা। আমি আবার আসব।" বলতে বলতে রাজ চৌধুরী বের হয়ে গেলেন রুম থেকে।
মারিয়া চিন্তা করতে লাগল এখন সে কি করবে। এখন একমাত্র ইভা ছাড়া আর কেউ বাঁচাতে পারবেনা তাকে আর শিহাবকে।
রাতে আবারও রাজ চৌধুরী এলেন। মারিয়ার রুমে ঢুকতে যাবে হঠাৎ থমকে দাঁড়ালেন। মারিয়া ড্রেস বদলাল কিভাবে?? এখানে মেয়েদের পোশাক নেই। অথচ ড্রেস পাল্টিয়ে একটা সাদা শাড়ি পড়ে আছে মারিয়া। ব্যাপারটাকে এতটা গুরুত্ব না দিয়ে রাজ চৌধুরী রুমে ঢুকলেন। মারিয়ার সামনে বসে সরাসরি মূল কথায় চলে গেলেন: মারিয়া, ভেবে কিছু পাইছ? কি? বিয়ে করবে তো আমাকে?
--না।
--শেষবারের মতো বলছি, রাজি হও। নইলে কিন্তু ইজ্জত হারাবে।
--কখনো রাজি হবনা। ইজ্জত নিয়ে দেখা......
মারিয়ার কথাটি রাজ চৌধুরীর প্রেস্টিজে আঘাত করল। তিনি উঠে মারিয়ার উপর ঝাপয়ে পড়লেন হায়েনার মতো। বিয়ে করতে না পারলে ইজ্জতও রাখবেনা তিনি মারিয়ার। মারিয়ার শাড়ির আঁচল ধরে টান দেবার মুহূর্তে রাজ চৌধুরী চমকে উঠলেন। ভয়ে পিছিয়ে এলেন। মারিয়া হঠাৎ এত ভয়ংকর রুপ ধারণ করল কি করে?
ভয়ে ভয়ে বললেন: কে? কে তুমি?
--ইভা....অশরীরী ইভা"
রাজ চৌধুরী ভয়ে দৌড় দিলেন দরজার দিকে। দেখলেন আসল মারিয়া দরজা আটকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মারিয়া রাজ চৌধুরীকে ধাক্কা দিল ইভার দিকে। ইভা তখন প্রতিশোধের নেশায় উত্তেজিত হয়ে আছে। দেরি করলনা সে। তার হাতের লম্বা লম্বা নখগুলো আগে থেকেই বেরিয়ে আছে শত্রুর পেট ভেদ করার জন্য। সে লম্বা লম্বা নখগুলো রাজ চৌধুরীর পেটে ঢুকিয়ে দিল। মারিয়া চোখ বন্ধ করে ফেলল। দেখতে পারলনা সে এই বীভৎস দৃশ্য। যখন চোখ খুলল সে, দেখল রাজ চৌধুরীর লাশ নিচে পড়ে আছে। নাড়িভুঁড়ি সব বের হয়ে আছে। আর তার পাশে বিজয়িনীর বেশে দাঁড়িয়ে আছে ইভা। এই মুহূর্তে তার প্রথম কাজ শিহাবকে বাঁচানো।
মেন্টাল হসপিটাল, পাবনা। একটা কেবিনে শুয়ে আছে শিহাব। একটু আগে জ্ঞান ফিরেছে তার। ইনজেকশন দিয়ে তাকে অজ্ঞান করে রাখা হয়েছিল। জ্ঞান ফেরার পর সে দেখল তার হাত পা বাধা। একটু পর ডাক্তার শাহরিয়ার এলেন কয়েকজনকে নিয়ে তার কর্তব্য পালন করতে। রাজ চৌধুরীর কাছ থেকে যে টাকা গুলো নিয়েছেন, তার বিনিময়ে এই কাজটা তো করে দিতে হবে। ডাক্তার শাহারিয়ার তার সাথে যারা এল, তাদেরকে আদেশ করল শিহাবের হাত পা ভাল করে ধরে রাখতে। তারা তাই করল। শিহাব নড়াচড়া করতে পারলনা, শুধু দেখল ডাক্তারের হাতে একটা ইনজেকশন। শিহাব বুঝতে পারল, এটা তাকে পাগল করার জন্য। নইলে এভাবে তাকে ধরে রাখতনা।
ইনজেকশনটা দেওয়ার জন্য ডাক্তার শাহারিয়ার দু'হাত এগিয়ে নিয়ে গেলেন শিহাবের কোমরের দিকে। হঠাৎ বিল্ডিংটা কেঁপে উঠল। ভয়ংকর নারীকণ্ঠে একটা আওয়াজ শুনা গেল: ডাক্তার.......
