===

পরীমনি অভিনীত ঈদ নাটক - একটুখানি ভুল | New Natok - Aktukhani Vul | Pori Moni, Niloy | Eid Natok 2022

 
 
আমার প্রথম প্রেমিকার সাথে ব্রেকআপের একমাত্র কারণ ছিলো, ওরা অনেক গরীব।। গরীব বলে অবজ্ঞা করা ঠিক না, কিন্তু সমস্যা ছিলো রুবিদের বাসায় একটা মাত্র সোফা।। আসলে, একটা সোফা নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যাথা নেই, সোফা না থাকলেই বা কি!! কিন্তু, ওদের বাসায় একদিন আমিসহ তিন বন্ধু বেড়াতে গেলাম।। রুবি আমাকে, আমার তিন বন্ধু সহ সেই সোফায় বসার অফার করে।। এক সোফায় একসাথে চারজন কিভাবে বসবো আমার মাথায় ধরে না।। আমি রুবির দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলাম।। রুবি বললো- আরে, সোফাটা উল্টো করে চারজন একসাথে বসে পরো।। আমরা সবাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাই, তবুও বন্ধুরা মিলে ওদের সোফাটা উল্টাই।। এবার আমাদের সবার চোখ ছানাবড়া।। কারণ, সোফার চারটা পায়া বেশ চিকন।।
সেই থেকে রুবির সাথে ব্রেকাপ-
.........
আমার দ্বিতীয় প্রাক্তন ছিলো, ভয়াবহ হিসেবী মেয়ে।। এত হিসেবী মেয়ে নিয়ে আমার তেমন কোন আপত্তি ছিলো না।। কিন্তু, সে বলতো, শোভন আমাদের অনেকগুলো বাবু হবে।। আমি বলতাম- কি যে বলো!! কতগুলো হবে?? বর্ষা বলতো- এই ধরো, বিশ পঁচিশটার মত।। আমি মনে মনে ভাবতাম, এত হিসেবি মেয়ে এটা কি বলে, আমি বললাম- এত বাবু পালার খরচ জানো।। বর্ষা বলে- শুনো, বাচ্চাদের রাতে বলবো তোমরা যারা রাতে খেতে চাও না, তোমাদের সবাইকে বিশ টাকা করে দেয়া হবে।। বাচ্চাগুলো টাকার লোভে খেতে চাইবে না।। আমরা সবাইকে ২০ টাকা করে দিবো।। আমি বললাম- ধুর টাকা তো তাও অনেক লাগবে।। বর্ষা বলে- আগে পুরোটা শুনো, পরে বাচ্চাদের দুপুরে বলবো তোমরা যারা দুপুরে খেতে চাও বিশ টাকা করে জমা দাও।। ততক্ষণে ওদের বেশ ক্ষুধা লাগবে, তাই সব টাকা ফেরত দিবে।। তখন সবাইকে দুপুরে খাওয়াবো।। আমি তাজ্জব হয়ে বললাম- আর সকালে বাচ্চাগুলো খাবে না কিছু?? বর্ষা বলে- আরে না সকালে ডাকই দেবো না বাচ্চাদের, ওদের এত আদর করি সকালে একটু বেশিই ঘুমাক।।
হায় খোদা, এ কেমন হিসাবি মেয়ে।। অতঃপর ব্রেকাপ!!
..........
আমার তিন নাম্বার প্রাক্তন খুবই সুন্দরী ছিলো।। এত সুন্দরী যে দুধে আলতা গায়ের রঙ, আপনারা ভাবছেন আমার খুশি হবার কথা।। হ্যাঁ খুশিই ছিলাম, কিন্তু সে আমাকে তার গায়ে একটুও স্পর্শ করতে দিতো না।। নীলা আমাকে বলতো, তুমি আমাকে ছুঁলে, আমার গায়ের রঙ নষ্ট হয়ে যাবে- তুমি যে কালো।। আমি তবুও মানিয়ে নিছিলাম, বিয়ের পর তো আর এসব বলে ফায়দা হবে না- এই আশায়।।
কিন্তু, একদিন আমার সাথে হাঁটার সময় হঠাৎ নীলা পায়ের উঁচু হিল ভেঙে রাস্তায় ভূপাতিত হলো।। আমি হাত ধরে উঠাতে গেলাম, সে হাত না বাড়িয়ে উল্টা ধমক দিয়ে আমাকে বলে- খরবদার শোভন, আমাকে ধরবা না।।
সে ডানে বামে তাকিয়ে রাস্তায় হাঁটতে থাকা, সুদর্শন একটা ফর্সা ছেলেকে দেখিয়ে বলে- উনাকে একটু ডাকো না প্লিজ, আমার হাত ধরে টেনে তোলার জন্য।।
আর কি, যথারীতি ব্রেকাপ।।
..........
আমার চার নাম্বার প্রেমিকা একদিন রমনা পার্কে আমার সাথে ডেট করার অফার করলো।। আমি খুশি মনে পার্কে গিয়ে দেখি পার্কের বেঞ্চে সে অলরেডি অন্য একটা মধ্যবয়স্ক লোকের কাঁধে মাথা রেখে দিব্যি আরামে চোখ বুজে আছে।। দেখেই তো মাথায় রক্ত উঠে গেলো।। আমি ওদের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম, রুম্পার কোন ভাবান্তর হলো বলে মনে হলো না।। বরং মধ্যবয়স্ক লোকটা নড়েচড়ে উঠলো।। রুম্পা লোকটার নড়াচড়ায় কাঁধ থেকে মাথা উঠিয়ে বললো- এই শোভন, আজ এত ছটফট করছো কেন তুমি?
এদিকে, আমি কিছুই বুঝলাম না।। এই ব্যাটার নামও কি শোভন নাকি?
আমি ধমক দিয়ে বললাম- এই রুম্পা এইডা কে?
রুম্পা কপাল কুঁচকে বলে- কোনটা কে?
আমি বললাম- তোমার পাশে বসা লোকটা কে?
রুম্পা বলে- আমার পাশে বসা লোকটা কে মানে, তুমিই তো আমার পাশে বসা।।
আমি ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম, রুম্পা আজ চশমা পড়ে নাই।। চশমা ছাড়া রুম্পা কার্যত অন্ধের মত চলে।। রুম্পা বললো- আর বইলো না, রিক্সা থেকে পার্কের গেটে নামার সময় চোখ থেকে খুলে ভেঙে গেছে চশমা।। যাবার সময় ঠিক করা লাগবে, তুমি তো জানোই চশমা ছাড়া আমি কানা।।
লোকটা এত সব ঘটনার মধ্যেও চুপ করে ছিলো, এখন উঠে চলে যাচ্ছে।। আমি রুম্পাকে ফেলে লোকটার পিছন পিছন গিয়ে বললাম- ওই আপনি দাঁড়ান।।
 
