===

Ibadat | ইবাদত | Bangla Natok | Sajal | Mim | Natok 2022

Ibadat | ইবাদত | Bangla Natok | Sajal | Mim | Natok 2022

#গল্পঃ জীবন যুদ্ধ
 লেখিকাঃ বৃষ্টি জাহান নীলা
পর্বঃ (২৪+২৫+২৬)
..
(আকাশ নীলাকে তার ইচ্ছেটা পুরণ করার জন্য প্রথমে পাহাড় তারপর সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে নিয়ে যায়। এবং সন্ধ্যার আগে রওয়ানা দেয়।...... তারপর..)
নীলার বেশ শীত লাগছিলো । গায়ে শুধু একটা পাতলা শাড়ি আছে তাও কিছুটা ভিজে । আকাশ তাকিয়ে আছে নীলার দিকে এটা নীলা খেয়াল করেনি, নীলার মন বাইরে ।
- এই
- হুম
- শীত করছে ???
- কিছুনা
- গাড়ির গ্লাসটা লাগিয়ে দেই ??
- না না ।
- বাইরে থেকে তো বাতাস আসছে ।
- আসুক , আমার খুব ভালো লাগছে ।
- যদি এই ঠান্ডায় জ্বর আসে ?
- আসুক সমস্যা নেই
- কষ্ট হবে না ?
- নাহ , আপনি আছেন তো
- আমি থাকলে কষ্ট হয় না ??
- না তবে
- তবে কি
- আপনি পাশে থাকলে বেশ ভালো লাগে ।
- শুধুই কি ভালো লাগা ?
- হুম ।
- আর কিছু নেই
- না
মন খারাপ হয়ে গেলো আকাশের । কিন্তু একটু খুশিও লাগছিলো কারণ নীলার ওকে ভালো লাগে তাই । ভালোলাগা থেকেই তো শুরু হয় ভালোবাসা ।
- আমরা কখন বাসায় ফিরবো সাহেব ।
- এগারো বারোটা তো বেজেই যাবে যেতে যেতে ।
- ওহ
- কেনো বলুন তো ।
- এমনি ।
- ক্লান্ত লাগছে খুব ???
- হ্যাঁ একটু লাগছে
- শুয়ে থাকুন একটু ঠিক হয়ে যাবে ।
- এখানে কিভাবে ঘুমোবো ।
- আমার কাঁধে মাথা রেখে
- না না আমি এভাবেই ঠিক আছি
আকাশ হাসলো নীলার কথা শুনে । লজ্জা পেলে মেয়েটাকে অনেক কিউট আর লজ্জাবতী লাগে । নীলা বাইরে তাকিয়ে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে আর মিটিমিটি হাসছে ।
- এই আপনি হাসছেন কেনো ??
- কই না তো ।
- আমি নিজের চোখে দেখলাম ।
- খুব ভালো লাগছে তাই হাসছি । হুহ আপনার জন্য আমি হাসতেও পারবো না নাকি ।
- হুম পারবেন তো । কিন্তু আপনার হাসিটা বাঁধিয়ে রাখার মতো । তীরের মতো বুকে এসে লাগে ।
- আপনি লুকিয়ে লুকিয়ে আমার হাসি দেখেন
- লুকিয়ে দেখার কি আছে ??? আমার কাছে তো সব কিছুই দেখার অধিকার আছে
- সব কিছু মানে
- না মানে এই আকাশ বাতাস, পাহাড় পর্বত এইসব আর কি ।
- ওহ
দুজনেই চুপচাপ বসে আছে অনেক্ষণ হলো । রাত নয়টা বেজে গেছে আকাশের চোখ লেগে আসছিলো । হঠাৎ চোখ খুলে পাশে তাকালো । নীলা গাড়ির সিটে মাথা রেখে ঘুমোচ্ছে । মুখ ভরা ক্লান্তির ছাপ বেশ ভালো লাগছে আকাশের ।
- এই
-....
- কি গো উঠো না
- উহু
- উঠবে না
- না
- কিছু খেতে হবে তো
- খেতে হবে না । একটু ঘুমাতে দিন প্লীজ
- ক্ষিদে পায়নি
- না , খুব খারাপ লাগছে আমার না ঘুমাতে পারলে অসুস্থ হয়ে যাবো !
- কিছু তো খেয়ে ঘুমান ।
- খুব বিরক্ত লাগছে কিন্তু
- আচ্ছা আচ্ছা আর কিছু বলবো না ।
নীলা আবার ঘুমিয়ে পড়লো । আকাশ নীলার মাথাটা নিজের কাঁধে এনে রাখলো । মেয়ে কোলে আর বউকে কাধে করে নিয়ে বাড়ি ফিরলো আকাশ । করিম চাচাকে ফোন করলো বাইরে আসতে ।‌ আকাশ নীলাকে জাগিয়ে দিতে চায় না তাই রোহিনীকে চাচার কোলে রেখে নীলাকে কোলে তুলে নিলো । তারপর সিঁড়ি বেয়ে উপরে নিজের রুমে নিয়ে শুইয়ে দিলো মা আর মেয়েকে । আকাশের শরীর ও খুব ক্লান্ত ছিলো তাই রোহিনীর পাশে শুয়ে পড়তেই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিলো ।
.
সেই কখন সকাল হয়ে পড়েছে কিন্তু আকাশের ঘুম ভাঙ্গছে না এখনো । নীলা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছে । কিছু ভালো লাগছে না তার হালকা জ্বর আসছে শরীরে ।
- গুড মর্নিং সুইটহার্ট
- সুইটহার্ট কে ??? ( অবাক হলো নীলা )
- ইয়ে না মানে আমি রোহিনীকে বললাম এটা ।
- কিন্তু রোহিনী তো এখানে নেই ।
- তাহলে তাহলে রোহিনীর আম্মুকে বলছি ।
- কিহ ।
- কিছুনা । এক কাপ কফি হবে ???
