===

Amar Ichhe Korena | আমার ইচ্ছে করেনা | Mosharraf Karim, Shokh | Eid Natok | Maasranga TV

Amar Ichhe Korena | আমার ইচ্ছে করেনা | Mosharraf Karim, Shokh | Eid Natok | Maasranga TV

 
বড় চাচীর বাচ্চা হবে দীর্ঘ নয় বছর পর। খুশিতে আত্মহারা হয়ে বড় চাচা এক ছাগল জবাই দিয়ে ফেলেছেন। সেই ছাগলের মাংস রান্না করে চালের আঠার রুটি করে ইউনিয়নের যত এতিম মিসকিন আছে সবাইকে দাওয়াত করে তিনি খাইয়েছেন। খাওয়ার শেষে ওদের প্রত্যেকের হাতে পঞ্চাশ টাকা করে দিয়ে বলেছেন,'আমার স্ত্রীর সন্তান হবে আমাদের বিয়ের নয় বছর পর। এরচেয়ে খুশির সংবাদ আমার কাছে আর কিছু নাই।তোমরা আমার স্ত্রীর জন্য দোয়া করবা। আমার সন্তান যদি সহি সালামতে পৃথিবীর আলো দেখে তবে তোমাদেরকে আমি গরু জবাই দিয়ে খাওয়াবো ইনশাআল্লা।'
 
এতিম আর মিসকিনেরা সেদিন খুশি মনে বাড়ি থেকে দাওয়াত খেয়ে পকেটে টাকা নিয়ে নিজেদের বাড়ি বাড়ি চলে গেল। যাওয়ার সময় শুকরিয়ায় চোখে জল এনে দোয়া করলো,'মাবূদ গো, তোমার এই বান্দা যে আমার মতো নাদান এক এতিমরে এতো বড় সম্মান দিয়ে তার বাড়িতে এনে দাওয়াত খাওয়ালো আবার খুশি হয়ে হাতে টাকাও দিলো তার মনের আশা তুমি পূরণ করো। দয়াল মাবূদ গো, তোমার ইব্রাহিম নবীর অভ্যাস ছিল ফকির মিসকিনরে সম্মান করে দাওয়াত করে খাওয়ানো, তোমার এই বান্দার অভ্যাসও তেমন।সে কোন ধনী মানুষ খুঁজে দাওয়াত করেনি। আমার মতন নাদানরে খুঁজে বের করে সম্মান দিয়েছে।ও মাবূদ, তোমার যে বান্দা এই এতিমরে সম্মান দিলো তারে তুমি নিজে সম্মান দিও।'
এভাবে প্রত্যেকজন এতিম আর মিসকিনেরা দোয়া করলো।কেউ শুনিয়ে,কেউ চুপিচুপি।
 
বড় চাচাকে সেদিন দেখে মনে হলো জগতে তার মতো এমন সুখি মানুষ আর একটিও নেই। সন্ধ্যা বেলায় বড় চাচী যখন জলভরা চোখে জায়নামাজে বসে আল্লাহর মহিমা প্রকাশ করছিলো তখন বড় চাচা তার কাছে এসে ত্রিশ হাজার টাকায় গড়ানো সোনার চেইনটা বড় চাচীর গলায় পড়িয়ে দিয়ে বললেন,' এ আমার উপহার। আল্লাহ তোমায় বিবি হাজেরার মতো কবুল করুন।'
বড় চাচী তখন দোয়া শেষ করে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন।বড় চাচা চাচীকে জড়িয়ে ধরে বললেন,'শান্ত হও।'
 
চাচী শান্ত হলেন না।প্রাণ ভরে অনেক্ষণ কাঁদার পর বড় চাচাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,'যে জগতে কোন মেয়ে মানুষের সন্তান না হলে তাকে নিত্যদিন তার স্বামীর গঞ্জনা সয়তে হয়,কত অবহেলা কত অত্যাচার নেমে আসে সেই মেয়েটির উপর,আর আপনি সেখানে আমায় শুধু সান্ত্বনা আর অনুপ্রেরণাই দিয়ে গেছেন বছরের পর বছর। কোন কারণে যেন আমার একটুও মন খারাপ না হয় সেই চেষ্টায় করে গেছেন সব সময়। আমার কোন কাজে অসন্তোষ আসে এমন কিছুই করেননি কোনদিন আপনি।ও স্বামী, আল্লাহ আপনাকে এর উত্তম প্রতিদান দান করুন।'
 
বড় চাচা মৃদু হেসে বড় চাচীকে বুকে টেনে নিয়ে বললেন,'রাবেয়া,আমরা যদি আজীবন সন্তানহীন থাকতাম তবুও তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা এক বিন্দুও কমতো না কোনদিন।'
বড় চাচী নিজের চোখের জল আঁচলে মুছে বললেন,'আল্লাহ আপনার এই ভালোবাসা আরো বৃদ্ধি করুন।'
বড় চাচা বললেন,'আমীন।'
 
তারপর দিন যত যেতে লাগলো বড় চাচীর প্রতি বড় চাচার যত্ন নেয়া তত বাড়তে লাগলো। এমনকি ঘরের রান্না- বান্না থেকে শুরু করে আর যত গৃহস্থালির কাজ আছে সবকিছুই চাচা নিজের হাতে করতেন। মানুষ এতে অট্টহাসি হাসতো।বলতো,'এমন বেকুব জীবনে দেখিনি।'
চাচা এইসব কথা শুনে মোটেও মন খারাপ করতেন না। তিনি ধৈর্য্য ধারণ করে নিজেকেই নিজে বলতেন,'শোনো মতিন, নিজের ঘরের কাজ কেউ করলে সে ছোট হয় না।আর নিজের স্ত্রীকে ভালোবাসলেও কেউ বেকুব হয় না। বেকুব তো তারাই যারা নিজের ঘর সংসারের কাজ আর স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসাকে ভাবে বেকুবের কাজ!'
 