ডাক্তার শাহারিয়ার ভয় পেয়ে হাতটা সরিয়ে নিলেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ডাক্তার আবারও ইনজেকশন দিতে গেলেন, আবারও কেঁপে উঠল বিল্ডিং। আবারও ভয়ংকর কণ্ঠে শুনা গেল: ডাক্তার.......
ডাক্তার শাহারিয়ার আবারও ভয়ে পিছিয়ে এলেন। চিৎকার করে উঠলেন তিনি: কি হচ্ছে এসব? কে "ডাক্তার ডাক্তার" বলে গর্জন করে উঠে হঠাৎ?
ডাক্তারের সঙ্গীরা শিহাবকে ছেড়ে দিয়ে বলল: কিছুই তো বুঝতে পারছিনা স্যার।"
হঠাৎ কেবিনের আলো নিভে গেল। দরজা আপনাআপনি বন্ধ হয়ে গেল। কেবিনের ভেতর বয়ে চলেছে এক দমকা হাওয়া। একটা আলোর ঝিলিক ঘূর্ণিপাকের মতো ঘুরতে লাগল ডাক্তার শাহারিয়ার এর চারপাশে। সেই আলোর ঝিলিকের ভেতর ধীরে ধীরে উদয় হল একটা মেয়ে। পরনে তার সাদা শাড়ি, চুলগুলো উড়তেছে বাতাসে। দেখে শিহাবের মুখে হঠাৎ হাসি ফুটে উঠল। অস্ফুটে একটা শব্দ করল সে: ইভা......
_____________
.
ডাক্তারের সঙ্গীরা ভয়ে কাঁপতে লাগল। ইভা তাদের সবাইকে একে একে হত্যা করল। এবার ডাক্তার এর পালা। ইভা তার সামনে এসে দাঁড়াল। ডাক্তার পিছিয়ে এল। ইভা তার ভয়ংকর রূপ নিয়ে গর্জন করে উঠল একটা। তারপর ডাক্তারের প্রতিটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ শরীর থেকে আলাদা করে ফেলল। ঘুষের টাকা কোথায় হজম হয়, কীভাবে হজম হয়, আজ ডাক্তারের পেট চিরে দেখবে সে। ইভা ডাক্তারের পেট চিরে ভেতর থেকে সব বের করে ফেলেল। একটু পর কেবিনটা কয়েকটা লাশের স্তুপে পরিণত হল.......
__________পরিশিষ্ট__________
শিহাবের রুমে ইভা শুয়ে আছে শিহাবের বুকে। অনেক্ষণ নিরবতায় কাটল সময়। হঠাৎ নিরবতা ভেঙে ইভা বলল: শিহাব......আমি চলে গেলে, মনে পড়বে তো আমাকে?
--চলে যাবে কেন?
--চলে তো যেতেই হবে.....
--তুমি চলে গেলে আমি থাকব কি করে?
--মারিয়া তো আছে। দুইদিন পর তোমার আর মারিয়ার বিয়ে। সুখেই থাকবে তোমরা.....
--তুমি কি সারাজীবন থাকবেনা?
--না শিহাব, চলে তো যেতেই হবে। আমি তো তোমার ভালোবাসা না পেয়ে অতৃপ্তি হৃদয় নিয়ে মরে গেছি, তাই তৃপ্তি পেতে ফিরে এসেছি। এখন তো তোমার ভালোবাসা পেয়েছি, আমার হৃদয়টা তো তৃপ্তি পেয়েছে, এখন তো আর থাকা যাবেনা। তবে, তোমাকে ছেড়ে যেতে খুব কষ্ট হবে। ভালোবাসি তো তোমায়।" ইভার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। শিহাব ইভাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল: তুমি চলে গেলে আমিও বেশিদিন বাঁচতে পারবনা ইভা.....