- হুম হবে আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি কফি নিয়ে আসছি ।
- ওকে
ওফ্ কিছু বলাও যায় না মেয়েটাকে । ভালোবাসার কথা কিভাবে বলবে ভাবতে ভাবতে পরান যায় আকাশের ।
আকাশ ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে । এসে নীলাকে না পেয়ে লেপ্টপ নিয়ে বসে কিছু কাজ করছে ।
- এই নিন সাহেব
- হুম
নীলা বেরিয়ে যাচ্ছিলো । এমন সময় আকাশ ডাকলো নীলাকে ।
- শুনোন
- হুম
- কোথায় যাচ্ছেন ??
- নিচে । আপনার খাবারটা তৈরি করতে
- আগে এখানে বসুন তো
- বসতে হবে না কি বলবেন বলুন ।
- বসতে বলছি বসুন
- আচ্ছা ।
- এই শাড়িটা দেখুন তো ।
আকাশ লেপ্টপে নীলাকে ছবি দেখাচ্ছে ।
- বাহ্ খুব সুন্দর তো ।
- ভালো লেগেছে ???
- হ্যাঁ
- আচ্ছা
- এবার আমি উঠি
- আরে আরে এখনো তো অনেক কিছুই বাকি আছে ।
- আবার কি ।
- কিছু গয়না দেখাচ্ছি দেখুন , ভালো লাগে কিনা
- আচ্ছা
- দেখুন কোনটা ভালো লাগে ।
নীলা দেখিয়ে দিলো সব । এই গুলো কার আর কিসের জন্য আকাশ অর্ডার করছে কিছুই জানেনা নীলা ।
- সাহেব যাই আমি ??
- হুম ব্রেকফাস্টটা তাড়াতাড়ি দিন আমি নিচে আসছি
- কোথাও যাবেন ??
- হ্যাঁ কিছু কাজ আছে সেগুলো শেষ করতে হবে ।
নীলা নিচে গিয়ে তাড়াতাড়ি খাবার তৈরি করে আকাশের সামনে দিলো । আকাশ আর নীলা একসাথে ব্রেকফাস্ট সেরে নিলো । আকাশ বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লো । নীলার শরীর খুব দুর্বল লাগছিলো । মাথায়ও প্রচুর ব্যাথা করছে তাই রুমে গিয়ে চুপচাপ শুয়ে আছে ।
.
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে । নীলার শরীল আরো খারাপ হচ্ছে । জ্বরে শরীর পুড়ে যাচ্ছে । কিন্তু নীলা কাউকে কিছু বলছে না । আকাশ এখনো বাইরে আছে । বাসায় কখন আসে কে জানে । কিছুক্ষণ পর বাইরে থেকে কিছু শব্দ আসছে তাই নীলা বাইরে গিয়ে দেখলো কিসের শব্দ,,কিছু লোকজন বাড়ি সাজানোর জন্য এসেছে এটা দেখে আবার এসে শুয়ে পড়লো নীলা । সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে আকাশ । এসেই করিম চাচার কোলে থেকে রোহিনীকে নিয়ে নেয় । হাতে অনেক গুলো শপিং ব্যাগ ছিলো । এই গুলো নিয়ে নীলার কাছে চলে যায় ।
- এই যে ম্যাম । এই সন্ধ্যা বেলা শুয়ে আছেন যে ।
- এমনি শুয়ে আছি ।
- কিছু কি হয়েছে
- কই না তো ( আকাশ চিন্তা করবে ভেবে লুকিয়েছে )
- আচ্ছা এই গুলো পরে তৈরি হয়ে নিচে চলে আসুন । সবাই চলে আসবে এখন
- আমি না গেলে হয় না ??
- না সবাই তো আপনাকে দেখতেই আসছে । আমাকে তো দেখতে আসছে না তো আপনি না গেলে কিভাবে হবে ।
- আমাকে কেনো দেখতে আসছে ???
- আপনি ওদের ভাবি তাই ।
- আচ্ছা আপনি যান আমি আসছি ।
- ওকে । ।
হেসে চলে গেলো আকাশ । মেয়েকে কোলে নিয়ে সব ঠিকঠাক আছে কিনা দেখছে । এইদিকে নীলা অনেক কষ্ট করে শাড়ি পরে নিয়েছে । কিছুক্ষণ বসে শুধু কথা বলবে এতো কষ্ট তো হবে না । যতই হোক আকাশের বন্ধু বলে কথা । না গেলে আবার মন খারাপ হয়ে যাবে উনার । ভাবতে ভাবতে তৈরি হয়ে গেলো নীলা । এই দিকে আকাশের সব বন্ধুরা চলে এসেছে । এসেই নীলাকে খুঁজেছে , এখন সবাই বসে বসে কথা বলছে । এমন সময় আস্তে আস্তে নীলা নিচে নামলো । শরীরে যেনো একটু ও শক্তি নেই তবুও চলছে নীলা ।
- এই তো ভাবি চলে এসেছে
- কেমন আছেন ভাবি
- এইতো আলহামদুলিল্লাহ ভালো , আপনারা সবাই কেমন আছেন ।
- আমরাও ভালো আছি ।
- আপনাকে দেখার অনেক ইচ্ছে ছিলো ।
- আমাদের ভাবি তো অনেক সুন্দর । আকাশ কিন্তু খুব ভাগ্যবান
সবাই কথা বলছে নীলার প্রশংসা করছে । নীলা শুধু হ্যাঁ বা না করে উত্তর দিচ্ছে । আকাশ বুঝতে পারছে নীলার কিছু একটা হয়েছে । তাই ওকে রুমে চলে যেতে বললো । নীলা যেতে চাইলো না কিন্তু আকাশ জোড় করে পাঠালো । সবাই মিলে অনেক্ষণ আড্ডা দিলো ।
আকাশ করিম চাচাকে বললো সবাইকে খাবার দিতে । করিম চাচা তাই করলো । সবাইকে খাবার দেয়া শেষ হলে করিম চাচা নীলার রুমে গেলো ।
- নীলা মা নিচে চলো । সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে ।
- আমি যাবো না চাচা । সবাইকে বলুন খেয়ে নিতে ।
- কিন্তু আকাশ বাবা তো শুনবে না ।
- উনাকে বলবেন আমি বিকেলেই খেয়েছি । এখন আর খাবো না । আমাকে যেনো ডাকতে না আসে । ।
- কিন্তু নীলা মা তুমি তো সকালে যে খেয়েছো আর খাওনি ।
- এটা উনাকে বলবেন না । দয়াকরে আমি যা বলেছি তাই বলুন চাচা
- তুমি কি অসুস্থ মা ।
- না চাচা । আপনি নিচে যান দেখুন ওদের কি দরকার পড়ে ।
নীলা যেভাবে করিম চাচাকে বলে দিয়েছে করিম চাচা সেভাবেই আকাশকে বুঝিয়ে বলেছে । আকাশ সেটা বিশ্বাস করেছে । সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে । এই দিকে নীলা কখন ঘুমিয়ে পড়লো নিজেও জানেনা ।
.