বড় চাচী একদিন রাতে চাচাকে বললেন,'আচ্ছা, আমাদের সন্তান যদি মেয়ে হয় তবে তুমি কী খুশি হবে?'
বড় চাচা আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠে বললেন,'আমার কী সে কপাল আছে! রাবেয়া, সত্যি সত্যি আমি যদি কোন কন্যা সন্তানের বাবা হতে পারতাম তবে আমি নিজেকে ঘোষণা করে দিতাম আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সফল মানুষদের একজন!'
 
বড় চাচী অবাক হয়ে বললেন,'কী অদ্ভুত কথা। যেখানে মানুষ মেয়েদের ভাবে অপয়া সেখানে আপনি বলছেন আপনার মেয়ে সন্তান হলেই আপনি সফল?'
বড় চাচা মৃদু হেসে বললেন,'রাবেয়া, তুমি কী জানো না আমার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে গেছেন মেয়ে সন্তান তার পিতার জন্য জান্নাত?'
বড় চাচীর চোখ মুখ হঠাৎ আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। তিনি বড় চাচার হাত টেনে নিয়ে তার দু ঠোঁটে চুমু খেতে খেতে বললেন,'আমার জান্নাত।'
 
চাচা বললেন,'আমার জান্নাত গমনের সহজ পথ।'
তারপর সেইদিন এসে গেল যেদিন বড় চাচীর পেটে অসম্ভব ব্যথা।রাত থেকে একটানা পানি ভেঙেছে চাচীর। গ্রামের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ধাই ও বলছে, 'সন্তান আছে উল্টা হয়ে।বলা যায় না কী হয়।গাছ-ফল দুইটাই নষ্ট হয়তে পারে। ভাগ্য ভালো হইলে একটা টিকতে পারে।'
সব আত্মীয় স্বজনেরা অস্হির হয়ে উঠলো। কেউ কেউ কান্নাকাটি করছে। কিন্তু বড় চাচা মোটেও কাঁদলেন না। তিনি বললেন,'সব আল্লাহর ইচ্ছা।তার হুকুম ছাড়া একটা গাছের পাতাও নড়ে না। আমি তার উপর ভরসা রাখি। আল্লাহ যা চান তাই হবে।'
সেদিনও সবাই চাচাকে বললো,'বেকুব।'
বড় চাচা নিজেকে নিজে বললেন,'মতিন, তুমি বেকুব না। বেকুব তো তারা যারা বিপদে আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে পারে না।'
সবশেষে যখন সবাই নিরাশ হয়ে গেল একে একে তখন বড় চাচা সেজদায় পড়ে
গেলেন। সেজদায় পড়ে
 
বললেন,'আল্লাহ গো, তুমি যা করো তাই আমি মেনে নিবো। আমি তোমার এমন গোলাম যে কোনদিন কোনভাবেই কোন কারণে তোমার উপর নারাজ হবে না।'
চাচা সেজদায় লুটিয়ে পড়ে অজর ধারায় কাঁদছেন। চোখের জলে জায়নামাজ ভিজে চুপসে গেছে। চাচা শুধু বারবার একটি কথায় বলছেন,'আল্লাহ তুমি যা করো তাই মঙ্গল ময়। আমি তোমার উপর সর্বদায় রাজি।'
 
চাচা কাঁদছেন,আমরা কাঁদছি, যখন বাড়ির সবকজন মানুষ নিরুপায় তখন জমিনে এসে লুটিয়ে পড়লো পৃথিবীর নবীনতম একজন মানুষ,একটি কন্যা সন্তান।ওয়াও ওয়াও শব্দের কান্নায় নিস্তব্ধ বাড়িটি তখন কানায় কানায় ভরে উঠলো।বড় চাচা তখনও সেজদায়। চাচার কাছে দৌড়ে গিয়ে তার পিটে আলতো হাত বুলিয়ে আমি বললাম,'চাচা,কারোর কোন ক্ষতি হয়নি।চাচী সুস্থ আছেন।আর আপনি হয়েছেন কন্যা সন্তানের পিতা।'
চাচা সঙ্গে সঙ্গে সেজদা থেকে মাথা উঠিয়ে চিৎকার করে তিনবার বললেন,'
শুকর-
আলহামদুলিল্লাহ
আলহামদুলিল্লাহ
আলহামদুলিল্লাহ।'
ভরসা
অনন্য_শফিক
============================= 000000000 ===============================
#শুভ্র_রঙের_প্রেম
পর্বঃ১০-১১
#রুবাইদা_হৃদি
 
প্রাণপণে ভয় থেকে ছুটে পালানোর জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি আমি৷ হালকা শীতেও ভয় আর দৌড়ানোর জন্য হাপিয়ে উঠেছি৷ অন্ধকারে শুধু দৌড়ে বেড়াচ্ছি এইভাবে দৌড়ালে আদেও কোথায় যাবো সেটা বুঝতে পারছি না ৷ 
 
জায়গা গুলো ঝোপঝাড়ে ভরা ৷ আমি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম তার কিছুটা দূরেই তিন চারটা ছেলে নেশা করছিলো৷ মোবাইলের ফ্ল্যাশ জ্বালাতেই ওরা ঘুরে তাকায় আমার দিকে ৷ তাদের হাতে এই নির্জন জায়গায় পরলে আমাকে ছেড়ে দিবে না ৷ কিছু না ভেবেই উলটো দিকে দৌড় দিয়েছিলাম ৷
নিজেকে সবচেয়ে অসহায় মনে হচ্ছে! আজ পরপর দুটো ভুল করেছি এমন ভুল হয়তো সবাই করে না! কিন্তু অনেকে করে আর সেই অনেকের কাতারে পরেছি আমি ৷ কান্না পাচ্ছে! যদি লোকালয় দেখতে পাই এই আশায় পা টেনে জোরে দৌড়ে সামনে যাচ্ছি৷ মোবাইলের অবশিষ্ট চার্জ ফুরিয়ে গিয়েছে ৷
চাঁদের দেখা নেই আকাশে৷ গুমোট মেরে কালো মেঘের গহ্বরে লুকিয়ে আছে ৷ মনে হচ্ছে,আর ফিরে যেতে পারবো না ৷ কি জন্য ঘুমিয়ে পরেছিলাম আর কি জন্যই বা বাস থেকে নামলাম?? উক্ত কথা দুটো ছেলেমানুষী হলেও বড্ড বোকামি৷ 
 
