Arrogance | এরোগেন্স | Shamim Hasan Sarkar | Samonty Shoumi | Mukti Zakaria | Bangla Natok 2022
স্বামী মা*রা যাওয়ার একমাসের মাথায় উপায় না পেয়ে চার বছরের ছোট মেয়েটাকে নিয়ে যেদিন ছোট বোনের বাসায় উঠেছিলাম সেদিন না বুঝতে পারলেও আন্দাজ করতে পেরেছিলাম আমার এই আগমনে আমার ছোটবোন বা তার স্বামী দুজনের কেউই খুশি হয়নি।কিন্তু আমি যে নিরুপায় ছিলাম,না ছিলো বাবা-মা,না ছিলো কোন ভাই।দু-কুলে থাকার জন্য শুধু ছোট বোনটাই ছিলো।তাই বাধ্য হয়ে তার বাড়িতেই এসে ঠাঁই নিতে হলো।
বোনের বাড়িতে উঠেছি প্রায় সপ্তাহখানেক হবে।খেয়াল করে দেখলাম বোনটা আমাকে আর আগের মতো আপু আপু বলে ডাকেনা,আমার সাথে আগের মতো নরম স্বরে কথা বলেনা।বাড়ির কাজগুলো থেকেও কেমন যেন নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে সে।বুঝতে পারলাম সে আমার আপন বোন হলেও আমার এভাবে আগমনে সে মোটেও খুশি নয়।কিন্তু সব বুঝতে পারলেও কিছু বললাম না,চুপচাপ ঘরের কাজ করে মেয়েটাকে নিয়ে বাড়ির এককোণে পড়ে থাকতাম।কারণ আমার যে যাওয়ার আর কোন জায়গা নেই,এই ছোট বাচ্চা মেয়েটাকে নিয়ে কোথায় যাবো আমি।
তাই মুখ বুজে বোনের বাড়িতেই পড়ে রইলাম।
একদিন রাতে থালাবাসন ধুঁয়ে রুমে আসার সময় বোনের রুম থেকে কিছু কথা কানে এসে লাগলো।বুঝলাম তারা আমাকে নিয়েই কথা বলছে।শোনাটা ঠিক হবেনা তাও অবাধ্য মন তো মানেনা,তাই দরকার কাছে দাঁড়িয়ে শুনতে লাগলাম তাদের কথা।
" নীলা,তোমার বোন এই বাড়ি থেকে কবে যাবে বলো তো?কতদিন হয়ে গেলো এখনো এখানেই পড়ে আছে।তোমার বোনের জন্য এখন বাড়িতে থাকতেও অস্বস্তি হয়।আর তোমার বোন আমাদের বাড়িতে আছে যার কারণে মিতু তার স্বামীকে নিয়ে আমাদের বাড়িতেও আসতে পারছেনা।মিতুর শশুড়বাড়ির লোকেরা যদি এই কথাটা জানে তারা কি মনে করবে বুঝতে পারছো।"
" আ.....মিতুল আস্তে কথা বলো,আপু শুনতে পাবে।আর আমারো কি ভালো লাগছে বলো।কোথাও বের হলে,কিছু করলে বারবার তাকে কৈফিয়ত দিতে হয়।তার উপর আমার সব জিনিসও তাকে ব্যবহার করার জন্য দিতে হয়।"
" যত্তসব উটকো ঝামেলা।স্বামী ম*রেছে তাই বলে কি বোনের বাড়িতে এসে উঠবে?শশুর বাড়ির কারো গলায় গিয়ে ঝুলতে পারেনি?পাড়াপ্রতিবেশিরা কি বলবে।তুমি তোমার বোনকে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজের ব্যবস্থা করতে বলে দাও।"
" আরে এভাবে কি ধুম করে মুখের উপর চলে যেতে বলা যায় নাকি?কেউ জানলে তো আমাদেরই দোষ দেবে।না পারছি গিলতে আর না পারছি সইতে।"
" ধুর যত্তসব ঝামেলা আমার ঘাড়েই এসে ঝুলে।"
এসব আর কিছু শুনলে পেলাম না আমি,হয়তো দুজনে ঘুমিয়ে পড়েছে।খেয়াল করে দেখলাম চোখ থেকে পানি পড়ছে।চোখের পানিটা মুঁছে মুখে হাসি বজায় রেখে ঘরে ফিরে এলাম।দরজা ঠেলে ভিতরে এসে দেখি আমার চার বছরের পিয়ুটা বিছানায় বসে খেলছে।আমাকে দেখেই সে প্রশ্ন করলো,
" আম্মু আমরা কখন আমাদের বাড়িতে যাবো?আব্বু কখন আমাদের নিতে আসবে?খালামণির বাসায় আমার আর ভালো লাগছেনা।"
মেয়ের কথা শুনে প্রাণপণ চেষ্টা করছি নিজের চোখের জল আটকানোর।পিয়ুর কাছে এসে তাকে নিজের সাথে জরিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় তাকে মিথ্যা আশ্বাস দিতে লাগলাম।