অনেক দিন পর সব বন্ধুরা এক সাথে হওয়াতে অনেক মজা হয় সবাই মিলে ড্রিঙ্কস করে সাথে আকাশও করে । আজকেও আকাশ ওর মনের কথাটা বলতে পারলো না তাই অনেক বেশি ড্রিঙ্কস করলো আকাশ । সবাই গিয়ে শুয়ে পড়লো । আকাশ আসছে ঘুমোতে ।
আকাশ রুমে আসতেই দেখে রুমের লাইট অফ তাই আগে লাইট অন করলো । অন করতেই দেখে নীলা বিছানায় ঘুমোচ্ছে পাশে রোহিনী । আকাশ আস্তে করে রোহিনীকে দোলনায় নিয়ে রাখলো ।
আজ তো খুব সুন্দর লাগছে নীলাকে । ঠিক আকাশের মনের মতো । এতো সুন্দর কেনো নীলা কেনো এতো মায়া লাগে ওর জন্য । ভাবতে ভাবতেই আকাশের হাত নীলার গালে চলে গেলো । মেয়েটার এতো জ্বর সেইদিকে কোনো খেয়াল নেই আকাশের । আজ এমন লাগছে কেনো আকাশ নিজেও জানেনা খুব ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে নীলাকে । আকাশের হাতের স্পর্শে নীলার ঘুম ভেঙ্গে যায় । তাকিয়ে দেখে ওর উপর ঝুঁকে আছে আকাশ ।
- একি আপনি এখানে ( ভয় পেয়ে নীলা )
- এখানে তো শুধুই আমি থাকবো । অন্য কাউকে আসতেই দিবো না ।
- এই সব কি বলছেন ।
- আসো সব বুঝিয়ে দিবো ।
নীলার হাত ধরে টান দিয়ে দাঁড় করালো আকাশ ।
- কি হয়েছে সাহেব ।
- হয়নি এখন সব হবে সোনা
- আপনি ঠিক আছেন তো ।
- উহু আমি ঠিক নেই , ঠিক নেই আমি । তুমি আমাকে ঠিক করে দেওনা গো ।
আকাশ এগিয়ে যাচ্ছে নীলার দিকে । নীলা পিছু যেতে যেতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় । কি হয়েছে আকাশের কিছুই বুঝতে পারছে না । গায়ে দাঁড়িয়ে থাকার জোর টুকুও নেই । আকাশ কাছে যেতেই একটা ভোটকা গন্ধ এসে নাকে লাগে নীলা । কিসের গন্ধ নীলা বুঝতে পারছে না ।
- আমি তোমার কাছে যেতে চাই খুব কাছে খুব । তোমার দেহের সাথে মিশে যেতে চাই
- আমার এইসব একদম ভালো লাগছে না । ছাড়ুন আমাকে ।
- আমার তো ভালো লাগছে । আর ছাড়ার জন্য তো ধরি নাই । অনেক ছাড় দিয়েছি আর না ।
- দেখুন সাহেব আপনার সাথে নাটক করার কোনো ইচ্ছা আমার হচ্ছে না । ছাড়ুন প্লিজ
- উহু
- আমি অনেক অসুস্থ আপনি বুঝতে পারছেন না কেনো ।
- আমি তো অসুস্থ না । আমি একাই সব পারবো
- স_সব মানে
- মানে আদর করতে পারবো
-নন_না আপনি এটা করতে পারেন না ।
- তুমি আগে সুযোগ দিয়ে দেখো তো পারি কিনা সুইটহার্ট ।
- চুপ করুন । আপনি কি বলছেন আপনি নিজেও জানেন না
- তুমি কেনো বুঝতে চাইছো না আমি তোমাকে কাছে পেতে
- এখন সব বুঝতে পারছি আমি । আপনার আমাকে চাই না আমার দেহটাকে চাই তাই না ।
- আমার তো দুটোই চাই
- ছিঃ কথাটা বলতে লজ্জা করলো না আপনার।
- লজ্জা তো তোমার করবে । আমার করবে না । আমি তো তোমাকে স্বামী আর স্বামীদের কি লজ্জা লাগে বলো ?? ( নীলার শাড়িতে হাত রাখলো আকাশ )
- দেখুন আমাকে একটু দয়া করুন প্লিজ। আমি এইসবের জন্য তৈরি না এখন ।
- তোমাকে তৈরি হতে হবে না । আমি তো সবসময়ই তৈরি উম্মাহ । এখন বলো শাড়িটা কি তুমি খুলবে নাকি আমি খুলে দিবো
- আপনি এতো বাজে আমি ভাবতেও পারিনি । আপনি মানুষ রূপি জানোয়ার
- চুপ আর একটাও কথা না ( আকাশ একহাতে নীলার মুখ চেপে ধরলো অন্য হাতে শাড়ি খুলছে )
নীলা কান্নাকাটি করছে কিন্তু এইসব আকাশের কানে দিয়ে পৌঁছাচ্ছে না , আকাশের কোনো হুস নেই সে মাতাল হয়ে গেছে। কি করবে নীলা বুঝতে পারছে না । আকাশকে বাধা দিবার শক্তি ওর গায়ে নেই । জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে নীলা । আকাশ তার সমস্ত মুখ নীলার ঘাড়ে দিয়ে রেখেছে । শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে নীলা আকাশকে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ভেতরে গিয়ে লক লাগিয়ে দেয় । আকাশ ধরতে পারে না নীলাকে । নীলা হাঁপাচ্ছে আকাশ বাইরে থেকে দরজা ভেঙ্গে ফেলার অবস্থা করে ফেলেছে ।
আকাশ এতোটা নিচ আর খারাপ স্বভাবের তা নীলা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি । কান্নায় ভেংগে পরে নীলা তার সাথে কেনো বার বার এমন হয় ‌। কেনো বার বার মানুষ চিনতে ভুল করে সে ।
.
.
চলবে........
.........
👉 গল্পঃ জীবন যুদ্ধ
👉 লেখিকাঃ বৃষ্টি জাহান নীলা
👉 পর্বঃ ২৫
.
.
.
আকাশ কিছুক্ষণ একা একা চিৎকার করে ঘুমিয়ে পড়েছে। শাড়িটা মেঝেতে পড়ে আছে । নীলা ওয়াশরুমেয় ঝর্ণার নিচে দাঁড়িয়ে আছে অনেকক্ষণ ধরে । কিছুতেই নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছেনা। কেনো বার বার এমন হয় ওর সাথে । নীলা তো ভালোবাসতে চেয়েছিলো আকাশকে কিন্তু আজকের এই ব্যবহারের পরে আর একদিনও আকাশের সাথে থাকা যায় না । একটা অমানুষকে আর যাই হোক ভালোবাসা যায় না । যেভাবেই হোক এখান থেকে চলে যেতে হবে মেয়েকে নিয়ে । জীবনে আর কারো প্রতি বিশ্বাস নেই নীলার, সব বিশ্বাস ভেঙ্গে দিলো আকাশ । কান্নায় ভেঙে পড়ে নীলা , কেনো সবাই ওর মন নিয়ে খেলা করে ।
নীলা আকাশের যোগ্য না এটা তো আকাশ ভালো করেই জানতো । তবুও কেনো এই বিয়েটা করেছে । শুধু মাত্র নীলার দেহের জন্য । আর নীলা এই মানুষটাকে ভালোবেসে ফেলেছে ছিঃ ছিঃ কিভাবে করতে পারলো নীলা এটা ।।।। নীলা এইসব ভেবে যাচ্ছে আর জোরে জোরে কান্না করছে । আজ ওর কান্না শুনবার কেউ নেই । ওর পাশে কেউ নেই যে ওকে আগলে রাখবে ।
নীলা এইসব ভাবতে ভাবতে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে থাকে ফ্লোরে ।
.
ভোরে মেয়ের কান্নার শব্দ পেয়ে উঠে পরে আকাশ । সেই কখন থেকে মেয়েটা কান্না করছে পাশে তাকিয়ে দেখে নীলা নেই । মেয়েকে কোলে নিয়ে আকাশ নীলাকে খুঁজতে বাইরে যাবে এমন সময় দেখলো নীলার শাড়িটা ফ্লোরে পারে আছে এলোমেলো হয়ে । কালকে রাতে কি হয়েছে কিছুই মনে পরছেনা আকাশের । খেয়াল করলো ওয়াশরুমে পানির শব্দ হচ্ছে বুঝতে পারলো নীলা ভেতরে আছে । বাইরে থেকে অনেক ডাকাডাকি করলো কিন্তু নীলা দরজা খুলছে না দেখে দরজা ভাঙতে আকাশ করিম চাচাকে ডাকতে যাবে এমন সময় নীলা দরজা খুলে বাইরে এলো । পানিতে চুপসে আছে নীলা । চুল বেয়ে পানি পড়ছে , চোখ দুটো লাল হয়ে ফুলে গেছে ।
- এই কি হয়েছে আপনার ???
-.......
- অসুস্থ আপনি ??
- .........
- কি হলো কিছু বলছেন না কেনো
- কি আর হবে । ভাগ্যে যা ছিলো তাই হয়েছে
- এই ভাবে কথা বলছেন কেনো । ।
- এর চেয়ে ভালো করে কথা আমি বলতে পারি না
- কি হয়েছে বলবেন তো
- কি হয়েছে তা বলে দিতে হবে ???
- না বললে বুঝবো কিভাবে
- বাহ্ খুব ভালো নাটক করতে পারেন তো আপনি ।
- আমি কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছিনা ।
- এখন তো কিছুই মনে থাকার কথা না । যেটা চেয়েছিলেন সেটা যখন পাননি তখন তো কিছুদিন সাধু সেজে থাকতে হবে আপনার সুযোগের জন্য ।
- আমি কি চেয়েছি আপনি জানেন ???.
- খুব ভালো করে জানি ।
- আচ্ছা বলুন তো কি চাই আমি ।
- আমাকে নিজের রক্ষিতা করে রাখতে চান ।
- নীলা ( ধমক দিয়ে )
- চিৎকার করে লাভ নেই । আপনার আসল রূপ কালকে রাতেই আমার সামনে চলে এসেছে ।
- দেখুন কালকে রাতে কি হয়েছে আমার কিছু মনে নেই । যদি কিছু করার চেষ্টা ও করি সেটা আমি ইচ্ছে করে করিনি । নেশার কারণে হয়তো হয়ে গেছে ।
- একদম নাটক করবেন না । আমি আপনার মতলবটা ভালো করে বুঝে গেছি । আমি আমার মেয়েকে নিয়ে এখনি চলে যাবো ।
- মানে
- মানে আর এক মিনিট ও আমি আপনার সাথে আপনার বাসায় থাকবো না ।
- আপনি চাইলেই তো যেতে পারবেন না ।
- কেনো ।
- কারণ আমি আপনাকে যেতে দিবো না ।
- এখনো নির্লজ্জের মতো এই কথা বলতে পারছেন ???
- হ্যাঁ পারছি । কালকে রাতে আমি যদি কিছু করে ও থাকি সেটা তো ভুল কিছু নয় । আমার আপনার উপর সম্পূর্ণ অধিকার আছে ।
- ওহ আমি অসুস্থ ছিলাম বলে সেই অধিকার দেখাতে আসছিলেন আপনি ।
- আমি সজ্ঞানে ছিলাম না বিশ্বাস করুন প্লিজ । জেনে বুঝে আমি কিছু করিনি
- আপনাকে আমি বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করি না । আর কাউকে কখনো করবো না ।
- আচ্ছা এইসব নিয়ে পরে কথা বলবো আগে এই ভেজা কাপড় গুলো বদলে নিন ।
নীলা কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ বসে আছে । আকাশ রোহিনীকে নিয়ে রুমের বাইরে চলে যায় । আকাশ বুঝতে পারছে তার ভুল হয়েছে । এমন ব্যবহার নীলা মেনে নিতে পারেনি । নীলাকে বুঝাতে হবে আকাশ এইসব ইচ্ছে করে করেনি । আকাশের খুব খারাপ লাগছে কেনো এমন হলো । নীলা যদি চলে যায় কিভাবে থাকবে আকাশ না না নীলাকে না দেখে থাকা সম্ভব না । নীলা তাড়াতাড়ি একটা শাড়ি পরে নিচে চলে আসলো ।
- রোহিনীকে আমার কাছে দিন
- আপনার চুল তো একদম ভিজে আছে , পানি পড়ছে । রোহিনী ভিজে যাবে ।
- রোহিনীকে নিয়ে এতো ভাবতে হবে না আপনাকে , আমি আছি ওর জন্য।
- আমাকেও ভাবতে হবে । কারণ আমি রোহিনীর আব্বু ।
- না
- কি না
- আপনি রোহিনীর আব্বু না । আমার রোহিনীর সাথে আপনার কোনো সম্পর্ক নেই ।
- আপনি বললেই তো হবে না ।
- আপনার সাথে এতো কথা বলতে চাই না আমি । আমার রোহিনীকে দিন
- কেনো আমার মেয়ে আমার কাছে থাকলে সমস্যা কোথায় ??
- অনেক সমস্যা । আমি আমার মেয়েকে নিয়ে চলে যাবো
- পাগল হয়ে গেছেন নাকি
- আগে ছিলাম পাগল, এখন সুস্থ আছি । এখন বুঝতে পারছি আপনি আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়েছেন ।
- এই কথা গুলো আপনি বলতে পারলেন ??
- হ্যাঁ হ্যাঁ পারলাম । কিচ্ছু ভালো লাগছেনা আমার । আমাকে যেতে দিন
- আপনাকে কোথাও যেতে দেবো না আমি
- আমি আপনার রক্ষিতা হতে আসিনি ( চিৎকার করে কান্না করছে নীলা )
- কেনো বার বার এক কথা বলছেন । আপনি আমার ওয়াইফ । আমি প্রমিজ করছি এমন ভুল আর কখনো হবে না ।
- ওহ্ । আমি ওয়াইফ তাই এমন ব্যবহার করেছেন আমার সাথে ।
- আমি নেশাগ্রস্ত ছিলাম । কি করেছি কিছু বুঝে করিনি
- আমি আর এক মূহুর্ত এখানে থাকবো না
- থাকতে হবে
- না । মানুষকে কখনো আটকে রাখা যায় না ।
- অবশ্যই আটকে রাখা যায় । আসুন আপনাকে দেখাচ্ছি ।
- সাহেব ছাড়ুন , কি করছেন ??
- ছাড়ার জন্য এই হাত ধরি নি আমি ।
- ছাড়ুন বলছি
আকাশ নীলার হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে যাচ্ছে ।
- দেখুন ভালো হচ্ছে না । আমি থাকবো না আপনার সাথে ।
- আপনাকে থাকতে হবে ।
- আপনাকে আমি চাই না
- আমি তো চাই ! এখানে বসে থাকুন বের হবার চেষ্টা করবেন না । । ( দরজা লাগিয়ে দিয়েছে )
- আমি যেতে চাই । দরজা খুলুন ।
রাগে আকাশের নাক মুখ লাল হয়ে আছে । রাগে গজগজ করতে করতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো আকাশ । আকাশ সবটা দিয়ে নীলাকে ভালোবাসে কিন্তু নীলা কেনো বুঝে না । কিভাবে বুঝাবে নীলাকে এটাই তো বুঝতে পারছে না আকাশ ।
.
আকাশ বিকেল বেলা বাসায় ফিরলো ।
- করিম চাচা
-........
- করিম চাচা ।
-হ্যা আসছি _ বলো বাবা
- নীলা খেয়েছে কিছু
- না দরজা খুলছে না । অনেক ডাকাডাকি করলাম ।
- আচ্ছা আমি দেখছি
করিম চাচার সাথে কথা বলে আকাশ উপরে চলে গেলো ।
- নীলা
.......
- দেখুন দরজা খুলুন । কেনো এমন করছেন আমার দোষটা কোথায় ???
- এখনো আপনি আপনার দোষ দেখতে পাচ্ছেন না ।
- আপনি দরজা খুলোন না । সামনা সামনি কথা বলি
- কিসের কথা
- আগে এটা খুলোন
- বলুন ( দরজা খুলে )
- লাঞ্চ করেননি কেনো ।
- আমি থাকবো না । খাবো না
- কিসের এতো রাগ ।
- আপনাকে সহ্য হচ্ছে না আমার । ।
- আমি আপনাকে বুঝাতে পারছি না কেনো ?
- বুঝাতে আসবেন না প্লিজ
- আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চান ??
- হ্যাঁ হ্যাঁ অনেক দূরে চলে যেতে চাই ।
- পারবেন দূরে থাকতে ??