--' ওই ছেড়ি খারা কইতাছি৷ ' পা থেমে গেলো পেছন থেকে কারো শব্দে৷ আমি পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখলাম ওই ছেলে গুলো ৷ তারমানে আমার পেছনেই আসছিলো?? ওদের দেখে আবারো প্রাণপণে সামনে ছুটলাম ৷
--' যতই দৌড়াও রাত বিরেতে ঘুরেফিরে আমগোর কাছেই ফেরত আসা লাগবো৷ ' শিস বাজিয়ে পেছন থেকে হেসে বলে উঠলো আবারো ৷ আল্লাহ বাঁচাও! কি হবে আমার??
আমি কাঁদছি! মনে হচ্ছে শরীরের সমস্ত শক্তি হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যাচ্ছে৷ হাসির আর পায়ের শব্দ আমার একদম কাছে ৷
অন্যের বোকামি গুলো দেখলে হাসি পায় বা আমরা ভাবি এইটা কি ভাবে করতে পারলো সে?? আমরা আদেও কি ভেবে দেখি? উক্ত বোকামি গুলো অজান্তেই হয় আর যখন হয় কাল হয়ে দাঁড়ায়৷
___________________________
 
আকাশে হঠাৎ করেই মেঘ ডেকে উঠলো৷ ফেব্রুয়ারিতেও যে বৃষ্টি হবে ভাবতে পারে নি স্নিগ্ধ ৷ গরম ভাবটা কেটে গিয়ে আবারো কাঁপানো শীত নিয়ে আকাশ ভেদ করে নেমে আসলো বৃষ্টির পসরা৷
চট্টগ্রাম থেকে ফিরতে মাঝের কিছুটা রাস্তা একদম শুনশান নীরব৷ বৃষ্টি আর মেঘের আনাগোনায় উক্ত জায়গা আরো ভয়ানক হয়ে উঠলো ৷ স্নিগ্ধ স্লো ড্রাইভ করছে৷ উদাস চোখে সামনে তাকিয়ে আছে৷ বৃষ্টির ফোঁটা গুলো গাড়ির জানালায় পরতেই লাইটের আলোয় মুক্তোর মতো ঝলমল করে উঠছে৷
জলদি ফেরার জন্যই রিস্ক নিয়ে রাতে বের হয়েছে৷ গত দুটো দিন হয়ে গেলো হাসফাস অবস্থা তার৷ সে মানুষটা কেমন আছে?? তাকে খুজেছে?? নানা চিন্তা আর অস্থিরতায় ঝিমিয়ে থাকা মাথা ব্যাথাটা হঠাৎ করেই বেড়ে উঠলো৷ 
 
গাড়ি থামিয়ে মোবাইল বের করে একটা ছবি বের করে কাঁপা স্বরে বলল, ' দূরে থাকতে চেয়েও পারি নি! মনের কোণে বড্ড জ্বালায়৷ শুভ্র রাঙা প্রেমে পরেছিলাম আর সেইটা এখন অতিরিক্ত পাগলামি তে রুপ নিয়েছে! আচ্ছা শুভ্র রাঙা পরী,তুমি বলো তো আমার কি পাগলামি করা ঠিক?? হ্যাঁ,অবশ্যই ঠিক, ভালোবাসায় পাগলামি না থাকলে ভালোবাসার মর্মার্থ গাঢ় হয় না যে! '
বৃষ্টির শব্দ বাড়ছে সেই সাথে বাড়ছে মনের কোণায় জমে থাকা সৃতি গুলোর বিচরণ৷ ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসির আভাসে স্নিগ্ধ অতীতে ফিরে গেলো৷ 
 
সদ্য মাস্টার্স ডিগ্রী হাতে পেয়েই উৎফুল্ল অবস্থা সবার৷ সেই সাথে জমানো হাসি-ঠাট্টায় মজে থাকা বন্ধুদের ছেড়ে যাওয়ায় ক্যাম্পাস জুড়ে হাহাকার৷ কি করুন দৃশ্য!
চাকরি খুজতে হবে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে হবে সেই সব এক মূহুর্তের জন্য ভুলে গিয়ে সবাই যেন নতুন করে বুঝতে পারলো বন্ধুদের সাথে আরো কিছুটা সময় কাটানো দরকার যা হবে চিরস্মরণীয়৷
ক্যাম্পাসের মাঝে বসে আছে দুটি ছেলে৷ দলের মূখ্য আকর্ষণ এখনো আসে নি৷ বিরক্তি ভঙিতে আদি বলে উঠলো, ' শালা কই গেছে ?? ডিগ্রি ফিগ্রি পাইয়া এক দৌড়েই কি চাকরির উদ্দেশ্যে রওনা হইছে নাকি?? '
 
নোমান হতাশ চোখে আদির দিকে তাকাতেই স্নিগ্ধ এসেই ধপ করে সবার মাঝে বসে পরে৷ তীব্র গরমে ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা৷ উপরের শার্টের বোতাম গুলো খুলে হাত দিয়ে বাতাস করে বলল,
--' কোথায় যাবি সবাই ঠিক করলি?? '
আদির মত সিলেট কিন্তু বাকি সবাই ঠিক করলো কক্সবাজার টু সেন্টমার্টিন৷ সবাই ঠিক করলো কালকে ভোরেই রওনা হবে ৷ 
 
উজ্জ্বল ঝলমলে সকাল৷ ভ্যাপসা গরমের মাঝেও স্টুডেন্ট লাইফের শেষ টুর টা মন্দ হবে না ৷ গাদাগাদি করে থাকা মেস ছেড়ে আজকেই চলে যাওয়ার দিনটা বিষাদময় হলেও তিনজন ব্যাগ গুছিয়ে ছুটলো প্রাণ ভরে আর কিছুটা দিন শ্বাস নেওয়ার জন্য৷ বাসায় ফেরার জন্য হাজার বাহানা থাকলেও সবাই সব বাহানা ভুলে ছুটে যাচ্ছে কৈশোরে৷ বারেবারে মনে হচ্ছে, এইটাই তো শেষ এর পরে ঘাড়ে দায়িত্ব আছে যেটা চাইলেও এড়ানো সম্ভব নয়! একদম নয়৷ 
 
কক্সবাজার পৌছেই নোমান বললো আজ রাতেই নাকি সেন্টমার্টিন যাবে৷ স্নিগ্ধ অলস ভাবে বলল,
--' আজ আর না! তোরা তিনজন চলে যা আমি কাল আসবো৷ বড্ড ক্লান্ত লাগছে৷ '
আদি জোর দেখালেও স্নিগ্ধের গরম চোখে তাকানোতে ভড়কে গিয়ে দমে যায়৷ হুট হাট মাথা ব্যথা তো আর এড়িয়ে যাওয়া যায় না ৷ সেটা আদি নোমান জানে ৷ গত চার বছর ধরে দেখে আসছে ওকে৷ স্নিগ্ধের একজন আন্টিকে চেনে ওরা সে এসেই বলতেন, তোর যাওয়ার জন্য সব ব্যবস্থা করা হয়েছে! তুই রাজি হয়ে যা বাবা৷ '
প্রতিনিয়ত স্নিগ্ধ গরম মেজাজে ধমকে উঠতো৷ ছেলেটা শান্ত কিন্তু রেগে গেলে ওর চেয়ে ভয়ংকর আর কাওকে মনে হয় না৷
প্রত্যেকবার কোথায় যাওয়ার কথা সেই আন্টি বলেন জিজ্ঞেস করলেই, সময় হলে জানতে পারবি! '
যতবার ছুটির পর ওরা বাসায় গেছে স্নিগ্ধ সেই মেসেই পরে থেকেছে৷ কিছু বললে, ম্লান হেসে বলতো, ' পড়া বাকি অনেক! এই সময়টা কাজে লাগাতে হবে বুঝলি৷ ' 
 
টপ লিস্টে থাকা স্টুডেন্টদের বাসায় ফিরতে নেই এই ধারণা নিয়েই ওরা ভাবতো হয়তো এমনটা ৷
বিকেল হতেই বিতৃষ্ণা নিয়ে আদি আর নোমান বেরিয়ে যায়৷ যাওয়ার আগে দাঁতে দাঁত চেপে আদি বলে যায়, ' কাল সকালেই যেন দেখা পায়৷ না পেলে সমুদ্রের নীল পানিতে চুবিয়ে মারবে৷ ' আদির কথায় হেসে উঠেছিলো দুইজনে ৷ মুচকি হেসে সম্মতি দিতেই ওরা দুইজন বেরিয়ে যায়৷ 
 
সমুদ্রের একদম পাশেই কটেজ নিয়েছে স্নিগ্ধ! বন্ধুদের ছেড়ে খারাপ লাগলেও শরীরের অবস্থা বিবেচনা করে উশখুশ মনটাকে দমন করে ৷ বিকেল হতেই বিদঘুটে মাথা ব্যথা বেড়ে যায় বহুগুণ৷
রুম থেকে বেরিয়ে যায় সামনে নির্জন জায়গায়৷ খোলা প্রকৃতির হাওয়া মাথা ব্যথা দমনের উপযুক্ত মেডিসিন ৷ সমুদ্রের ঝিরিঝিরি উত্তাপ বাতাসে হঠাৎ করেই স্নিগ্ধ আবিষ্কার করে তার মাথা ব্যথা নেই৷
সামনে সারি সারি নারিকেল গাছ! সেই গুলোর আশেপাশে বহু মানুষের আনাগোনা৷ বিরক্ত চোখে চারদিকে তাকিয়ে নারিকেল গাছের মাঝ দিয়ে সামনে এগুতে থাকে সে৷ নারকেলের পাতা ভেদ করে মিইয়ে যাওয়া সূর্যের আলো ঠিকরে পরছে বালুর উপর৷ আবছা আলো আবছা ছায়া মিলে অপূর্ব দৃশ্য তৈরি হচ্ছে৷ সমুদ্রের গর্জন হালকা শোনা যাচ্ছে৷ কিছুদূর যেতেই নির্জন জায়গা দেখতে পেলো ৷ 
আশেপাশে চোখ বুলিয়ে আবিষ্কার করলো সে ছাড়া এখানে কেও নেই৷ স্বস্তির শ্বাস ফেলে দাঁড়িয়ে আছে সে ৷ গোধূলি বিকেল৷ সূর্যের কমলা রঙটা একদম পাকা৷ সমুদ্রের গর্জন জানান দিচ্ছে তার দাম্ভিকতা! ঢেউয়ে ভেসে আসা ফেনা গুলোর উপর তীর্যক রশ্মি পরতেই সেইগুলোকে ভাসমান হলদেটে ফুল মনে হচ্ছে৷ 
 
জোরে জোরে শ্বাস টেনে ভেতরকার দূষণ কে মুক্ত করার মাঝে প্রশান্তি আর কোথাও নেই৷ একা নির্জন দ্বীপে নিজের অস্তিত্ব হঠাৎ করেই বিলীন করে দেওয়ার ইচ্ছা হচ্ছিলো স্নিগ্ধের ৷
দূরে সমুদ্রের মাঝে বিলীন হওয়া সূর্যটার মতো তারও ইচ্ছে হচ্ছিলো ডুবে যেতে ৷
নিজের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতেই এগিয়ে যায় নীলাভ পানির বিশাল জলরাশির দিকে ৷
_________________
সূর্য ডুবে গেলেও অন্ধকার হয় নি৷ সন্ধ্যের নিজস্ব আলো আছে আর সেই আলোরে বসে উদাস চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে স্নিগ্ধ ৷ নিজের করতে যাওয়া বোকামির কথা ভাবতেই হাসি পেলো৷ সমুদ্রের কাছে নিজেকে বিলীন করলে কেও তো জানবে না! নিজেকে বিলীন করার আগে তার জন্য কারো চোখে তীব্র বেদনা দেখতে চায়৷ আর সেই বিলীনের মাঝে ব্যার্থতা থাকলেও সুখের ফোয়ারা থাকবে৷ 
 
ব্যাস্ত পায়ে উঠে দাঁড়িয়ে সাথে আনা ক্যামেরা দিয়ে চারপাশের কিছুটা সৌন্দর্য ধারণের চেষ্টায় সামনে এগিয়ে যায়৷ 
 
সাদা আর্কটিক উড়ছে৷ শীতের মৌসুমের কিছুদিন আগেই এরা উড়ে আসে ৷ সন্ধ্যার হালকা কালো আকাশে সাদা আর্কটিক গুলোকে শুভ্র বাতাসে দোল খাওয়া চাঁদর মনে হচ্ছে স্নিগ্ধের কাছে৷
ক্যামেরার লেন্স ফোকাস করে এক নাগাড়ে ছবি তুলছে ৷
ক্লান্ত হয়ে কটেজে ফিরে গিয়ে ছবি গুলো চেক করতেই বুকে ধরাস করে উঠে৷ সাদা শাড়ি পরিহিতা একটা মেয়ে সামনের দিকে ঘুরে আছে৷ কোমর পর্যন্ত কোঁকড়াচুল গুলো স্থির৷
হয়তো হাওয়ার তালে দুলছিলো তখন৷ নারকেল গাছের পাশ ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে তাই হয়তো স্নিগ্ধ তখন খেয়াল করে নি ৷ সাদা শাড়ি৷ মনের মাঝে সুপ্ত অনুভূতি দোলা দিলো ৷
একছুটে আবারো বিচে গেলো সে ৷ ওই জায়গাটায় গিয়ে থমকে দাঁড়ালো ৷ 
 
আশেপাশে কেও নেই ৷ মনের মধ্যে হঠাৎ করে জানান দিলো,হারিয়ে ফেলেছো৷ কিছুদূর এগিয়ে যেতেই ছোট একটা কাগজ বালুর মধ্যে বাতাসের তালে উড়তে থাকতে দেখে উঠিয়ে নেয় স্নিগ্ধ ৷ খুলে দেখে,
" প্রশান্তের বুকে উড়িয়ে দিলাম নাম খানি..! '
দমকা হাওয়ার মতো ফিরে এসো শুভ্র প্রেমিকের হাতখানি ধরে ! '
---' হৃদি! '
 
লেখাটুকু পড়েই মনের মধ্যে দোলা দেয়৷ কার জন্য লেখা সেই চিরকুট?? যার জন্যই হোক চিরকুটের মালিক যে সেই সাদা শাড়ি সেটা বুঝতে বাকি নেই৷
তারপরের দিন আদি আর নোমানকে ফিরে আসতে বলেই রওনা দেয় ঢাকার উদ্দেশ্যে ৷এই নিয়ে আদি আর নোমানের কি রাগারাগি ভেবেই হেসে উঠলো স্নিগ্ধ!
ঢাকা এসে প্রত্যেকটা জায়গায় খুজেছে ৷ সাদা শাড়ি পরা কাওকে দেখলেই ভেবেছে, শুভ্র রাঙা পরী৷
অসুস্থতা বেড়ে চলে! সেই সাথে দেশ ছেড়ে যাওয়ার প্রেশার ৷ সব মিলিয়ে নিজের মনের সেই অনুভূতি চাপা দিয়েই চলে গিয়েছিলো ৷ ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে স্নিগ্ধ ৷ কত কিছুর পরিবর্তন হয়েছে৷ বাকি কথা গুলো নাহয় সেই মানুষটার সামনেই প্রকাশ করবে ৷ আর সেটা হবে ভালোবাসার প্রকাশ৷ শুভ্র প্রেমের প্রকাশ!
____________________ 
 
--' ভালো কইরা খুজ ছেড়ি এইহানেই লুকায় আছে৷ যাইবো আর কই৷ '
--' মোখলেইচ্ছা তুই ডানে খুজ শালা ৷ '
আমি ভয়ে আরো কুঁকড়ে গেলাম৷ বৃষ্টির ঝুনঝুন শব্দ কানে ভেসে আসছে৷ হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কান্না আটকানোর বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছি৷ আমার আশেপাশেই পায়ের শব্দ আর কথা ভেসে আসছে৷ নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করছি৷ 
 
গমগম করে মেঘ ডাকছে৷ সেই সাথে আমার মনের কোণায় অসহায়ত্ব কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে৷ কিছু একটা হোক আর আমি বাসায় পৌছাতে পারি৷ মনে মনে এই দোয়া আওড়াচ্ছি ৷
আবারও দূরে কোথাও বাজ পরতেই ছেলে গুলোর গলার শব্দও মিলিয়ে যায় ৷
ঠান্ডা শীতল হাওয়া আর কাদা মাটিতে প্রচুর ঠান্ডা লাগছে ৷ শাড়ির আঁচল লেপ্টে আছে কাঁদা আর পানিতে ৷ বৃষ্টির ফোঁটা গুড়ি গুড়ি করে ঝড়ছে! বিদ্যুৎ -এর আলোতে চারপাশে আলোকিত হতেই এক নজরে বুঝতে পারলাম ছেলে গুলো চলে গেছে৷ 
 
তবে এইটা কি মেইন রাস্তা না কাঁচা রাস্তা বোঝার উপায় নেই৷ ভয়ের সাথে ঠান্ডা সেই সাথে বাঁচাতে চাওয়ার আকুলতায় মিইয়ে গেলাম আমি৷
কে জানে কয়টা বাজে আর কখন ভোর হবে ৷ সেই আলোতে ভরসা পাবো৷
কিন্তু এখানে ঝোপের মধ্যে বসে থাকা একদম ঠিক হবে না ছেলে গুলো আসতে পারে ৷
আমি হাতে ভর দিয়ে কাঁপতে কাঁপতে উঠে দাঁড়ালাম ৷
চারদিকে অন্ধকার চোখের আলোয় যতটুকু অন্ধকার কাটছে সেই ভরসায় সামনে এগিয়ে যাচ্ছি৷ কেও আসুক আমাকে বাঁচাক! আমি যে পথ হারিয়ে ফেলেছি ৷
জোরে পা ফেলছি ৷ ঝাপসা আলোতে সামনে কি আছে একদম বুঝতে পারছি না৷ বৃষ্টির পানিতে জ্বর বেড়েছে ৷ 
 
পায়ে কিছু একটা বেজে হোঁচট খেয়ে পরতেই মাথায় কিছুর সাথে লাগে৷ ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলাম আমি ৷
মাথায় হাত দিয়ে চোখ খুলে তাকালাম দূর থেকে লাইটের আলো দেখা যাচ্ছে ৷ হঠাৎ করেই মনে হচ্ছে মারা যাচ্ছি৷ তীব্র ব্যাথায় অনুভূতি শূন্য হয়ে পরেছি৷ চোখের সামনে বাবা-মা আর দাদুনের মুখ ভেসে উঠলো৷ সেই সাথে আমার ছোট ভাই রাফিনের ৷ ওদের কথা বড্ড মনে পরছে৷ মৃত্যুর আগে আপনজনদের মুখ ভেসে উঠে দাদুনের মুখে শুনেছিলাম৷ 
 
নীতি আর রাহাতের সাথে কাটানো মূহুর্ত গুলোও ভেসে উঠছে৷ সেই সাথে আরো একটা মানুষ ৷
সেই মানুষটা গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে আসছে আমার দিকে ৷ আমি কি ভুল দেখছি?? না সেও আমার অজান্তেই হয়ে যাওয়া আপন মানুষ বলে চোখের সামনে দেখছি ৷ সে আসছে... তবে আমার যাওয়ার সময় বোধহয় এসেছে..! অস্ফুটস্বরে শুধু বললাম,
--' স..স..স্নি...... ' ঠোঁট ভেদ করে সম্পূর্ণ শব্দটা বের হওয়ার আগেই শেষ নিশ্বাসের প্রহর এসে পড়েছে ৷ অজানা অনেক কিছুই জানা হলো না সেই সাথে অজানা সেই মানুষটাকে চেনা হলো না৷
চলবে.....
~" কাল্পনিক আর বাস্তবতা দুটো আলাদা ৷ ভেবে লেখা কাল্পনিক চিত্রটি তুলে ধরছি৷ মন্তব্য করবেন অবশ্যই৷ আর ভুল ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন 
 
~♥#শুভ্র_রঙের_প্রেম
পর্বঃ১১
#রুবাইদা_হৃদি
 
চোখের পাতায় ভারী অনুভব নিয়ে চোখ খুলে তাকানোর চেষ্টা করেও তীব্র মাথা ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলাম৷ নিজেকে প্রচন্ড ভারী অনুভব হচ্ছে৷ মৃত্যুর পর বুঝি এমন অনুভূতি হয়??
আশেপাশের পরিবেশ হিমশীতল! কোথায় যেন একটা কাক উচ্চস্বরে ডেকে চলেছে৷ শরীরের প্রত্যেকটা উপশিরা জানান দিলো আমি বেচে আছি৷
পিটপিট করে চোখ খুলে সামনে থাকা মানুষটাকে দেখে আমি একদম অবাক হলাম না৷ অসুস্থ শরীর নিয়েই চেয়ারে হেলান দিয়ে থাকা মানুষটাকে দেখেই ঝাপিয়ে পরলাম তার বুকে৷ হঠাৎ এমন হওয়ার সে হকচকিয়ে গিয়েও নিজেকে সামনে নিলো৷ চারদিকে নীরবতা! সেই নীরবতা ঠেলে আমি ফুঁপিয়ে কেদে উঠলাম৷ 
 
--' এই মেয়ে কাঁদছো কেন! রিলাক্স আমি আছি তো৷ ' তার শীতল কন্ঠের ভরসার আওয়াজ আমার কানে পৌছালো না৷ আমি একনাগাড়ে কেদেই চলেছি৷ আমার মনে হচ্ছে,বহুদিন, বহুবছর পর বন্ধি থেকে মুক্ত হয়েই সর্বপ্রথম নিজের একান্ত আপন মানুষের সানিধ্য পেয়েছি৷ তার হাতদুটো এখনো আমাকে আঁকড়ে ধরে নি৷ আমি অনবরত কেঁদেই চলেছি৷ মাথায় চিনচিনে ব্যথা প্রকট আকার ধারণ করলেও আমার মনে হচ্ছে,আমি পরম শান্তির স্থানে আছি ৷ সে আমার মাথায় হাত রেখে আদুরে স্বরে বলল,
--' তুমি ভীতু সেটা তো জানা ছিলো না৷ পাবলিক প্লেসে অচেনা ছেলেকে থাপ্পড় মারতে যার হাত কাঁপে না আর আজ সে কাঁদছে?? এইটা বড় অন্যায়৷ '
 
আমি জবাব দিলাম না ৷ মনের ভেতরের জমে রাখা ভয় গুলো নিমিষেই উধাও হয়ে যাচ্ছে৷ কাল ঝাপসা চোখে দেখা ব্যাক্তিটি সত্যি ছিলো আর সে এখন আমার সামনেই আছেন৷ ভোতা অনুভূতি গুলো নাড়া দিয়ে গেলেও আমি তাকে একদম ছাড়ছি না৷ অন্য সময় হলে হয়তো ছিটকে দূরে চলে যেতাম তবে এখন আমার একমাত্র ভরসার মানুষ যে সে!
--' উনার জ্ঞান ফিরেছে? যাক আলহামদুলিল্লাহ ! প্রেশার চেক করতে হবে সাথে এই ইঞ্জেকশন টা দিতে হবে৷ '
 
--' আই উইল ম্যানেজ৷ আপনি ওইগুলো রেখে বাইরে যান৷ '
--' স্যার আমার ডিউটি এইটা৷ '
--' আর আমার ডিউটি হচ্ছে এই মেয়েটাকে আগলে রাখা৷ '
নার্সের কথা শুনে স্নিগ্ধ স্যার বললেন৷ নার্স স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে মুচকি হেসে বেরিয়ে যাওয়ার আগে বললেন,
 
--' ম্যাম অনেক লাকি৷ ' নার্সের কথা শুনে আমার কান্না থেমে গেলো৷ কি বললেন উনি?? এতোক্ষণে ঝিমিয়ে থাকা মস্তিষ্ক জানান দিলো, আমি ভুল করেছি৷ তাড়াতাড়ি মাথা উঠাতে গেলেই হাতের স্যালাইন সহ মাথা পর্যন্ত ব্যথায় টনটন করে উঠে৷ মুখ দিয়ে " উফ " শব্দটা বের হতেই স্নিগ্ধ স্যার আতংকিত গলায় বললেন, ' কি হয়েছে?? ব্যথা করছে? ' 
 
--' ন..না! ' আমি মাথা উনার বুকে রেখেই বললাম৷ উঠানোর শক্তি পাচ্ছি না একদম৷ চোখ বন্ধ করে নিজের বাড়াবাড়ি ধরণের বোকামি ভাবতেই মরে যেতে ইচ্ছা হলো৷ উনি একহাতে আমার বাহুতে ধরতেই আমি সচেতন গলায় বললাম,' আমার মাথা ব্যথা করছে! '
 
--' বালিশে শুইয়ে দেই তোমাকে৷ এই ইঞ্জেকশন টা দিলেই ব্যথা কমে যাবে৷ '
আমি জবাব দিলাম না৷ আলতো হাতে আমাকে শুইয়ে দিতেই চোখ মেলে উনার দিকে তাকালাম৷ নেভি ব্লু শার্ট ভিজে আছে জায়গায় জায়গায়৷ চোখ গুলো অসম্ভভ লাল৷ মনে হচ্ছে,সারা রাত ঘুমোন নি৷ ঠোঁট একদম শুকিয়ে গেছে৷ কঁপালে চুল গুলো অগোছালো ভাবে লেগে আছে ৷ গালের মাঝ বরাবর কালো কুচকুচে তিল টা আজ লাল বর্ণ ধারণ করেছে৷ আমি ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম তিল টা সত্যিই লাল৷ শতশত ভাবনার মাঝে আমি অস্ফুটস্বরে বললাম, ' আপনার গালের তিল টা লাল রাঙা! '
উনি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলেন৷ হাতে থেকে ইঞ্জেকশন টা আমার অজান্তেই দিয়ে মুচকি হেসে বললেন,
 
--' অন্য রঙের হলে বুঝি ভালো লাগতো?? '
--' না না! এইটাই সুন্দর৷ ' আমি নিজের কথায় নিজেই লজ্জায় মিইয়ে গেলাম৷ চোখ নামিয়ে ফেলতেই হঠাৎ করেই মনে হলো ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে৷ সেই সাথেই তীব্র ব্যথা হুর হুর করে হাত বেয়ে উঠলো৷ ভয় পাওয়া কন্ঠে বললাম,
 
' ইঞ্জেকশন কেন দিলেন আমার বুঝি ব্যথা লাগে না? '
আমার কথা শুনে হাতের জিনিস গুলো টি টেবিলের উপর রেখে বললেন,
--' তুমি ঢাকা থেকে এতো দূর কেন এসেছিলে?? '
আমি উনার কথা শুনে আবার ফুঁপিয়ে উঠলাম৷ কাল রাতের কথা মনে হতেই নিজেকে আবার অসহায় লাগতে শুরু হলো৷ স্নিগ্ধ স্যার চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন৷ কান্নার শব্দ আর নিশ্বাসের ফোসফাস আওয়াজে ভারী হয়ে উঠলো৷ আমি কাঁদছি আর সে দেখছে৷ রাগ হলো কোথায় সান্ত্বনার বাণী দিবেন তা নয় উনি তাকিয়ে আছেন ৷ আমি কান্না মাখা আর রাগ মিশ্রিত গলায় বললাম,
--' বাসায় যাবো আমি৷ '
 
আমার কথার উত্তর না দিয়ে এখনো তাকিয়ে আছেন৷ আমি মুখ ঢেকে ফেলতেই নড়েচড়ে বসলেন উনি৷ বেডের মধ্যে হাত দিয়ে আমার দিকে ঝুকে এসে শীতল কন্ঠে বললেন,
--' রাত এগারোটা সময় ঢাকা ছেড়ে ওই নির্জন জায়গায় কেন এসেছিলে? '
উনার কন্ঠে কিছু একটা আছে৷ যা আমাকে ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিলো৷ কান্না থামিয়ে সরাসরি উনার চোখের দিকে তাকাতেই ধমকের সুরে বললেন,
--' আন্সার দাও! '
--' রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিলাম৷ '
 
--' এক্সপ্লেইন করো৷ '
উনি আবার চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বললেন৷ আমি অসহায় চোখে তাকিয়ে কাঁপা গলায় নিজের বোকামির কথা গুলো বলতেই উনি উঠে দাঁড়ালেন৷ তারপর হঠাৎ করে আমার একদম সামনে এসে চোখে চোখ রেখে রাগী কন্ঠে বললেন,
--' এই মেয়ে এই! তুমি কি পাগল? না ছোট বাচ্চা৷ '
--' আমি সত্যিই বুঝতে পারি নি৷ '
 
--' চুপ একদম চুপ! এমন ভুল কে করে?? একমাত্র তোমার মতো ওভার স্মার্ট মেয়েরাই করে৷ যাদের নিজেদের কোনো উপস্থিত বুদ্ধি নেই৷ '
চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরলো৷ পাশে থাকা চেয়ার জোরে পা দিয়ে লাথি মেরে দূরে সরিয়ে দিলেন উনি৷ আমি ভয়ে আরো সিটিয়ে গেলাম৷ মুখ ফুটে কোনো কথা বের হলো না আর ৷
আমি চুপ করে তাকিয়ে আছি৷ অনেকটা সময় পর আমি সাহস নিয়ে বললাম, ' বাসায় বা হলে যাবো৷ '
--' যাও! '
 
উনার সোজাসাপটা কথায় রেগে উঠলাম আমি৷ আরে ভাই বাচিয়েছিস আবার রাগও দেখাচ্ছিস? কিসের রাগ দেখাচ্ছিস! আমি কে তোর?
এই কথা গুলো বলতে পারলে শান্তি লাগতো৷ কিন্তু আপাদত চুপ আছি৷ কারণ একা তো আর যেতে পারবো না ৷ 
 
--' আপনি কোথায় ছিলেন এই দুইদিন?? '
--' জেনে কি করবে?? আমাকেও নিয়ে ও এইভাবে চেনা পথে হারিয়ে যাওয়ার প্ল্যান করছো বুঝি? '
উনার গা জ্বালানো কথায় বিরক্ত লাগলেও দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,' ফর্মালিটি পালন করছি স্যার! আমরা ফর্মালিটি ও জানি না৷ '
 
--' জড়িয়ে ধরাও বুঝি ফর্মালিটি?? ' উনার কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালাম আমি৷ এর কথার পৃষ্ঠে কি জবাব দিবো ভেবে পেলাম না ৷
হাজার ভেবেও জবান খুজে না পেয়ে গা এলিয়ে শুয়ে রইলাম৷ মহা বজ্জাত! ধুরন্ধর ব্যাক্তি৷ এই লোকের সাথে থাকা মানেই সেকেন্ডে সেকেন্ডে অপদস্ত হওয়া৷ 
 
___________________________
টানা বারো ঘন্টা জ্ঞান হারিয়ে ছিলাম৷ ভেবেই শিউরে উঠলাম৷হসপিটাল থেকে বের হওয়ার আগে সেই নার্সটা বললেছেন আমাকে৷ তারমানে গোটা একটা দিন আমি নিরুদ্দেশ৷ ভেবেই হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে৷ চারদিকে আবার ঘণ কালো অন্ধকার! কাছে কোথাও এশারের আজান দিচ্ছে৷
আমি আসুস্থ শরীরে দাঁড়িয়ে আছি হসপিটালের পার্কিং এরিয়া তে৷
মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে হলে ফিরলেও নানা কথার সম্মুখীন হতে হবে আবার বাসায় ফিরলে কি জবাব দিবো সেটা ভেবেই জ্বর বোধহয় বেড়ে গেলো৷ 
 
--' ঢাকায় যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই৷ রাস্তাঘাট সব বন্ধ৷ ' পাশেই একজন ফোনে কথা বলতে বলতে যাচ্ছে৷ উনার কথা শুনে দুনিয়া ঘুরে উঠলো৷ বলেন কি?? মাথা ঘুরছে৷ সব অকাজ আর বিপদ বুঝি একদিনেই আসার ছিলো?? 
 
নিজেকে সামলাতে না পেরে পরে যেতেই নিলে শক্ত পুরুষালি হাত কোমর আঁকড়ে ধরলো৷ আমি তাকিয়ে দেখলাম স্নিগ্ধ স্যার৷ রাগী ভাবে তাকিয়ে বললেন,
--' পরে যাওয়ার তো ভালোই অভ্যাস বানিয়েছো৷ না আমকে দেখলেই তোমার পরে যাওয়া রোগে ধরে?? '
আমি উনার কথা শুনে মিনমিনে গলায় বললাম,
--' স্যার ঢাকা আর যাওয়া হবে না৷ '
 
আমার কথা শুনে উনি ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুঁটিয়ে বললেন,
--' ভালোই হলো এখানেই সংসার পেতে সংসারী হয়ে যাই কি বলো?? '
আমাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে একহাতে ধরলেন উনি৷ আমি পাশ ফিরে তাকিয়ে অবাক চোখে বললাম, ' বউ তো জোগাড় করতে হবে! '
--' তুমি থাকলে আশেপাশে, বউয়ের আর কি দরকার পরে! '
চলবে...!
~"লেখে একদম শান্তি পাই নি৷ পড়ার চাপ বেড়েছে আমার৷ আজ না দিলে গুছিয়ে দিতাম কাল৷ অগোছালো হয়েছে জানি৷ ভুল ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷ '
 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

===

You may also like

===