লোকটা হালকা থেমে গিয়ে বললো- ভাতিজা, আমার কোন দোষ নাই।। আমি পার্কের ওই বেঞ্চে বসে ঘুমাচ্ছিলাম।। হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখি ওই মেয়ে আমার কাঁধে মাথা রেখে শোভন শোভন ডাকছে।। আমি আর আওয়াজ টাওয়াজ দেই নাই।। চুপ করে ছিলাম, এই বেশিক্ষণ আগের ঘটনা না।। আমি এবার মেজাজ দেখিয়ে বললাম- এই বুইড়া বয়সে আমার মত এক্স ভায়োলেন্ট বডি স্প্রে আপনাকে কে মাখতে কইছে মিয়া।। যান ভাগেন!!
লোকটা লজ্জা পেয়ে চলে গেলো, আমি উল্টা ঘুরে পার্কের বেঞ্চে ফেরত এসে দেখি রুম্পা অন্য একটা ছেলেকে নিয়ে বসে আছে।। তার গা থেকেও সেইম বডি স্প্রের গন্ধ।। আর কি, ব্রেকাপ ছাড়া উপায় আছে কি!!
.........
আমার পাঁচ নাম্বার প্রেমিকাকে নিয়ে আমি বেশ ভালোই ছিলাম।। মেয়েটার নাম ছিলো মিরা।। কিন্তু, সেই ভালো থাকা বেশি দিন স্থায়ী হলো না।। কারণ, মিরা আমার প্রচুর ক্ষতি করেছে।। এই যেমন সেদিন মিরার হাত থেকে পড়ে, আমার নতুন কেনা এন্ড্রয়েড ফোন ভেঙে খন্ড খন্ড হয়ে গেলো।। অথচ কেনার পর আমার হাত থেকে দুইবার ফোন পড়ে গেছে, কিন্তু স্ক্রিনটা পর্যন্ত ফাটে নাই।। আবার সেদিন আমরা ফটোশুট করার জন্যে আমার ডি.এস.এল.আর নিয়ে বের হলাম।। আমি মিরার একগাদা ছবি তুলে দিলাম, একবার হাত ফস্কে আমার কাছ থেকে ক্যামেরা পড়ে গেলো।। ভাগ্য ভালো তেমন কিছুই হয় নাই।। মিরার হাতে ক্যামেরা দিয়ে- ছবি তুলে দিতে বললাম আমার।। আচমকা ছবি তুলতে গিয়ে মিরার হাত স্লিপ করে ক্যামেরা আবার পড়ে যায় মাটিতে। ব্যাস, ক্যামেরা ভেঙে চৌচির।। আমার মাথায় হাত, কোন দু:খে এত লম্বা মেয়ের সাথে প্রেম করতে গেলাম।। একে তো আমার চেয়ে বেশ লম্বা, আবার তিন চার ইঞ্চি হিল পড়ে থাকে।। ধুর, এটাও বাদ।। আমার বাচ্চা কাচ্চা এর হাত থেকে পড়লে একবারে ফিনিস!!
.........
আমার ছয় নাম্বার প্রেমিকা ছিলো, অনেক বড়লোক।। এত বড়লোক যে বিএমডব্লিউ, মারসেটিজ গাড়ি ছাড়া চলাচলি করতো না।। শপিং করলে হয় বসুন্ধরা সিটি নয়তো যমুনা ফিউচার পার্ক অথবা দেশের বাইরে।। আমি তো মহা খুশি, এমনকি মেয়েটার নামটাও বড়লোকি নাম।। ফ্যান্সি-
একদিন ফ্যান্সিকে সকালে কল দিলাম, বাবু তুমি কই?
 