- পারবো
- আমি যে আপনাদের ছেড়ে থাকতে পারবো না
- আপনি আমাকে যেতে না দিলে আমি কিন্তু কিছু একটা করে ফেলবো ।
- কি করবেন ?
- মরে যাবো
- এই একদম চুপ
- আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ। আপনার পায়ে পড়ি ।
নীলা কান্না করতে করতে আকাশের পায়ে মাথা রাখে । নীলার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না আকাশের কলিজায় লাগছে ।
- কি করছেন এসব । বসুন এখানে । কান্না করতে করতে চোখ মুখের কি অবস্থা করেছে ।
- আমি যেতে চাই
- ঠিক আছে , আপনার জন্য সারপ্রাইজ ছিলো । ভেবেছিলাম কালকে দিবো কিন্তু দেয়া হলো না । এই নিন আপনার মালেয়শিয়া যাবার টিকেট ।।
- মানে
- মানে আপনার পার্লারের কাজ শিখার সখ ছিলো তো তাই মালেয়শিয়াতে এক বছরের একটা কোর্স করতে হবে । আমি সব তৈরি করে রেখেছিলাম । ভেবেছিলাম এক বছর আমি আপনি আর রোহিনী এক সাথে মালেয়শিয়া থাকবো ‌।
- আপনার সাথে থাকতে চাই না আমি
- হুম বুঝতে পারলাম । তাই আপনি একা যান । এক বছরের কোর্স শেষ করে নিজের পায়ে দাঁড়ান । আমি আর আটকিয়ে রাখবো না । আপনি আপনার মতো থাকবেন । তখন রোহিনীকে নিয়ে কোনো চিন্তা থাকবে না আমার ।
- আমি একা যাবো কেনো । আমার রোহিনীকে নিয়ে যাবো
- সেখানে রোহিনীকে রাখার জন্য কেউ নেই । আপনি সারাদিন কাজে ব্যস্ত থাকবেন তো রোহিনী কার কাছে থাকবে ।
- আমি আমার মেয়েকে রেখে কোথাও যাবো না । ।
- তাহলে কি আমার কাছে থাকবেন ??
- কখনো না ।
- তাহলে আপনি যেতে পারেন । না যেতে চাইলে আমার সাথে থাকতে হবে । আপনি চিন্তা করবেন না , আমি রোহিনীকে নিজের মেয়ের মতো আগলে রাখবো । আপনি ভালো করেই জানেন আমি রোহিনীকে কতটা ভালবাসি ।
- জানি তো । কিন্তু আমার সাথে যা করেছেন তাকে কি বলবেন ??
- মেয়েকে মেয়ের মতো ভালোবাসি । বউকে বউয়ের মতো । এখানে ভুল কিছু দেখছি না আমি ।
- আপনার চোখ নেই তাই দেখছেন না ।
- আপনি কি যাবেন নাকি থাকবেন , আমার সাথে ???
- আমি ভাবতে চাই । আমাকে কিছু সময় দিন ।
- একটা কথা ভালো করে শুনে রাখুন । হয়তো আপনি মালেয়শিয়া যাবেন নয়তো আমার সাথে থাকবেন । এটা ছাড়া অন্য কিছু ভুলেও মাথায় আনবেন না ।
আকাশ যতই নীলাকে বুঝাতে চায় নীলা ততই রাগ উঠায় আকাশের । মেয়েটা কেনো এমন করছে । আকাশ নীলাকে সারাজীবনের জন্য হারাতে চায় না এক বছর দূরে থাকলে হয়তো বুঝবে আকাশের ভালোবাসা । আর নীলার স্বপ্ন ও পূরন হবে । এটাই চায় আকাশ কিন্তু আকাশ তো নীলার পাশে থেকে স্বপ্ন পূরণ করতে চেয়েছিলো । আজ কেনো দূরে দূরে থাকতে হচ্ছে ?
.
.
চলবে........
........
👉 গল্পঃ জীবন যুদ্ধ
👉 লেখিকাঃ বৃষ্টি জাহান নীলা
👉 পর্বঃ ২৬
.
.
নীলা ফ্লোরে বসে আছে। কি করবে কিছুই মাথায় আসছে না।যদি এই কোর্সটা শেষ করে একটা জব করতে পারে তাহলে সারাজীবন আর কারো উপর নির্ভরশীল হতে হবে না।কিন্তু মেয়েকে ছাড়া থাকা কিভাবে সম্ভব।সারাজীবন মেয়েকে সাথে নিয়ে বাঁচার জন্য যেভাবেই হোক এক বছর নীলাকে কষ্ট করতে হবে । তারপর আর কেউ ঠকাতে পারবে না।
.
হ্যাঁ আমি নিজের পায়ে দাড়াবো। নিজের পরিচয় নিজে তৈরী করবো। নিজের ভাগ্য নিজের হাতে লিখবো।আমি কারো উপর নির্ভরশীল হয়ে বাঁচতে চাই না।একটু কষ্ট করতে হবে একটু।আমি পারবো আমাকে পারতেই হবে।
নীলা এইসব কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েছে ।
এই দিকে আকাশের চোখে ঘুম নেই।কি সিদ্ধান্ত নিবে নীলা এটা ভেবে।আকাশ মনে মনে ভাবছে..নীলা কি সত্যি সত্যিই আকাশকে ছেড়ে চলে যাবে?নাকি আকাশকে সাথে নিয়ে যেতে চাইবে।যদি একা যেতে চায় কিভাবে থাকবে আকাশ। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে । কেনো এটা করতে গেলো আকাশ । কেনো ওকে দিয়ে এতো বড় একটা ভুল হয়ে গেলো । এতো দিনের ভালোবাসা এক রাতেই শেষ হয়ে গেলো । কিভাবে বুঝাবে আকাশ কতটা ভালোবাসে নীলাকে । আকাশ কান্না করছে সবার চোখের আড়ালে । এই চোখের পানি মুছে দিবার কেউ নেই । যখন নীলা দূরেই চলে যাবে তাহলে কেনো এতোটা কাছে এসেছে। কান্না করতে করতে রাত পার করলো আকাশ।একটু ও ঘুমোতে পারেনি ।
.