--ও কথা বলনা শিহাব। মৃত্যুর যন্ত্রণা কত আমি জানি। আমি চাইনা এত তাড়াতাড়ি তুমি সেই যন্ত্রণা পাও। আমি চাই তুমি অনেক বছর বেঁচে থাক। মারিয়াকে নিয়ে সুখে সংসার কর।
--যে জীবনে তুমি থাকবেনা, সে জীবনে সুখ আমি কল্পনাও করতে পারিনা......
--আমি তো মৃত শিহাব। আত্মা হয়ে আর কতদিন থাকব। সময় তো ফুরিয়ে গেছে আমার। আমার কি কষ্ট হয়না তোমাকে ছেড়ে যেতে?" ফুঁপিয়ে উঠল ইভা। শিহাবের চোখ বেয়েও জল গড়িয়ে পড়ল। দুজন দু'জনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সারারাতটা কেঁদে পার করে দিল।
সাদিয়ার রুমে সাদিয়া একা বসে আছে। জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে সে। বাইরের প্রকৃতি তার চোখ লাগছেনা। সে ভাবছে অন্য কথা। আজ শিহাবের বিয়ে। অথচ চাইলেই সে শিহাবের বউ হতে পারত। ফেলে আসা মুহূর্তগুলো সাদিয়ার চোখের সামনে ভেসে উঠল। কত্ত পাগল ছিল শিহাব তার জন্য। একদিন তাকে দেখতে না পেলে শিহাব পাগল হয়ে যেত যেন। সেই শিহাব আজ মারিয়াকে আপন করে নেভে। সাদিয়ার চোখদুটো অশ্রুতে ভরে গেল। একটু পর পর চোখ বেয়ে টুপ টুপ করে অশ্রু ঝরতে লাগল তার। মিথ্যে মিথ্যে হলেও তো সে শিহাবকে ভালোবেসেছিল। এখন বুঝতেছে সে তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা কোথায়? অর্থের মোহ তাকে অন্ধ করে দিয়েছিল। অর্থ যে প্রকৃত সুখ দিতে পারেনা, হাড়ে হাড়ে ঠের পাচ্ছে সাদিয়া।
আগের দিন শিহাব ফোন করেছিল সাদিয়াকে, বিয়েতে যাওয়ার জন্য। সাদিয়া হ্যা/না কিচ্ছু বলেনি। ফোনে শিহাবের কণ্ঠ শুনে নিরবে শুধু কেঁদেছিল। এই কণ্ঠটা তাকে কতবার যে "ভালোবাসি" কথাটা বলেছিল, সেই একই কণ্ঠ তাকে বিয়ের দাওয়াত দিল। ভাবতেই অবাক লাগে। জীবন কীভাবে পাল্টে যায়! একটি ভুল! হ্যা, শুধুমাত্র একটি ভুলই সাদিয়ার জীবনটাকে আজ তছনছ করে দিয়েছে। না পেয়েছে সুখ সে, না পেয়েছে ভালবাসা। যাবেনা সে শিহাবের বিয়েতে। নিজের চোখে ভালোবাসার মানুষটিকে অন্য কারো হয়ে যেতে দেখতে পারবেনা সে। এখন তার শুধু কান্না করার সময়। আফসোস! কেন বুঝলনা সে আগে! হয়তো এতক্ষণে শিহাব আর মারিয়ার বিয়ে হয়ে গেছে। সমানগতিতে অশ্রু ঝরতে লাগল সাদিয়ার দুই চোখ বেয়ে.......
একটু পর শিহাব বাসর ঘরে ঢুকবে। মুখটা মলিন তার। মারিয়া হয়তো বাসরঘরে অপেক্ষা করতেছে তার জন্য। ইভার সাথে দেখা না হলে সে বাসর ঘরে ঢুকবেনা। দুইদিন আগে দেখা হয়েছিল ইভার সাথে। এরপর আর দেখা হয়নি। ইভা কি তবে চলে গেছে? নাহহ, এটা হতে পারেনা। ইভার সাথে দেখা না হলে সে বাসর ঘরেই ঢুকবেনা। হঠাৎ কেউ যেন তার কানে কানে বলল: শিহাব, একটু বাইরে আসবে?
