===

Din a Shadu Rate Chor | দিনে সাধু রাতে চোর | New Natok 2022 | Riad | Twink Carol | Atik | Mohin Khan

 
#গল্পঃ জীবন যুদ্ধ
#লেখিকাঃ বৃষ্টি জাহান নীলা
#পর্বঃ (১০+১১+১২)
.
(গত পর্বে ছিলো.....আকাশ আর নীলা দুইজন আকাশের মামাতো বোন আনুস্কার গায়ে হলুদে যায়।রাতটা ওখানেই পার হয়ে যায়। তারপর....)
 
সকাল হয়ে গেছে!বাইরে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ হচ্ছে । নীলা ঘুম থেকে উঠে বসলো ।পাশে ফিরেই অবাক হয়ে গেলো,একি আকাশ ফ্লোর থেকে খাটের এক কোণে এসে শুয়ে আছে ।মেয়ের পাশে জায়গা নেই তবুও একটু জায়গার মধ্যে লোকটা গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে ।নীলা উঠে মেয়েকে একটু সরিয়ে আকাশকে জায়গা করে দিলো ।নীলা বাইরে বেরিয়ে হাত মুখ ধুয়ে সবার সাথে কাজ করছে ।
 
মেয়েটা খুব মিশুক একদিনে সবার সাথে মিশে গেছে ।ওকে দেখে মনেই হচ্ছেনা সে এই বাড়ির মেহমান ।নীলা আপন ভেবে সব কাজ করছে ।সকাল আটটা বেজে গেছে। আকাশ ঘুম থেকে উঠে দেখে মেয়েটা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে ।মেয়েকে কোলে নিয়ে আকাশ বাইরে বের হয় ।বিয়ে বাড়ীতে মানুষের কোনো কমতি নেই। আকাশের নানু বাড়ি থেকে অনেক আত্বীয় স্বজন আসে।আকাশ কথা বলে সবার সাথে। সবাই জানতে চায় মেয়েটা কে?আকাশ বলে আমার মেয়ে । আবারও সবার প্রশ্ন বিয়ে কবে কিভাবে করলো কাউকে জানায়নি কেনো?আকাশের এক উত্তর
- আমি তো একা তাই কাউকে জানানোর প্রয়োজন মনে করিনি।আমার কেউ থাকলে অবশ্যই জানাতাম।
 
বলেই সবার সামনে থেকে উঠে চলে গেলো আকাশ।
নীলা আকাশের জন্য নাস্তা নিয়ে আসে।
- সাহেব খেয়ে নিন
- ......
- কি হলো খেয়ে নিন ।
- খাবো না
- কেনো ।
- জানিনা ।
- কি হয়েছে আমাকে বলুন ।
- অনেক কিছু ।
- সেই অনেক কিছুটা কি আমি জানতে পারি।
- না।
- আচ্ছা খাবার রেখে গেছি খেয়ে নিন।
- শুনোন
 
- হুম
- কিছু খেয়েছেন,নাকি এখনো না খেয়ে আছেন।
- আর কিছু কাজ বাকি আছে,সেগুলো শেষ করেই খেয়ে নিবো।
- এইখানে কাজ করতে আনিনি আপনাকে।আপনি কেনো কাজ করছেন।
নীলা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
- আমার সবার সাথে কাজ করতে ভালো লাগে।
- আল্লাহ উঠাইয়া নেও আমাকে , এখানে বসুন তো।
- কেনো?
 
- দরকার আছে বসুন.
নীলা বসে পড়লো ।আকাশ প্লেট নিয়ে নীলাকে খাইয়ে দিতে গেলো।
- একি করছেন সাহেব?
- আর একবার সাহেব বললে আপনার মুখ সেলাই করে দিবো ( রেগে গিয়ে ) চুপচাপ খেয়ে নিন একটা শব্দও মুখ থেকে বের করবেন না।
নীলা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে চুপচাপ খেয়ে নিলো ।সাথে আকাশ ও খেলো।
 
মেয়েকে কোলে নিয়ে বাইরে বসে আছে আকাশ। ভেতরে নীলা সবাইকে সাজানোর কাজে লেগে পড়েছে । আকাশের কাজিনরা জানতে চায় আকাশ নীলাকে কিভাবে বিয়ে করলো।একটা বাবুও আছে কিন্তু কেউ জানতে পারেনি এতোদিন।তারপর আকাশ বলতে শুরু করলো ।
 
- শোন সবাই , নীলা গ্ৰামের মেয়ে ,খুব বেশি লেখাপড়া করেনি।আমার আব্বুর কাকাতো বোন মানে আমার ফুপ্পির বাড়ি ও সেই গ্ৰামে।তো আমি কয়েকদিনের জন্য সেখানে ঘুরতে গিয়েছিলাম।সেখানেই নীলাকে আমি প্রথম দেখি।প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে গেলাম। তারপর শুরু করলাম তাকে পটানো। কিন্তু নীলা তো পটার মতো মেয়ে না ।তারপরও অনেক ফুল ,লাভলেটার ,কাঠ খড় পুড়িয়ে রাজি করলাম। মেয়ে তো পিচ্চি মাত্র সতের বছর আর আমার ত্রিশ । আমার তো বিয়ে করার বয়স গিয়ে আব্বু ডাক শুনবার বয়স হয়ে গেছে । কিন্তু নীলার তো বিয়ের বয়স এখনো হয়নি । 
 
তারপরেও লজ্জা স্বরমের মাথা খেয়ে ওর বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাই।কিন্তু ওর বাবা তো কিছুতেই মেয়েকে বিয়ে দিবেন না এতো দূর । কষ্ট লাগলো বুকে। সবাই অনেক বুঝানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু কিছুতেই বুঝাতে পারলাম না।এমন ভাবেই কেটে যায় অনেক গুলো দিন ।একটা সময় আমরা ডিসিশন নিলাম কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করবো। হয়তো ওর বাবা একদিন ঠিক মেনে নিবে।তারপর বিয়ে করলাম লুকিয়ে কিন্তু কাউকে বল্লাম না ।নীলা ওর বাসায় আর আমি আমার বাসায়। এভাবে অনেক দিন হয়ে গেলো তারপরেও তিনি মানছেন না ।আমি ভাবলাম নীলা প্রেগন্যান্ট হবার পর হয়তো মেনে নিবে । নীলা প্রেগন্যান্ট হবার প্রায় ৫ মাস পর সবাই জানতে পারে । জানার পর সবাই ওঠে পরে লাগে বেবি নষ্ট করতে ।। অনেক চেষ্টা করে , নীলা লড়াই করছিলো ।সে চেয়েছিলো ওর পরিবারের মতে আমাদের বিয়ে হোক আমি অনেক বার বুঝিয়েছি আমার কাছে চলে আসতে কিন্তু সে রাজি হয়নি। বাচ্চাটা যখন আট মাস তখন নীলাকে সবাই হাসপাতালে নিয়ে যায় বেবি নষ্ট করার জন্য । 
 
সেইদিন নীলা খুব কষ্ট পেয়েছে ওর পরিবারের থেকে । সে পরিবার ছেড়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে চলে আসে আমার কাছে । সে মা হয়ে কিভাবে পারতো বেবিটা নষ্ট করতে ।নীলার মা বাবা নীলার কোনো খোঁজখবর নেয় না ।বেবি হয়েছে একবার দেখতেও এলোনা বা ফোন করলো না। নীলার ও মন খুব একটা ভালো না। শরীর মন দুটোর উপরেই খুব চাপ যাচ্ছে । তো নীলাএখানে আসার পর কাউকে এখনো কিছু বলিনি ।পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক , নীলা একটু সুস্থ হোক সময় হলে বলে দিবো সব।
- বাহ্ তোদের লাভ স্টরি তো দারুন । ( কাজিন )
- তো আমাদের ট্রিট দিবি কবে বল ।। ( কাজিন )
- সময় হলে সব পাবি তোরা । এখন উঠিরে ( আকাশ )
- কেনো ভাবির আঁচলের নিচে যাবি নাকি ( কাজিন ) 
 
- হ্যাঁ তাই করতে যাচ্ছি । দেখি গিয়ে বউটা আমার করছে কি।বলেই হাসতে হাসতে উঠে চলে গেলো আকাশ ।বেশ ভালো গল্প শুনালো সবাইকে। সবাই তা বিশ্বাস করে নিলো । আকাশ নীলাকে ভালোবাসে এটা সত্যি কিন্তু নীলা যে আকাশকে ভালোবাসে না। আকাশ সবাইকে এই কথা গুলো বলেছে কারণ রোহিনী বড় হলে কেউ যেনো তাকে এটা বলতে না পারে আকাশ ওর সৎবাবা। সবাই যেনো এটাই জানে রোহিনী আকাশের মেয়ে।আকাশ রোহিনীকে নিজের পরিচয়ে বড় করতে চায় ।এখন শুধু নীলা রাজি হলেই হয়। দুপুর বেলা বরের বাড়ীর লোকেরা চলে আসে। নীলা ছোট ছোট কাজ করছে । আকাশ মেয়েকে কোলে নিয়ে রোগীর মতো বসে আছে আর মেয়ের মা'কে দেখছে । এমন সময় আকাশের পাশ দিয়ে নীলা যাচ্ছিলো ।
- কেউ মনে হয় ভুলেই গেছে একজন এখনো না খেয়ে আছে । ( আকাশ বললো )
- বাইরে তো সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া করছে । আপনি কেনো যাচ্ছেন না
- আমার ভালো লাগছেনা ।আমি এখানেই বসে খাবো
- আচ্ছা বসুন, আমি খাবার নিয়ে আসছি
- হুহ ( ভেঙ্গচি দিলো )
কিছুক্ষণ পর নীলা খাবার নিয়ে আকাশের কাছে চলে আসে ।
- এই যে খেয়ে নিন !
- খাইয়ে দিতে হবে । আমার হাত ব্যাথা করছে
- মানে ?
- আকাশ কিছু না বলে বড় বড় করে তাকালো নীলার দিকে ।
- আচ্ছা আচ্ছা খাইয়ে দিচ্ছি ।
( নীলা আকাশকে খাইয়ে দিচ্ছে )
- আপনি খেয়েছেন ?
- আপনাকে খাইয়ে আমি খেয়ে নিবো ।
- এখন খেয়ে নিন আমার সাথে ।
- হুম
- গুড গার্ল
- শুনোন
- হুম
- আমার কিছু কথা আছে আপনার সাথে ।
- বলুন
- এখন না বাসায় ফিরে
- বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যাবে মনে হয় ।
- আচ্ছা রাতেই বলবো ।
- তো বর দেখেছেন ?
- হ্যাঁ
- কেমন ?
- বেশ ভালো।দুজনকে খুব মানিয়েছে
- আর আমাদের ?
- আমাদের মানে ।
- কই কিছুনা তো ।
- আচ্ছা
- চলুন
- কোথায় ?
- কোথায় আবার বাইরে যাবো। বাইরে এতো মানুষ আমার কি ঘরে বসে থাকতে ভালো লাগে রোহিনীরও ভালো লাগছে না।
- আচ্ছা আচ্ছা চলুন ।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে বাইরে বের হলো দুজনে । আকাশের কোলেই রোহিনী ঘুমিয়ে পড়েছে । বরের সাথে তার অনেক বন্ধু আসে । নীলাকে তো কয়েকজন পছন্দও করে ফেলেছে। এটা দেখে তো আকাশ কিছুতেই নীলার পেছন থেকে যাচ্ছেনা । আঠার মতো লেগে আছে নীলার পেছনে। সবাইকে বলছে এটা আপনাদের ভাবি হয় হুম । আকাশের কান্ড দেখে সবাই হাসছে । নীলা তো অবাক হয়ে আকাশকে দেখছে । কি বলছে এসব লোকটা পাগল হয়ে গেছে নাকি। বিয়ে বাড়ীতে এতো লোক দেখে নীলা কিছু বলতে পারছে না ,অসহ্য লাগছে। বিকেলে বিয়ে পড়ানো হয় । সবাই আনন্দ করছে, নীলা চুপচাপ এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে।কি জানি কি হয়েছে নীলার ভালো লাগছেনা কিছু ।ওর মনে অনেক কথা লুকানো, কাউকে বলতে পারলে নিজেকে হালকা লাগতো ।কিন্তু এই কষ্টের কথা শুনার জন্য কেউ নেই ।আকাশ ব্যাপারটা খেয়াল করলো ।এগিয়ে এসে নীলাকে নিয়ে গেলো যেখানে সবাই মজা করছে ।সবাই জানে নীলা ওদের ভাবি তাই সবাই অনেক মজা করতে থাকে নীলার সাথে। একসময় হাঁসি ফুটে নীলার মুখে। অনেকক্ষণ আড্ডা দিয়ে বরেরা বউ নিয়ে চলে গেলো ।এইদিকে আকাশ আর নীলা ও সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লো বাড়ির উদ্দেশ্যে ।
চলবে......
 
#গল্পঃ জীবন যুদ্ধ
লেখিকাঃ বৃষ্টি জাহান নীলা
#পর্বঃ ১১
.
.
রাত নয়টার দিকে বাসায় পৌঁছায় ওরা। রাস্তায় একটা রেস্টুরেন্টে দুজন খেয়ে এসেছে ।নীলা অপেক্ষা করছে কখন কথা গুলো বলবে আকাশকে ।আকাশের কোল থেকে মেয়েকে নিয়ে রুমে চলে যায় নীলা ।ফ্রেস হয়ে বাবুকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয় ।এদিকে আকাশ ভাবছে কি বলবে নীলা ,এমন কিছু যেনো না বলে যেটা শুনে আকাশের মন ভেঙ্গে যায় । শক্ত হয়ে চেয়ারে বসে আছে আকাশ । আজকে যেভাবেই হোক নীলাকে আকাশের মনের কথা বলবে ।এমন সময় নীলা আকাশের দরজায় টোকা দিলো ।
- সাহেব আসবো
- আসুন 
 
- হুম
- বসুন
- না আমি এভাবেই ঠিক আছি ।
- যা বলবেন বসে ধিরে সুস্থে বলুন ।
- আমি কিছু জানতে চাই আপনার থেকে ।
- হুম বলুন কি জানতে চান ‌ ।
- আপনি সবার সাথে কি বলেছেন ?
- সবার সাথে মানে
- বিয়ে বাড়ীতে সবার সাথে আমার ব্যাপারে কি বলেছেন ?
- কই কিছুনা তো । আমি আপনার ব্যপারে কি বলবো.
- মিথ্যা বলবেন না । আপনি আমার সামনেও বার বার বলেছেন আমি আপনার বউ , ওদের ভাবি আর রোহিনী
আপনার মেয়ে 
 
- .........
- কিছু বলছেন না কেন । আমার কথার উত্তর দিন!
-............
- মানছি আমি অসহায় আপনি আমাকে আশ্রয় দিয়েছেন । তাই বলে আপনি আমাকে অপমান করতে পারেন না । আমি তো শুধু আপনার থেকে একটা কাজ চেয়েছিলাম । এখন দেখছি আমি একটা কার্টুন হয়ে গেছি । আমাকে নিয়ে যখন খুশি তখন মজা করতে পারেন । আমার অসহায়ত্ব নিয়ে সবার সাথে মজা করছেন আপনি ।
 
নীলা কান্না করছে । আকাশ চুপচাপ বসে শুনছে সব । কি বলবে সে , তার মুখে কোনো কথা আসছে না । নীলার কান্না আকাশের বুকে বিঁধছে কিন্তু কিছু বলতে পারছে না।
- দেখুন সাহেব , আমি গরিব হতে পারি তবে আপনি আমাকে যা ভাবছেন আমি তা নই । আমি সকালেই চলে যাবো এখান থেকে । 
 
কথাটা বলেই নীলা চলে যাচ্ছিলো । এমন সময় আকাশ নীলার হাত শক্ত করে চেপে ধরে । ।
- আমি আপনাকে যা ভাবি আপনি তা নন মানে আমি আপনাকে কি ভাবি ???
- আমার লাগছে ছাড়ুন । 
 
- উহু , আগে বলুন আমি কি ভাবি আপনাকে ?
- জানিনা ।
- আপনি সত্যিই জানেন বলুন আমাকে ( রাগে লাল হয়ে গেছে আকাশের চোখ )
- আর কি ভাববেন । বাজারের নষ্ট মেয়ে ছাড়া ।
- হোয়াট
- হ্যাঁ এটাই ভাবেন আপনি । এইসব দামী দামী কাপড় গড়না আপনি আমাকে কেনো কিনে দিবেন । আমি কি হই আপনার ???
আপনার এতো ভালো ব্যবহার এতো কিছু করার উদ্দেশ্য কি সব কিছু আজকে বুঝতে পেরেছি আমি ।
- চুপ আর একটা কথাও বলবেন না । আমি কিসের জন্য কি করেছি সেটা আমি জানলেও চলবে । আপনাকে জানতে বা বুঝতে হবে না ।
- এখন তো চুপ থাকতেই হবে আমার । আগে বলুন কেনো এতো কিছু করেছেন আমার জন্য আমি আপনার কে 
 
- কারণ আমি আপনাকে ......... ( কিছু একটা বলতে গিয়েও বলতে পারলো না আকাশ )
- আপনি আমাকে কি
- কিছুনা ।
- দেখুন আপনি আমার জন্য যা করেছেন তার জন্য আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো আপনার কাছে । কিন্তু এই বাড়িতে আর থাকতে পারবো না আমি । আমি কারো রক্ষিতা হতে আসিনি এখানে ।
- ঠাসস 
 
আকাশ নীলাকে খুব জোরে একটা থাপ্পড় দিলো । আকাশ খুব রেগে গেছে নীলার এই কথাটা শুনে । এইসব কথা আকাশ কখনো কল্পনাও করেনি ।
- আপনি কি বলছেন একবার ভেবে দেখেছেন ?
- আমি যা বলছি সব সত্য বলছি । । ( গালে হাত দিয়ে )
- না । আপনার ধারণা একদমই ভুল । আমি যা
করেছি যা বলেছি সব আপনার জন্য ।
- আমার জন্য মানে । 
 
- একটা অবিবাহিত পুরুষের সাথে একটা সতেরো আঠারো বছরের মেয়ে কিসের জন্য এসেছে এই বাড়িতে ? কাজের জন্য ?
একটা অবিবাহিত পুরুষের সাথে এমন মেয়ের কি কাজ থাকতে পারে । এমন মেয়ে অন্যখানে কাজ না করে আমার কাছে কাজের জন্য এসেছে এটা কেউ বিশ্বাস করবে ??সবাই ভাববে আপনাকে আমি ফুর্তি করার জন্য এনে রেখেছিলাম । আমরা সমাজে বাস করি এখানে কারো কষ্ট কেউ দেখে না,বুঝে না, সবাই শুধু মজা নিতে যানে । আপনার অসহায়ত্ব দেখতে আসবে না কেউ, বরং আমার কাছে আসাটাকে নিয়ে বাজে কিছু বলে রটিয়ে বেড়াবে । আমি চাইনি কেউ বাজে কিছু বলুক আপনাকে । বাজে কিছু ভাবোক । আপনাকে ঐ দিন একা ছেড়ে দিলে আজ কারো রক্ষিতাই হতে হতো । আমি এটা কখনোই চাইনি আর কখনো চাইবো না
( নীলা বুঝতে পারছে আকাশ কেনো কথা গুলো বলেছিলো ! আকাশ সবসময় নীলার ভালো চায় এটা নীলা জানে, কিন্তু এতোটা ভালো আগে বুঝতে পারেনি )
- কেউ কিছু বলার আগেই আমি চলে যাবো । । আমার জন্য কাউকে সমস্যায় পড়তে হোক এটা আমি চাই না
- কোথায় যাবেন ।
- জানিনা 
 
- কোথাও যেতে পারবেন না আপনি ।
- কেনো
- কারণ আমি যেতে দেবো না ।
- আপনি আমাকে কোন অধিকারে যেতে দিবেন না
- জানিনা কিন্তু আমি যেতে দেবো না । একবার মেয়েটার কথা ভাবুন , এই ছোট মেয়েটাকে নিয়ে কোথায় যাবেন । বাইরে আপনাকে ছিঁড়ে খাবার জন্য শকুনেরা উঠ পেতে থাকবে । একটা রাত বাইরে টিকতে পারবেন না আপনি । আর এই কারনেই আপনাকে আমার সাথে নিয়ে এসেছি আমি চাইনি আপনি কোনো বিপদে পড়ুন । 
 
- আমি কি করবো এখন । আল্লাহ কেনো আমাকে এতো অসহায় করে দিলো ( নীলা কান্না করছে )
- এখানে থাকবেন । আমার কাছে
- কতদিন রাখবেন আমাকে । এক সপ্তাহ/ এক মাস / এক বছর ??? কতদিন
- সারা জীবন
- সমাজের লোক কি বলবে । এই সমাজে আমার কোনো নাম পরিচয় নেই । কিন্তু আপনার তো আছে ! আমার কিছুই হবে না , আপনার অনেক অসম্মান হবে । আমি আপনাকে ছোট করতে পারবো না কখনো
- সমাজের লোক কিছু বলবে না । সবাই জানে আপনি আমার স্ত্রী । আর আপনি চাইলে আমি সারা দুনিয়াকেও জানিয়ে দিতে রাজি ।
- আমি এইসব কিছুই চাইনা । আমি শুধু চাই আমার মেয়ে ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন । ওর নিজের পরিচয় হোক 
 
- আপনার মেয়েকে আমার চেয়ে বেশি আদর কেউ করতে পারবে না । আমি ওকে নিজের মেয়ে মনে করি সবসময় ।
- সেটা আমি বুঝতে পারি ।
- সবাই জানবে রোহিনী আমার মেয়ে । আর আপনি আমার স্ত্রী
- আমার মেয়ে কি জানবে ??? আমি আপনার কি ?
নীলার একটা প্রশ্নে আকাশ চুপ করে আছে কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না । সব সম্পর্কেরই কিছু নাম থাকে । নীলাকে আকাশের কাছে রাখার জন্যেও এই সম্পর্কের একটা নাম দিতে হবে । আকাশ অনেকক্ষণ চুপ থেকে বললো ।
- বিয়ে করবেন আমাকে । । ( হাঁটু গেড়ে বসে বললো আকাশ )
- মানে
- আমি রোহিনীর আব্বু হতে চাই । আপনার স্বামী না হলেও হবে । নাহয় একবার বিয়ে বিয়ে খেলা খেললেন আমার সাথে ।
- এটা কখনোই সম্ভব না
- আপনি চাইলেই সম্ভব । আমি কখনো আপনার কাছ থেকে স্বামীর অধিকার চাইতে আসবো না প্রমিজ আমি শুধু রোহিনীকে চাই । ।
- আমি কখনো চাঁদ ধরার স্বপ্ন দেখি না সাহেব ।
- আমি তো দেখি । আমার শূন্য আকাশে রোহিনী চাঁদ হয়ে থাকবে । নিজের মেয়ের মতো আদর করবো তাকে । আমার আর আপনার সম্পর্ক স্বামী স্ত্রীর মতো না হলেও আমার আর রোহিনীর সম্পর্ক ঠিকই বাবা মেয়ের মতো হবে ।
- আমি এটা কখনোই চাই না । আমার একটা অতীত আছে । যেটা থেকে চাইলেও আমি মুক্ত হতে পারবো না
- আপনার অতীত নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই । আমি আপনাদের বর্তমান আর ভবিষ্যত হতে চাই ।
 
নীলা তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে । এই চোখে মায়া আছে । কিন্তু নীলার যে কোনো উপায় নেই ।
চুপ হয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে নীলা । আর মেঝেতে আকাশ হাঁটু গেড়ে বসে আছে ।
- দেখুন সেই ছোট্ট থেকে জীবনের সাথে লড়াই করছি ত্রিশ বছর ধরে ‌ । টাকা পয়সা বাড়ি ঘরের কোনো কমতি নেই আমার তবুও আমি একা কেউ নেই আমার । আপনার তো টাকা পয়সা মাথা গোঁজার আশ্রয়টা ও নেই কিন্তু কোলে একটা মেয়ে আছে আপনি একা নন । আমি রোহিনীর সব স্বপ্ন পূরণ করবো । আপনি আমার একাকীত্ব দূর করুন । আমার কাছে রং আছে তবে রঙ্গিন করার মানুষ নেই আপনার কাছে মানুষ আছে তবে রং নেই । আমি কি আমার রঙ্গে রোহিনীকে রঙ্গিন করতে পারি না ???
- একটা কথা বলবো ??
- বলুন । 
 
- আপনি এখনো বিয়ে করেননি কেনো ?
- সত্যি কথা বলতে আমার টাকা পয়সা দেখে অনেক মেয়েই আমাকে পটানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু আমি পটিনি । বিয়ে করার চেষ্টা করেছে তাও করিনি
- কেনো 
 
- কারণ আমি সবসময় চাইতাম আমার জীবন সঙ্গী এমন একজন হবে যার কাছে আমার টাকা পয়সার কোনো মূল্য নেই । যে জীবন মানে বুঝে , জীবনের সাথে লড়াই করতে যানে । লুতুপুতু টাইপের মেয়ে আমার পছন্দ না ।
- বুড়ো তো হয়েই গেছেন এখন আর কে পছন্দ করবে ?
- কিহ্ আমি বুড়া হয়ে গেছি
- নয়তো কি ?
- এখনো দশ বারোটা বউ রাখার ক্ষমতা আছে আমার মাঝে ।
- এর জন্যই তো একটাও কপালে নেই ( কথাটা বলেই নীলা হেসে দিলো )
- আল্লাহ হয়তো ভালো কিছু দিবার জন্যই এতো দিন একা রেখেছে আমাকে । আশা করিনি এমন কিছু পাবো
- ঘুমোতে হবে খুব ঘুম পাচ্ছে ।
- এখনি ঘুমোতে হবে ??? কিছুক্ষণ পর ঘুমালে হয় না
- আর কিছুক্ষণ জেগে থাকলে আপনার বিছানায়ই ঘুমিয়ে পড়বো ।
- সমস্যা নেই আমি আমার মেয়ের সাথে ঘুমাতে যাবো
আকাশের কথা শুনে নীলা মিটিমিটি হাসছে । হাসতে হাসতে শুভ রাত্রি বলে চলে গেলো নীলা । নিজের কাছে খুব ভালো লাগছে কথা গুলো বলে আকাশের শুধু একটা কথাই বলা হলো না আকাশ নীলাকে কতটা ভালোবাসে । সে কি কখনো নীলাকে এই কথাটা বলতে পারবে । মেয়ের আব্বু হতে পারলে মেয়ের মায়ের স্বামীও হতে পারবে। এইদিকে নীলা ও ভাবছে আকাশের ব্যপারে । আসলে আকাশকে নীলার খুব ভালোলাগে । ভালোবাসে কিনা জানেনা তবে আকাশের জন্য অনেক শ্রদ্ধা আছে নীলার মনে । নীলা শুধু মেয়েটাকে সুখি দেখতে চায় । এতে যদি নিজের রক্ত বিক্রি করতে হয় নীলা তাও করবে । মেয়ের জন্য সব করতে পারবে । কিন্তু অতীত নীলাকে ভালো ভাবে বাঁচতে দিবে না । নীলা অসুস্থ বেশি দিন বাঁচবে বলে মনে হয় না । পেটে ইনফেকশন হয়ে গেছে । কাউকে বলতে পারছে না । নীলা মরে গেলে অন্তত আকাশ বাচ্চাটাকে রাখবে । আকাশকে বিশ্বাস করে নীলা অনেক।
.
. চলবে.............
 
 #গল্পঃ জীবন যুদ্ধ
 লেখিকাঃ বৃষ্টি জাহান নীলা
#পর্বঃ ১২
 
সেই কখন সকাল হয়ে গেছে আজ নীলার উঠতে ইচ্ছে করছে না ।খুব ক্লান্ত লাগছে ।চোখ দিয়ে পানি পড়ছে , কেউ জানে না এই কষ্টের রহস্য ।আজ আকাশ সকাল সকাল উঠে গেছে । বাইরে হালকা কুয়াসা পড়ছে । বেলকনিতে দাড়িঁয়ে আছে আকাশ, হালকা বাতাস বইছে বাইরে । এমন সময় নীলা পাশে না থাকলে কি চলে । নীলার কথা মনে হতেই আকাশের মনে হলো আজ নীলা আকাশকে ডাকতে আসলো না তো । ওর কি কিছু হলো । কথাটা ভাবতেই ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো আকাশের । আকাশ তাড়াতারি নীলার রুমে গেলো , গিয়ে দেখলো নীলা এখনো শুয়ে আছে । আকাশকে দেখে নীলা উঠে বসলো । 
 
- একি আপনি এখনো শুয়ে আছেন । কিছু হয়নি তো
- না ভালো লাগছিলো না তাই শুয়ে ছিলাম ।
- ভালো লাগছে না কেনো ? কি হয়েছে দেখি ( নীলার গালে হাত রাখলো )
- কিছু হয়নি সাহেব ।
- কিছু হয়নি মানে । আপনার শরীর তো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে
- এমন জ্বর তো কতই আসে যায় । উপরেরটা সবাই দেখে ভেতরটা কেউ না
- কেউ দেখতে চাইলেও কি তাকে সেই অধিকারটা দিবেন আপনি ?
- মানে ?
- কিছুনা । আমি ডাক্তারকে ফোন করে দিচ্ছি ওনি চলে আসবেন আপনাকে দেখার জন্য ।
- ডাক্তার লাগবে না । এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে ।
কথাটা শুনেই আকাশ রেগে গেলো ।
- আপনার জন্য বার বার আমার মেয়েটা অসুস্থ হয় । এবার যদি এমন কিছু হয়না আপনাকে আমি খবর করে দিবো ।
নীলা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে ।
- আপনার মেয়ে ??
- হ্যা আমার মেয়ে !
- আচ্ছা আচ্ছা
- হুহ 
 
- আপনার মেয়ে তো এখনো কিছু খায়নি ।
- কেনো
- ওর আম্মু তো অসুস্থ এখন আপনার মেয়েকে আপনি খাইয়ে দিন ।
- কিহ্
- হু মেয়েকে নিয়ে যান আর ওর আম্মুর মতো ওকে খাইয়ে দিন ( বলেই নীলা হাসছে🙈 )
- সয়তান মেয়ে খালি উল্টা পাল্টা কথা বলে🙊
আকাশ মুখটা কালো করে মেয়েকে কোলে নিয়ে নিচে চলে গেলো । 
 
 
পাগল বলে নীলা আবার শুয়ে পড়েছে । এইদিকে আকাশ দুধ গরম করে নিজের হাতে মেয়েকে খাওয়াচ্ছে । সবাই তো আকাশকে রান্নাঘরে দেখে অবাক হয়ে দাড়িয়ে আছে ‌ । যে ছেলে নিজের হাতে কখনো এক গ্লাস পানি নিয়ে খায়নি,সে ছেলে রান্নাঘরে বাব্বাহ্ । কিছুক্ষন পর ডাক্তার এসে নীলাকে দেখে কিছু ঔষধ দিয়ে যায় সময় মতো খাওয়ার জন্য । নীলা উঠে কিছু খেয়ে ঔষধ খেয়ে নিলো । তারপর এক ঘুমে বিকেল চারটায় উঠলো । উঠেই আগে মেয়েকে খুজলো।করিম চাচা থেকে জানতে পারলো রোহিনী আকাশের কাছে আছে । তাই নিশ্চিন্তে নীলা গোসল করতে গেলো ।কিছুক্ষন পর নীলা গোসল শেষ করে বেরিয়ে আসে । এসে একটু অবাক হলো নীলা দেখলো বিছানায় একটা কালো রঙ্গের শাড়ি । সাথে এক পাতা কালো টিপ । নীলার বুঝতে আর বাকি রইলো না এটা আকাশের কাজ । 
 
লোকটা পারেও বটে , যখন যা ইচ্ছে হয় তাই করে । আজব লোক একটা । নীলা কিছু না বলে শাড়িটা পড়ে নিলো । অবশ্য শাড়ি পড়তে নীলার বেশ অসুবিধা হয় , পেটের সেলাইটার জন্য । ভেবেছিলো আকাশকে বলবে কথাটা কিন্তু লজ্জায় বলতে পারছে না ‌। শাড়িটা পরে নীলা বের হলো । সন্ধ্যা হয়ে গেছে প্রায় । আকাশকে খুজছে নীলা কিন্তু পাচ্ছে না , আকাশ ওর রুমেও নেই , এইদিকে নীলার খুব ক্ষিদে পেয়েছে । নীলা নিচে গিয়ে বসলো । এমন সময় আকাশ মেয়েকে কোলে নিয়ে নীলার সামনে এসে দাড়ালো ‌ । একি মেয়েকে তো চেনাই যাচ্ছে না । হাতে মোজা পায়ে মোজা মাথায় টুপি পায়জামা শীতের পোষাক । যেনো একটা ছোট্ট পুতুল ।
- এটা কে গো । চেনাই যাচ্ছে না
- কে আবার । দেখতে পাচ্ছেন না আমার মেয়ে এটা ।
- বাব্বাহ্ 
 
- হুম
মেয়েকে বুকে জড়িয়ে রেখেছে আকাশ ।
- মেয়ে তো আজ তার মায়ের কাছে একবারো আসলো না ‌ ।
- আজ আমাদের অনেক ভাব হয়েছে । আমার মেয়ে আমাকে অনেক কিছু বলেছে
- তা কি বলেছে শুনি
- বলেছে আমার মেয়ে আজকে বাইরে জেতে চায় । বাড়িতে তার ভালোলাগছে ।
- ওহ্ আচ্ছা ।
- তো এখানে বসে বসে কি করছেন আপনি ।
- ক্ষিদে পেয়েছে তাই বসে আছি ।
- জ্বরের কি অবস্থা
- এখন আর নেই
- তাহলে চলুন ।
- কোথায় ??
- বললাম যে আমার মেয়ে বাইরে যেতে চেয়েছে । তাই তো ওকে শীতের কাপড় পড়িয়েছি যেনো ঠান্ডা না লাগে ।
- আল্লাহ্ , চলুন তাহলে ।
- এক মিনিট
- আবার কি
আকাশ উপরে যাচ্ছে । নীলার রুমে গিয়ে টেবিল থেকে একটা টিপ এনে নীলার কপালে পড়িয়ে দিলো । ।
 
- একি করছেন সাহেব ।
- আমার মেয়ে বলছিলো তার আম্মুকে আজ খুব সুন্দর লাগছে কিন্তু কিছু একটা নেই নেই মনে হচ্ছে । তাই সেই নেই নেইটা পূরন করে দিলাম । ।।
- ওফ্ পাগল হয়ে গেলাম ।
- পাগল হতে হবে না । এখন চলুন তো
আকাশ আর নীলা গাড়িতে বসে আছে গাড়ি চলছে । নীলা চুপ করে আছে । ভাবছে লোকটা কত ভালো কিন্তু লোকটার কেউ নেই । আসলেই পৃথিবীতে ভালো মানুষের ভাগ্যটাই খারাপ । যাকে আকড়ে ধরে বাঁচতে চায় সেই ঠকায় । বেইমান সবাই বেইমান
- এই যে
আকাশের ডাকে নীলার ভাবনার ঘোর কাটলো ‌ ।
- হুম বলুন ।
- ভেজা চুলে খোপা করে রেখেছেন কেনো ।
- তো কি করবো
- খুলে দিন । 
 
- আচ্ছা
নীলা চুল গুলো খুলে রেখেছে । উহু তাও আকাশের ভালো লাগছে না । তাই গাড়ির গ্লাস গুলো খুলে দিয়েছে । এখন নীলার চুল গুলো সোজা আকাশের মুখে এসে বারি লাগছে
এই ব্যাপারটা খুব রোমান্টিক আর এই ব্যাপারটাই আকাশের খুব ভালো লাগছে । আকাশ দুচোখ বন্ধ করে নীলার চুলের ঘ্রাণে মাতাল হয়ে গেছে । সেই দিকে নীলার কোনো খেয়ালই নেই । সে রাতের রঙ্গিন শহর দেখায় ব্যাস্ত । দিনের চেয়ে রাতের শহরের সুন্দর্য বেশি । প্রায় এক ঘন্টার রাস্তা পার করে একটা রেস্টুরেন্টে পৌছায় ওরা । রেস্টুরেন্টটা অতোটা জাকজমক নয় । একদম নিরিবিলি একটা জায়গা । এতো আলো নেই , চার দিকে ছোট ছোট রঙ্গিন আলো জ্বলছে । পরিবেশটা বেশ ঠান্ডা ভালোই লাগছে নীলার । আর অবাক করা ব্যাপার হলো রেস্টুরেন্টে নীলা আর আকাশ ছাড়া কেউ নেই । একটা চেয়ারে আকাশ আর অন্য পাশে নীলা বসে আছে । আকাশের কোলে মেয়ে । পাঁচ মিনিট পর খাবার চলে আসে ওদের সামনে । আজ আকাশ নীলাকে খাবার বেরে দিচ্ছে । নীলা তো বড় বড় চোখ করে খাবারের দিকে চেয়ে আছে । কি সব খাবার রে বাবা । এই কাঠি দিয়ে কিভাবে খাবে বুঝতে পারছে না কিছু বলতেও পারছে না । আকাশ নীলার দিকে চেয়ে নীলার অবস্থাটা বুঝতে পারলো । তারপর নিজের প্লেটটা সরিয়ে নীলার পাশে চেয়ার টেনে বসলো । 
 
- কোনো সমস্যা হলো মনে হচ্ছে
নীলা হ্যা বা না কিছু বলতে পারছে না ।
এটা দেখে আকাশ এক হাতে নীলাকে খাইয়ে দিতে লাগলো নিজেও খাচ্ছে । নীলা কিছু না বলে চুপচাপ খেয়ে নিলো । এমনিতেও বেশ ক্ষিদে পেয়েছে তার । আকাশের খুব ভালোলাগছে এই মূহুর্তটা ।
- কালকে রাতে কিছু বলেছিলাম আপনাকে । মনে আছে ???
- হুম । ।
- তো কি করবেন এখন ।
- বাসায় গিয়ে ঘুম দিবো ।
- দূর এটা না তো
- তো কোনটা
- আমার ব্যাপারটায় কি করবেন ।
- ভাবিনী কিছু ।
- কোনদিন ভাব্বেন ।
- জানিনা আমি এইসব ভাবতে চাইছি না । ।
- আপনাকেতো ভাবতেই হবে ।
- জোর করে ??
- হ্যা ।
 
- তেলে জলে মিশ খায়না ।
- খায়তো তরকারিতে
- আপনার সাথে কথায় পারবো না ।
- শুধু কথায় কেনো কোনো কিছুতেই পারবেন না ।
- হুহ এখন চলুন বাসায় । নয়তো অনেক রাত হয়ে যাবে ।
- আমার তো যেতে ইচ্ছে করছে না ।
- আহা এতো রাতে রোহিনীকে নিয়ে বাইরে থাকা ঠিক হচ্ছে না ।
- আচ্ছা চলুন মেয়ের জন্য তো যেতেই হবে ।
আকাশের মন খারাপ হয়ে গেলো । তারপর
বের হয়ে গাড়িতে বসে ওরা । গাড়ি চলছে । দুজনের মাথায় দুইরকমের চিন্তা ভাবনা । আগামিকাল কি হবে কেউ জানেনা । হয়তো ভালো হয়তো বা খারাপ । কিন্তু জীবন থেমে থাকবে না সে চলবে তার আপন গতিতে ।
চলবে.....-----------------------.
 
(আকাশ নীলাকে পাবে তো।নাকি চিরদিনের মতো হারিয়ে ফেলবে?কি এমন অতীত আছে নীলার। যা বলা যাচ্ছেনা আকাশকে?পেটেই বা কি ইনফেকশন?জানতে হলে সম্পুর্ণ পড়তে হবে।আর হ্যা,নীলার আসল পরিচয়টা খুব শীগ্রই জানতে পারবেন।🍀Aman🍀)

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

===

You may also like

===