সকাল হয়ে গেছে আকাশ উঠে একটু বাইরে হাঁটাহাঁটি করছে।কিছুক্ষণ পর রান্না ঘরে গিয়ে নিজের হাতে এক কাপ কফি বানালো।কফি নিয়ে উপরে নীলার কাছে চলে গেছে ।
- আসবো ??
-........
- আমি কি ভেতরে আসতে পারি ??
- আসুন
- গুড মর্নিং ।
- হুম
- কেমন লাগছে
- ভালো
- কখন উঠেছেন ঘুম থেকে
- অনেক্ষন আগে
- আপনার কফি
- ধন্যবাদ
- একটা কথা জানার ছিলো ( আকাশ নিচে চেয়ে কথা বলছে )
- বলুন
- আপনি কি সত্যিই আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাইছেন ??বলুন আমাকে?
- হ্যাঁ
- আমি ভুল করেছি আপনি আমাকে মারুন বকা দিন রাগ করুন আমার সাথে । কিন্তু আমাকে ছেড়ে যাবেন না প্লিজ
- আমাকে যেতে হবে । আমি কোনো মায়ায় জড়াতে চাই না ।
- এটা কি শুধুই মায়া?না এটা একটা সম্পর্ক।আমার কাছে এটার মূল্য অনেক।আমি আপনাকে হারাতে চাই না
- আমাকে কোনদিন যেতে হবে ।
- আপনি পারবেন ??
- পারতে হবে আমাকে ।
- আমি কি এতোটাই খারাপ যে আমার সাথে থাকা যায় না ।
- হ্যাঁ থাকতে পারবো না আমি ।
- আমার সাথে থাকতে হবে না । প্রতিদিন দূর থেকে আপনাকে দেখতে চাই একবার।
- না আমি তো চলেই যাবো । নিজের পায়ে দাঁড়াতে নিজের উপর নির্ভরশীল হতে । তারপর আর আপনাকে লাগবে না আমার ।
- আমার তো আপনাকে লাগবে সারাজীবনের জন্য । আমাকে কি আপনার সাথে নেয়া যায় না ???
- না । আমি একা যেতে চাই আশা করি ততদিন আমার মেয়েকে নিজের মেয়ের মতো রাখবেন ।
- ততদিন মানে । রোহিনী আমার কাছেই থাকবে সারাজীবন । ওকে কেউ নিতে পারবে না
- পরেই দেখা যাবে । ।
- আমি আপনাকে বুঝাতে পারিনি আমার ফিলিংসটা কেমন আপনার প্রতি । কি করলে আপনি বুঝবেন
- আমি এইসব বুঝি না । আমাকে বুঝতে আসবেন না
- আপনি তো আমার জীবনের রংধনু হয়ে এসেছিলেন । সেই রং কালো আধারে কেনো ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।একবার এই হাতে হাত রেখে দেখুন । আমি সব আঁধার ঘুচিয়ে দেবো ।
- বললেন না তো, কোনদিন যেতে হবে আমাকে ।
- আমি কি আপনার এইটুকু ও আপন হতে পারিনি ??? তো বেশ আর বাঁধা দেবো না আপনাকে । আমি নাহয় বাকিটা জীবন মেয়ের হাসি মুখ দেখে কাটিয়ে দেবো ।
- হুম এটাই ভালো হবে আপনার জন্য ।
- কালকে রাতের ফ্লাইটে চলে যাবেন । আমি পৌঁছে দিয়ে আসবো
- আপনাকে যেতে হবেনা । ড্রাইভার কে বললেই দিয়ে আসবে ।
- আচ্ছা আপনার যা ইচ্ছে । আমার কিছু কাজ আছে আমি আসছি ।
চোখের কোনে পানি লুকিয়ে আকাশ বেরিয়ে যাচ্ছে । আকাশ আজও নীলাকে বুঝাতে ব্যর্থ হলো । এতো ভালোবাসা একটা ব্যবহারের কারণে শেষ হয়ে গেলো । আজ আর আকাশের কোনো মূল্য নেই নীলার কাছে । না থাকুক কোনো মূল্য ।নীলার সব স্বপ্ন পূরণ হোক নীলা খুশি থাকুক এটাই চায় আকাশ।জীবনের প্রথম ভালোবাসা নীলা ওকে তো খুশি রাখতেই হবে যেভাবেই হোক।দরকার পড়লে কিছুদিন থাকবে দূরে সমস্যা নেই । দূরে সরে গেলে হয়তো নীলা বুঝবে আকাশের ভালোবাসা।একদিন বুঝতেই হবে ওকে । আকাশ কিছুক্ষণ একা থাকতে চায় কিছুই ভালো লাগছে না ওর । তাই অফিসে গিয়ে একা একা বসে আছে ।
.
এইদিকে নীলা নিচে এসেছে মেয়েকে কোলে নিতে ।
- করিম চাচা রোহিনীকে আমার কাছে দিন ।
- এই নেও ।
- এই দুই দিন রোহিনী শুধু তার আম্মুর কাছে থাকবে । তাই না আম্মু ।
- নীলা মা কিছু মনে না করলে একটা কথা বলবো ??
- বলুন চাচা ।
- তোমাদের মাঝে কি কোনো সমস্যা হয়েছে ??
- আমাদের মানে
- মানে তোমার আর আকাশ বাবার ‌।
- কই কিছু হয়নি তো ।
- দেখো মা সংসারটা তোমাদের দুজনের । ঝগড়া হোক যাই হোক সংসারটা ভেঙ্গো না । আকাশ বাবা খুব ভালো ছেলে । তোমাকে কষ্ট দিবেনা কখনো । ছোট থেকেই মা বাবার ভালোবাসা পায়নি ছেলেটা তোমার মাঝে সে ভালোবাসা খুঁজতে চায় তাকে ছেড়ে যেয়ো না । কষ্ট দিয়ো না
- এইসব কে বলেছে আপনাকে ???