সে বলে- এই তো শোভন, বাবার বিএমডাব্লিউ গাড়িতে করে ভার্সিটি যাচ্ছি।। তুমি কই?
আমি বললাম- আমি ছয় নাম্বার বাসে, শুনো তুমি চিন্তা নিও না।। আমি তোমার ভাড়া দিয়ে দিছি।। এটা তোমার বাবার বিএমডাব্লিউ না লিমুজিন।। এত লোক গাড়িতে উঠাইছো কেন।। আর ড্রাইভারকে একটু জোরে যাইতে বলো, ব্যাটা খালি ইচ্ছা করে সিগনালে গাড়ি থামিয়ে দেয়!!
ফ্যান্সি লজ্জা পেয়ে ফোন কেটে দিলো।। এবার সে নিজেই ব্রেকাপ করলো।।
.........
আর সাত নাম্বার প্রেমিকা ছিলো পেট লাভার মানে পশু প্রেমী।। সে বাসায় এহেনু কোন জীব জন্তু নাই পালে না।। তার নাম ছিলো মিনা।। এইগুলা নিয়ে আমার কোন আপত্তি নাই, কারণ জীবে দয়া করে যে জন, সেজন সেবিছে ঈশ্বর।। সুতরাং, মিনার মন ভালো।। আর আমিও ভালো ছেলে, তাই জমবে ভালো।।
কিন্তু, বিপত্তি হলো একদিন দুইজন হেঁটে হেঁটে পরিবাগের রাস্তা দিয়ে মগবাজারের দিকে যাচ্ছিলাম।। হঠাৎ একটা কুকুর আমার পায়ের কাছে এসে গন্ধ শুঁকে শুঁকে যাচ্ছে।। আমি হালকা লাথি দিয়ে কুকুরটাকে সরিয়ে দিতে চাইলাম।। আর যাবি কোথায়, মিনা সেই রাগ দেখালো।। আমাকে বলে, এখনি কুকুরটাকে সরি বলো।। যাও ওর কাছে হাতজোড় করো, ওরা সব বুঝে, যাও বলছি।। অগত্যা আমি মেনে নিলাম।। কুকুরটা অদূরে দাঁড়িয়ে ঘেউ ঘেউ করছে, আমি আস্তে আস্তে গিয়ে মিনাকে দেখিয়ে বললাম- সরি কুকুর ভাই।। মিনা ধমক দিয়ে আমাকে বলে- এটা লেডিস ডগ, ভাই বলো কেন ইডিয়ট।। আমি বিষম খেলাম একটা, খানিক ভেবে বললাম- সরি কুকুর বোন, মাফ করে দিও।। কুকুর বোন আমাকে মাফ করলো না, উল্টা ক্ষেপে গিয়ে একটা কামড় বসিয়ে দিলো।। আমি গগণ বিদারী চিৎকার দিলাম, মিনা আমাকে ধমক দিয়ে বলে- আস্তে চিল্লাও, তোমার কুকুর বোন ভয় পাবে তো!!
ব্যাস, বুঝে নেন- পরে কি সিদ্ধান্ত নিলাম।।
যাই হোক, সুস্থ্য হয়ে আট নাম্বারের খোঁজে নামবো- কথা দিচ্ছি এই শেষ।।
..........
এই ছিলো আমার খালাতো ভাই কেরামতের প্রেমের কেরামতি।। উনার ব্যক্তিগত ডায়রি থেকে তুলে দিলাম।।
ও আপনারা আমার ব্যাপারে জানতে চাইছেন, ধুর আমি তো ভালো ছেলে- এভার সিঙ্গেল।। প্রেম নামক কিছু আসি আসি করেও আসে নাই জীবনে!!
..........

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

===

You may also like

===