" আসবে সোনা,আসবে।তোমার আব্বু কিছুদিন পরই চলে আসবে।এখন তুমি ঘুমাও মামুনি।"
পিয়ু চুপচাপ শুয়ে পড়লো।আমি ওর মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে থাকলাম তবে আমার চোখ থেকে এখনো পানি পড়ছে।
আমার স্বামী রাতুল,একমাস আগে রোড এক্সিডেন্টে সে মা*রা যায়।রাতুলের আপন বলতে তার মা,বড় ভাই আর একটা বোন ছিলো।আমার আর রাতুলে বিয়ের কয়েকমাস পর আমার শাশুড়ী মারা যান।রাতুল,পিয়ুকে নিয়ে বেশ চলছিলো আমার জীবন,মোটামুটি স্বচ্ছল ছিলাম আমরা।রাতুল যখন বেঁচে ছিলো আমার আত্মীয় স্বজনের অভাব ছিলোনা কিন্তু রাতুলের মৃত্যুর পর আর কেউ আমার পাশে এসে দাঁড়ালোনা,এমনকি তার ভাই আর বোনও না।বুঝলাম তারা শুধু নামেই আত্মীয় ছিলো।রাতুল যখন বেঁচে ছিলো তখন সপ্তাহে ২/৩ বার নীলা আমাকে ফোন করতো।তাদের বাসায় বেড়াতে আসলে আমাদের আপ্যায়নের কমতি ছিলোনা কিন্তু এখন.....।
গোসল করে বের হতেই শুনলাম নীলা কাউকে ধমকাচ্ছে।আমি তাড়াতাড়ি রুমে থেকে বেরিয়ে দেখলাম নীলা আমার ছোট পিয়ুটাকে ধমকাচ্ছে।
" এই তুই ফ্রিজ থেকে কাকে জিজ্ঞেস করে কেক নিয়েছিস?এটা নিলয় এর বাবার ওর জন্য এসেছিলো আর তুই কিনা সেটা নিয়ে খাওয়া শুরু করে দিয়েছিস।আজ ছেড়ে দিলাম কিন্তু আরেকদিন যদি না জিজ্ঞেস করে কোন খাবার খেয়েছিস তাহলে তোর পিঠের চামড়া তুলে ফেলবো আমি।যত্তসব ঝামেলা।"
নীলা পিয়ু হাত থেকে কেক এর পিসটা কেঁড়ে নিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিলো।আমি সামনে এগিয়ে গেলাম না,ঠাঁই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম।নীলা চাইলেই কিন্তু কেকটা আমার মেয়েটাকে দিতে পারতো কিন্তু সে তা না রেখে কেকটাকে ডাস্টবিনে ফেলে দিলো।
এখন প্রায় বিকেল সাড়ে তিনটে।আমি আমার সব জিনিসপত্র গুছিয়ে নিলাম।আর যাইহোক যে বাড়িতে আমার মেয়েটাকে সামান্য কেক খাওয়ার জন্য কথা শুনতে হয় সে বাড়ি আমি আর আশ্রয় নেবোনা।মানুষের বাড়িতে কাজ করে রোজগার করবো তাও আর অন্যের উপর নির্ভরশীল থাকবোনা।আচ্ছা টাকাই কি সব?টাকা ছাড়া কি কারো সাথে সম্পর্ক রাখা যায় না?পরক্ষণেই নিজের মনকে বললাম," হ্যাঁ দুনিয়াতে এখন টাকাই সব।টাকা ছাড়া যে মানুষের কোন মূল্য নেই রাতুলের মৃ*ত্যু সেটা আমাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।"
নীলা আর তার স্বামী চাইলেই আমাদের সাহায্য করতে পারতো,তাদের সে সামর্থ্য আছে কিন্তু তারা তা করলো না।নীলার স্বামীর কথা না হয় বাদ দিলাম,নীলা তো আমার নিজের বোন সে কি করে আমার এই দুঃসময়ে এরকমটা করতে পারলো?সে কিন্তু চাইলেই তার স্বামীকে বুঝিয়ে আমাদের তার বাসায় রাখতে পারতো কিন্তু সে উল্টো আমার বাচ্চাটার সাথে খারাপ ব্যবহার করছে।ঠিক আছে থাকো তোমরা তোমাদের টাকা নিয়ে।যে টাকার জন্য তোমরা আমাদের সাথে সম্পর্কটা শেষ করলে একদিন সেই টাকার জন্যই তোমরা আমাদের সাথে আত্মীয়তা করতে আসবে।এগুলো ভাবতে ভাবতেই ছোট পিয়ুকে নিয়ে জীবনযুদ্ধে নেমে পড়লাম মিলা।
_________________ সমাপ্ত____________________
টাকাই_কি_সব?
অনুগল্প
লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি