===

Chompa House | চম্পা হাউজ | Afran Nisho | Mehazabien | Vicky Zahed | Eid Natok 2022 | Channel i #ডেয়ার_সমাচার

"ভাইয়া আমি আমি প্রেগন্যান্ট।"
কথাটি বলেই হাউমাউ করে কেঁদে দিলো ফারজানা। আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিনা। মেয়েটি সবে ইন্টার ফাস্ট ইয়ারের ছাত্রী। তারপরে আবার অবিবাহিত এবং সবচেয়ে বড় কথা সে সর্বদা পর্দায় থাকে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও পড়ে। ক্লাস নাইন থেকে আমি ওকে পড়াই। কখনো আমি ওর মাঝে খারাপ কিছু দেখিনি। আমরা একই এলাকায় থাকি। কখনো ওর বিষয়ে খারাপ কোনো রিপোর্ট ও পাইনি। আর যতোটুকু জানি ওর কোনো বয়ফ্রেন্ড নামক পোষা প্রাণীও নেই। তাহলে এটা কিভাবে সম্ভব! জোর করে কেউ কিছু করেছে! কিন্তু কে-ই বা করবে! ওতো একা একা কোথাও বের ও হয় না। ওর আব্বু কলেজের প্রফেসর। মেয়েকে নিয়ে একসাথে কলেজে যান। আবার একসাথেই ফিরেন। এতো কড়া সিকিউরিটির মাঝে এমনটা তো হওয়ার কথা নয়। আমি আর ভাবতে পারছিনা। সবকিছু কেমন জানি এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। কারণ ফারজানা আমার ছোট বোনের মতোই। ওর সাথে এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে এটা যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছিনা।
 
এদিকে ফারজানা কেঁদেই যাচ্ছে। আমাকে এমন চিন্তিত দেখে হুট করে কান্না থামিয়ে অট্টহাসিতে মেতে উঠলো সে। আমি কিছুক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। তবে কি সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেললো? আমি কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই সে বললো,
- ভাইয়া এটা ডেয়ার ছিলো। হিহি...
- মানে?
- আসলে গতকাল রাতে আমার বান্ধবী আনাহিতা আমাকে ডেয়ার দিয়েছিলো যে, আপনাকে বলতে হবে যে আমি প্রেগন্যান্ট। তারপর আপনার রিয়াকশন দেখা না অব্দি সত্যিটা বলা যাবেনা। হিহি...
কথাটা শুনে প্রচন্ড বিরক্ত হলাম আমি। ছাত্রীর গায়ে হাত দেওয়াটা খারাপ দেখায় বিধায় চেয়ার ছেড়ে সোজা বাসা থেকে বেরিয়ে এলাম। গলির মাথার টং ঘরে গিয়ে বসলাম। রং চায়ের কাপে চুমুক দিতে যাবো, এমন সময়ে হন্তদন্ত হয়ে দৌঁড়ে এসে আমার পাশে বসলো আমার বন্ধু আকাশ। আমি ওর দিকে তাকাতেই কাঁদোকাঁদো স্বরে বললো,
- দোস্ত আমাকে বাঁচা। আমি শেষ।
- তুই শেষ মানে?
- কি হইছে তোর? 
 
- তুই তো জানিস ইলোরা কে আমি কতো ভালোবাসি। পাঁচ বছরের সম্পর্ক আমাদের। ওরে ছাড়া বাঁচুম না আমি।
- আরে কি হইছে সেটা তো বল।
- দোস্ত গতকাল রাতে ছোট ভাই আবির আমাকে ডেয়ার দিয়েছিলো যে, আবিরের সাথে ফেসবুকে ইন এ রিলোশনশীপ স্ট্যাটাস দিয়ে ক্যাপশনে লিখতে হবে, উই মেড ফর ইচ আদার।
- তারপর?
- আমি ডেয়ার নিয়ে এই পোস্ট দিয়েছি। কিন্তু ইলোরা আমাকে ভুল বুঝতেছে। ও ভাবতেছে আমি মনে হয় সত্যি সত্যিই ঐসব....
- ঐসব মানে কি?
- মানে হলো...ইয়ে ছেলে-ছেলে ইটিশ পিটিশ করেনা ঐ জিনিস।
- হুশ। সরে বস। তুই গে।
- দোস্ত বিশ্বাস কর আমি গে না। তুই এখন আমাকে হেল্প কর।
- কিভাবে হেল্প করবো?
- তুই ইলোরাকে কল দিয়ে ভালো ভালো কথা বল আমার সম্পর্কে। আর ওকে একটু বুঝিয়ে বল যে আমি ঐসব না।
- আচ্ছা নম্বর দে।
- উঠা ০১৭১৬১২৫৭...
পরপর দুইবার কল দেওয়ার পর ইলোরা কল রিসিভ করলো। মনে মনে বললাম, আকাশ আজ তোর ডেয়ার ডেয়ার খেলা ছুটাচ্ছি। ইলোরা কল রিসিভ করতেই লম্বা একটা সালাম দিলো। সালামের উত্তর নিয়ে পরিচয় দিলাম আমি,
 
- আমি আকাশের বন্ধু কাব্য।
- হ্যাঁ ভাইয়া চিনতে পেরেছি। জরুরী কিছু বলবেন?
- হুমম। আকাশের সাথে তো তোমার অনেক দিনের সম্পর্ক। তা আকাশের সম্পর্কে তোমার ধারণা কেমন?
- ভাইয়া ও একটা ফালতু। ও আমার সাথে চিট করেছে...
- আচ্ছা শোনো আকাশ কে দেখলাম একটা ছেলের সাথে কাজী অফিসে ঢুকলো। ওরা নাকি বিয়ে করেছে।
(পাশ থেকে আকাশ আমার কাছ থেকে ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।)
- ভাইয়া আমারও এইরকম কিছুই সন্দেহ হয়েছিল।
ওকে শুধু আমি একবার সামনে পায়, আমার সাথে চিট করার মজা বুঝিয়ে দিবো। নাহলে আমার নাম....
আমি আস্তে করে ফোন টা কেটে দিলাম। আকাশ আমাকে সমানে গালি দিচ্ছে আর বলছে, তুই এমন টা করতে পারলি... ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি ওর কথা এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দিচ্ছি। আর মনের আনন্দে চায়ের কাপে সুড়ুৎ করে চুমুক দিচ্ছি। এখন খুব ভালো লাগছে। টং ঘর থেকে বের হওয়ার সময় আকাশকে বললাম, বন্ধু আরো বেশি বেশি ডেয়ার খেলো। শুভকামনা রইলো।
তবে এখনো পুরোপুরি খুশি হতে পারিনি৷ ফারজানাকেও একটা শিক্ষা দিতে হবে। ফারজানার আব্বু গ্রামের বাড়িতে গিয়েছে জমিজমা সংক্রান্ত কাজে। 
 
মানে আগামীকাল ফারজানা কলেজে একা একাই যাবে। সোজা চলে গেলাম মাইক্রো স্ট্যান্ডে। পরিচিত লোক থাকায়,খুব সহজেই আগামীকালের জন্য একটা মাইক্রো ভাড়া পেয়ে গেলাম।পরদিন সকাল ৮ টার মধ্যে মাইক্রো নিয়ে ফারজানা দের বাসার গেইটে অপেক্ষা করতে থাকলাম। ফারজানা প্রতিদিন ঠিক সাড়ে ৮ টায় বাসা থেকে বের হয় কলেজের উদ্দেশ্যে। মাইক্রোর মধ্যে সম্পূর্ণ কালো জামা-কাপড় পড়ে আমি এবং আরো চার জন বন্ধুকে নিয়ে বসে আছি। মুখেও কালো মুখোশ পড়া। 
 
সাড়ে ৮ টা বাজতেই দেখলাম গেইট থেকে ফারজানা বের হয়েছে। সাথে সাথে মাইক্রো থেকে দু'জন নেমে গিয়ে চোখের পলকে ফারজানাকে মাইক্রোতে তুলে ফেললো। ফারজানা কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাইক্রো চলতে শুরু করেছে। ফারজানা চিল্লাতে শুরু করলো। পাশের ছিটে বসে থাকা বন্ধু রাফি খেলনা পিস্তল বের করে ফারজানার মাথায় ধরে বললো, আর একটা শব্দ করলে এখনেই মাথার ঘিলু উড়িয়ে দিবো। সে এবার ভয়ে গুটিসুটি মেরে গেছে। মুখ দিয়ে আর কোন শব্দ বের হচ্ছেনা তার। মাইক্রোতে বসে থাকা আমরা সবাই জোরে জোরে হাসতে লাগলাম। আমাদের হাসি শুনে আরো ভয় পেয়ে গেলো সে৷ ফারজানা মনে মনে বলতো লাগলো,
 
"আল্লাহ আমাকে বাঁচাও। গতকাল কাব্য ভাইয়া কে মজা করে বলেছিলাম আমি প্রেগন্যান্ট। কিন্তু আজ যা হতে চলেছে.... আল্লাহ তুমি আমাকে বাঁচাও। আমি বেঁচে থাকতে আর কোনো দিন এমন মজা করবো না কারো সাথে। আর কোনোদিনও ডেয়ার খেলবো না।''
এমন সময়ে মাইক্রো কড়া ব্রেক করে থেমে গেলো। ফারজানার হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে, দরজা খুলে ওকে মাইক্রো থেকে নামিয়ে দিলাম। মুখোশ পড়ে থাকায় আমাদের কাউকে-ই চিনতে পারেনি সে। মাইক্রো থেকে নেমে ফারজানা অবাক। সে দাঁড়িয়ে আছে তার কলেজ গেইটের সামনে। দ্রুত হাতে থাকা কাগজটি খুলে দেখলো তাতে বড় বড় করে লিখা,
"এটা ডেয়ার ছিলো।"
#ডেয়ার_সমাচার

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

===

You may also like

===