- কেউ বলেনি । ছোট থেকে আকাশকে বড় করেছি ওর চোখ দেখলেই বুঝতে পারি । আর কাল সারারাত ঘুমায় নি একটু পর পর কফি খেয়েছে । হয়তো কান্না করছে তাই চোখ মুখ ফুলে ছিলো ।
- আমি ওপরে যাচ্ছি চাচা
- শুনো মা ।
- হ্যাঁ বলুন ।
- যাই করো ভেবএ চিন্তে করো । তোমাদের জন্য যেনো রোহিনীর জীবন নষ্ট না হয়
- হবে না চাচা । আমি সব রোহিনীর জন্যই করছি
নীলা উপরে চলে গেছে । নীলা বুঝতে পারছেনা, যা করছে সব ঠিক করছে তো ।
.
সব ঠিকই করছে ‌।কিন্তু আকাশ যা বললো একটু আগে সব কি সত্যি নাকি উনি আমার জন্য করুনা করছে । আমি উনার যোগ্য না । আমি কখনো চাঁদ ধরতে চাই না ।আমি উনার জীবন থেকে চলে যাবো। উনার জীবন নষ্ট করার কোনো অধিকার আমার নেই। আমি বিবাহিতা আমার একটা বাচ্চা আছে আমি চাইলেও উনার সাথে নিজেকে জড়াতে পারবো না এটা উনি কেনো বুঝতে পারছে না।যেভাবেই হোক উনার কাছ থেকে দূরে চলে যেতে হবে যেনো উনি ভুলে যায় আমাকে।উনার জীবন মাত্র শুরু আমার আর আমার মেয়ের জন্য উনার সুন্দর জীবনটা শেষ হতে দিবো না আমি।এই কয়দিনে অনেকটা ভালোলাগা তৈরি হয়ে গিয়েছিলো।হয়তো এটাই ভালোবাসা।আমি নিজেকে উজাড় করে দিতে পারতাম যদি আমার একটা অতীত না থাকত। যদি বিয়েটা বৈধ হতো কিন্তু বিয়েটা তো অবৈধ।যদি রায়হান কখনো ফিরে আসে যদি অধিকার চায় নিজের,কি করবো আমি।তাতে এই সম্পর্কটা ভেঙ্গে দেয়াই ঠিক হবে।কাউকে লাগবে না আমার। আমি একাই আমার মেয়েকে আগলে রাখবো।নীলা এইসব ভাবছে বসে বসে।
আকাশ নীলাকে ভালোবাসে,তাই ছেড়ে দিতে চায় না, কারণ নীলা অসহায়।নীলাকে ছাড়া থাকতে পারবে না আকাশ।
নীলা আকাশকে ভালোবাসে তাই ছেড়ে দিতে চায় যেনো আকাশের জীবন নষ্ট না হয়,আকাশ যেনো সুন্দর একটা জীবন পায়।
 
বিকেল হয়ে গেছে।নীলা একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলো তাই উঠে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে।
- আসবো।
- হুম আসুন।
- কি ভেবেছেন?
- কি ব্যাপারে ভাববো?
- মালেয়শিয়া যাবার ব্যাপারটায়?
- এতে ভাবার কি আছে,আমি তো সকালেই বললাম যাবো আমি।
- এটাই কি শেষ কথা?
- হ্যাঁ
- আচ্ছা তাহলে চলুন
- কোথায়?
- কিছু শপিং করতে হবে তো
- আচ্ছা
- আমি নিচে অপেক্ষা করছি রোহিনীকে নিয়ে আপনি আসুন।
- হুম।
নিজেকে শক্ত করে রেখেছে নীলা।নীলার মন কি চায় আকাশকে বুঝতে দিলে হবে না।আকাশের সামনে মুখে হাসি রাখতে হবে,আকাশ যেনো বুঝতে পারে যে আকাশকে ছাড়া নীলা ভালো থাকবে।
নীলা তৈরি হয়ে নিচে চলে গেলো।আকাশ গাড়িতে বসে আছে।নীলা গিয়ে পাশে বসে পড়লো।
- আমি গেলে কি কোনো সমস্যা ছিলো?এখন থেকে আর কথা বলবেন না?
- প্রয়োজন পড়লে বলবো
- তাইতো । আমি তো আপনার প্রয়োজনের বাইরে,,আমার একটা কথা রাখবেন ??
- কি কথা
- আজকের রাতটা আপনাদের সাথে থাকতে দিবেন ??
- মানে ।
- মানে আমি আপনি আর রোহিনী এক সাথে থাকবো। এক পরিবারের মতো। হয়তো আর কখনো হবে না এক সাথে থাকা।আপনি নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আমাকে ছেড়ে চলে যাবেন।তখন তো আর থাকতে পারবো না, তাই শেষ একটা দিন এক সাথে থাকতে চেয়েছিলাম ।
আকাশ এবার চোখের পানি লুকিয়ে রাখতে পারলো না। শত চেষ্টার পরও বেরিয়ে আসলো । নীলা আকাশের চোখের পানি দেখে মুখ ঘুরিয়ে বাইরে তাকিয়ে নিজেও কেঁদে দিলো।যা করছে ঠিক করছে তো বার বার মনটা একই প্রশ্ন করছে ।
- কি হলো ??? রাখবেন আমার শেষ কথাটা?
- হুম।
এখানেই কি শেষ হয়ে যাবে আকাশ নীলার পথ চলা। ওদের ভালোবাসা পাশে থাকা সব কি মিথ্যে হয়ে যাবে।ভাগ্য ওদের কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে কেউ জানেনা । কষ্ট পাচ্ছে দুজনেই এটাই নিয়তি এটাকে মানতেই হবে ।
.
.
চলবে....
(তবে কি এটাই শেষ দেখা নীলা আর আকাশের? আকাশকে কি ছেড়ে চলে যাবে নীলা? নীলা কি আকাশের ভালোবাসা বুঝবেনা?? অপেক্ষা করুন আগামী পর্বের জন্য। 🍀Aman🍀)

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

===

You may also like

===