শিহাব আনন্দে লাফিয়ে উঠল। যেন হাজার বছর পর আজ সে প্রেয়সীকে দেখতে পাবে। চারদিকে তাকাল শিহাব। অতিথিরা সব চলে গেছে। শিহাব চুপিচুপি বের হল। বাইরে তখন একটা সুনসান বাতাস বইতেছিলি। বাতাস যেন একটা করুণ সুরে গান গাইছে। বাতাসও যেন বুঝতে পেরেছে আজ তাদের বিদায় হবে।
বাইরে এসে শিহাব দেখতে পেল ইভা দাঁড়িয়ে আছে। মুখটা তার কালো। শিহাবকে দেখে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরল। অনেক্ষণ কাঁদল দু'জন। তারপর ইভা বলল: শিহাব, শেষবারের মতো আমার হাত ধরে একটু হাটবে কি প্লিজ?
শিহাব ইভার হাতটা ধরল। শীতল হাত তার। হাটতে লাগল দু'জন পাশাপাশি। ইভা বলল: খুব ইচ্ছে করতেছে শিহাব তোমার কোলে উঠতে। শেষবারের মতো একটু আমাকে কোলে নিয়ে হাটবে প্লিজ।"
শিহাব ইভাকে কোলে তুলে নিল। তারপর হাটতে হাটতে বলল: আর কি কি ইচ্ছে করতেছে তোমার? সব ইচ্ছে পূরণ করব।
--তোমার বউ হতে চেয়েছিলাম বেঁচে থাকতে। আমাকে কি একবার মিথ্যে মিথ্যে করে হলেও বউ ডাকবে?
শিহাব বলল: বউ.....
শিহাবের মুখে "বউ" কথাটি শুনে ইভা ডুকরে কেঁদে উঠল। শিহাবের গলাটা আগে থেকেই জড়িয়ে ধরে আছে সে। এবার তার বুকে মুখটা চেপে ধরে জোরে জোরে কাঁদতে লাগল।
শিহাব করুণ কণ্ঠে বলল: মারিয়াকে বিয়ে করেছি, কিন্তু আমি মনে করব তুমিই আমার বউ। মনে করব আমি তোমার সাথেই সংসার করতেছি। ইভা আমি কখনও ভুলতে পারবনা তোমাকে।"
ইভার কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেল। কাঁদতে কাঁদতে বলল: কেন এমন হল আমার জীবনটা? কেন? কেন? কেন? আমি তো এটা চাইনি.... আমি শুধু চেয়েছিলাম একটু ভালোবাসা। কেন আমি পাইনি?"
--আমি দুঃখিত ইভা। আমি তখন বুঝতে পারিনি। আমার কারণেই আজ তুমি পৃথিবীতে বেঁচে নেই।"
ইভা নিজেকে সামনে নিল। দুইচোখ মুছে বলল: শিহাব, তুমি চলে যাও। মারিয়া হয়তো অপেক্ষা করতেছে।
 
--কিন্তু তোমাকে ছেড়ে তো যেতে ইচ্ছে করতেছেনা।
--যেতে তো হবে শিহাব। আমিও চলে যাব। আর হয়তো দেখা হবেনা।" ইভার কণ্ঠটা খুব বেশি করুণ শুনাল। শেষবারের মতো শিহাবকে জড়িয়ে ধরে আবারও কাঁদতে লাগল। তারপর বলল: আমাকে নামিয়ে দাও শিহাব.....
শিহাব ইভাকে নামিয়ে দিল। ইভা বলল: মারিয়াকে কখনও কষ্ট দিওনা শিহাব। আর নিজের শরীরের যত্ন নিও।
 
শিহাব কোন কথা বলতে পারলনা। যেন বোবা হয়ে গেছে। কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। এই মুহূর্তে তার শুধু কান্না করতে ইচ্ছে হচ্ছে।
ইভা আবরও করুণ কণ্ঠে বলল: বিদায় শিহাব, ভালো থেকো।
শিহাব নির্বাক হয়ে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইল। ইভা চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। বাতাসে তার সাদা শাড়ির আঁচল উড়ছে। আর ধীরে ধীরে দূরে চলে যেতে লাগল ইভা। শিহাব অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছে সেদিকে। একসময় অদৃশ্য হয়ে গেল ইভার অশরীরী আত্মা।
#সমাপ্ত
 

 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

===

You may also like

===